দলীয় কর্মী নয় সরকারি কর্মচারী হিসেবে কাজ করার নির্দেশ

জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বৈঠক

স্টাফ রিপোর্টার: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের মাঠে দলীয় কর্মী হিসেবে নয়, সরকারি কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এবার নির্বাচন কমিশন শক্ত অবস্থানে থাকবে বলেও সতর্ক করেন তিনি। গতকাল ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সকল ডিসি-এসপিদের বৈঠকে ডেকে এমন বার্তা দেন সিইসি। বৈঠক শেষে সিইসি বলেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। সেই সঙ্গে তাদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছি-দলনিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। আমরা আশা করি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। কর্মকর্তাদের দেয়া নির্দেশনার কথা তুলে ধরে হাবিবুল আউয়াল বলেন, আপনারা আচরণে এমন কিছু করবেন না, যাতে সাধারণ মানুষ মনে করতে পারে আপনারা পক্ষপাতদুষ্ট, আপনারা দলনিরপেক্ষ নন। আপনাদের অবশ্যই দলনিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। আপনাদের গণকর্মচারী হিসেবে সরকার ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে পার্থক্য? বুঝতে হবে। কর্মে কখনো নিজেদের দলীয় কর্মী ভাববেন না বা মনে করবেন না।
আপনাদের আচরণে এমন কিছু যেন প্রতিফলিত না হয় যে জনগণ মনে করে আপনারা কোনো দলের পক্ষ হয়ে কাজ করছেন। সিইসি বলেন, বৈঠকে ডিসি-এসপিরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিষয়ে প্রচুর ভোটার এডুকেশন দরকার। অনেকে প্রযুক্তি ভয় পান। এ কারণে অনেকে ইভিএম নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন। বেশিসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের স্বার্থে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা কমিয়ে বুথ (ভোটকক্ষ) বাড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব এসেছে। ইসি এটি পর্যালোচনা করে দেখবে। সিইসি বলেন, সংসদ নির্বাচন নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থানের কারণে বিভাজন রয়েছে। ইসি আশা করে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাদের সদিচ্ছা, প্রজ্ঞা দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন। রাজনৈতিক বিষয়ে ইসি অনুপ্রবেশ করতে পারে না। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনীতিকদের সমাধান করতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চেষ্টা করে। সংসদীয় ব্যবস্থা এমন যে সরকার ও দল আলাদা করা অনেক সময় কষ্টকর। অনেক সময় অলক্ষে প্রভাব চলে আসতে পারে।
তবে নির্বাচন কমিশন এবার শক্ত অবস্থানে থাকবে। দলীয় কর্মী হিসেবে নয়, সরকারি কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইসি সেটা পর্যবেক্ষণ করবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচনের সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এর অধীন বাহিনীগুলো আছে। সেনাবাহিনীরও প্রয়োজন হতে পারে। নির্বাচনের সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা আছে, তারা ইসি’র অধীন থাকবে। ইসি’র যে কোনো নির্দেশনা মানতে তারা বাধ্য থাকবে। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান তার লিখিত বক্তব্যে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের প্রত্যাশা সকলে যেন তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব শতভাগ নিরপেক্ষ হয়ে পালন করেন। কখনো দলীয় মনোভাব পোষণ করা যাবে না বা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কখনো অতি উৎসাহী হয়ে এমন কোনো আচরণ করবেন না যাতে আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যদি পূর্ব থেকেই ফৌজদারি বা ক্রিমিনাল মামলা থাকে সেটি ভিন্নভাবে আদালতে স্বাভাবিক গতিতে চলবে। কিন্তু অযথা নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলার অভিযোগ পাওয়া যায়।
এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে স্বচ্ছ মনোভাব দেখাতে হবে। মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান উপ-নির্বাচন ও জেলা পরিষদের ভোটকে সামনে রেখে আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসি’র নির্দেশনা উপেক্ষিত হওয়ায় ডিসি ও এসপিদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, সভায় কর্মকর্তারা নির্বাচনে জ্বালানি খরচ, আচরণবিধি প্রতিপালনে সম্পৃক্তদের ভাতা বাড়ানোর দাবি তোলেন। বিষয়টি তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আচরণবিধি ভঙ্গ হচ্ছে ব্যাপক অভিযোগ এলেও কোনো ব্যবস্থা তো দেখা যাচ্ছে না, এ নিয়ে কথা না বলে উল্টো খরচ-ভাতা বাড়ানোর কথা আসছে। তখন কর্মকর্তাদের অনেকে হৈ চৈ করে প্রতিবাদ জানান। তখন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর বলেন, তার বক্তব্য কর্মকর্তারা শুনতে চান কি না? তাতে কয়েকজন নেতিবাচক সাড়া দিলে বক্তব্য না বাড়িয়ে ডায়াস ছেড়ে মঞ্চের নির্ধারিত আসনে চলে যান তিনি। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ের সময় সিইসি’র সঙ্গে অন্য তিন নির্বাচন কমিশনার এলেও উপস্থিত ছিলেন না আনিছুর রহমান। বৈঠকে শেষে ইসি’র মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি আতিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের সময় ইসি’র অধীনে পুলিশ প্রশাসন কাজ করে থাকে। পুলিশ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার আলোকে দায়িত্ব পালন করে।
কারও বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, জেলা পরিষদ ও সংসদ নির্বাচনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে যে নির্বাচনগুলো হয় তা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের বিষয়ে আলাপ হয়েছে। ডিসি-এসপিরা পরামর্শ দিয়েছেন। তারা তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তিনি জানান, গত নির্বাচনে ৪০ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্র ছিল, আগামী নির্বাচনে এ সংখ্যা বেড়ে ৪৩ হাজারের উপরে হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের যে সংখ্যা তাতে পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা যায় না। এজন্য আমরা চাচ্ছি ভোট ভেন্যুর সংখ্যা কমিয়ে বুথ বাড়িয়ে দেয়ার জন্য। এখন যেহেতু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে, কাজেই ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে যৌক্তিক সংখ্যক করা হয়ে আইনশৃখলা বাহিনীর পক্ষে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা সম্ভবপর হবে। কোনো রকমের পক্ষপাতমূলক আচরণ যেন না হয় সে বিষয়ে ‘এনশিউর’ করা হবে বলেও জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়রানিমূলক মামলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে হয়রানিমূলক মামলার সুযোগ নেই। আখতার হোসেন আরও বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ প্রশাসনে রদবদল হয় না, এটি ‘রুটিন ওয়ার্ক’। কিছুদিন আগে পদোন্নতির কারণে আমরা ৪০টি জেলায় নতুন এসপি নিয়োগ দিয়েছি। ওই এসপিদের আমরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে বলেছি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More