নারায়নগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণে মৃত্যু বেড়ে ২৮ : আইসিইউতে আটজনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন

স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণে দগ্ধদের মধ্যে চিকিৎসাধীন আটজনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের আইসিইউতে তাদের চিকিৎসা চলছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বায়তুস সালাত জামে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি হান্নান সাউদ মারা গেছেন। সব মিলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৮ জনে। ইন্সটিটিউটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল জানান, আইসিইউয়ে ভর্তি অন্যদের অবস্থাও সংকটাপন্ন। তাদের সবার শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় ৩৭ জনকে বার্ন ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়েছিলো। একজনের অবস্থা ভালো হওয়ায় তাকে সোমবার ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকি আটজন আইসিইউতে আছেন। এদিকে বিস্ফোরণে নিহত ও আহতদের স্বজনরা স্থায়ী কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া মসজিদের সিঁড়ির নিচে গ্যাসের পাইপলাইনের সন্ধান পাওয়া গেছে।

আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরা হলেন, রিফাত (১৮), আব্দুস সাত্তার (৪০), নজরুল ইসলাম (৫০), মোহাম্মদ কেনান (২৪), আব্দুল আজিজ (৪০), আমজাদ (৩৭), ফরিদ (৫৫), শেখ ফরিদ (২১)। আহতরা বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা হলেও শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জে থাকতেন। তাদের প্রায় সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিমতলা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে গ্যাস বিস্ফোরণে দগ্ধ ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে ২৮ জনই মারা গেছেন। বায়তুস সালাত জামে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি হান্নান সাউদ শনিবার ছেলেকে বলেছিলেন, ‘আমি বাঁচবো না, তোমার মাকে দেখো রেখ। তুমিও সাবধানে থেকো।’ তার কথাই ঠিক হলো- মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি মারা গেছেন। শরীরের ৯৬ শতাংশ দগ্ধ হান্নান আইসিইউতে ছিলেন। তার একমাত্র ছেলে শাহজালাল বাবার সঙ্গেই থাকতেন। বাবাকে পানি ও জুস পান করানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। বাবার চিকিৎসার আকুতি জানিয়ে শাহজালাল বলেছিলেন, ‘বাবা বেঁচে না থাকলে আমরা কি করে বাঁচবো। বাবাকে আমেরিকা-সিঙ্গাপুর নিয়ে চিকিৎসা করান। যত টাকা লাগে দেবো, শুধু বাবাকে চাই।’ কিন্তু শাহজালালকে ছেড়ে চলে গেলেন তার প্রিয় বাবা হান্নান।

আইসিইউর ১৮ নম্বর বেডে ৭০ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে পড়ে আছেন আব্দুল সাত্তার। পাশে বসে কাঁদছিলেন অসহায় স্ত্রী রুবি আক্তার। মসজিদের পাশেই বাসা তাদের। স্বামী গার্মেন্টে কাজ করেন। প্রায় প্রতিদিনই মাগরিব-এশার নামাজ মসজিদটিতে আদায় করতেন। মসজিদে আসা মুসুল্লিদের জামা-কাপড়ই বেশি ইস্ত্রি করতেন আব্দুল আজিজ। আইসিইউর ১৩ নম্বর বেডে আজিজও নিঃশব্দে শুয়ে আছেন। কৃত্রিম শ্বাস দেয়া হচ্ছে তাকে। আজিজের বড় ভাই মজিবুর রহমান জানান, তাদের বাড়ি ফরিদপুর। করোনার সময়ে কাজ ছিলো না, প্রায় না খেয়ে থাকতেন তারা।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম জানান, দগ্ধ হলে শ্বাসনালী পোড়াসহ মস্তিষ্কে মারাত্মক ক্ষতি হয়। ফলে দগ্ধ রোগীদের বেশির ভাগেরই সাড়া মেলে না। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আইসিইউতে রাখা সবাই সঙ্কটাপন্ন। ইন্সটিটিউটের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, চিকিৎসাধীনদের অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন। সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার পরও আমরা হেরে যাচ্ছি। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন দগ্ধরা।

মঙ্গলবার রোগীদের দেখে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, দগ্ধদের প্রায় সবাই খুব দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। অনেকেই সাধারণ শ্রমিক। আমরা তাদের পরিবারকে সোমবার ৩০ কেজি চালসহ খাদ্যসামগ্রী দিয়েছি। প্রতিটি পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে যোগযোগ করা হচ্ছে। দগ্ধদের যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। মৃতদের পরিবারের সদস্যদের গার্মেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More