নির্বাচন সামনে রেখে অভিজ্ঞদেরই বিবেচনা করা হয়েছে-ওবায়দুল কাদের

পুরোনোদের রেখেই কেন্দ্রীয় কমিটি : ভোটের আগে ঝুঁকি নিতে চায় না আওয়ামী লীগ

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টির কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না আওয়ামী লীগ। চায় না নতুনদের নিয়ে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনের তুমুল যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে। আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় থাকাই দলটির প্রধান লক্ষ্য। তাই বড় কোনো পরিবর্তন না এনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সব পদে পুরোনোদের রাখা হয়েছে। এর আগে ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকে দলটির বিদ্রোহী নেতাদের ক্ষমা করে দেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র স্বীকার করেছে, ভোটের ওপর চোখ রেখে গঠন করা হয়েছে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। যেখানে একজন নতুন নেতারও জায়গা হয়নি। রয়েছেন অভিজ্ঞরাই। শনিবার ঘোষিত শাসক দলের কমিটি দেখে পদপ্রত্যাশীরা হতাশ হলেও এ নিয়ে আওয়ামী লীগ বড় কোনো সংকটে পড়বে না বলেই মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নতুন কমিটি সম্পর্কে গতকাল রোববার সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে অভিজ্ঞদেরই বিবেচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিকভাবেই নেতৃত্ব নির্বাচন হয়েছে। বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলন, জাতীয় নির্বাচনসহ সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে যে আট তৃণমূল নেতা বক্তৃতার সুযোগ পান, তাদের প্রায় প্রত্যেকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। সঠিক এবং যোগ্য দলীয় প্রার্থী দিয়ে কীভাবে নির্বাচনে জয়ী হওয়া যাবে, এ ব্যাপারে মতামত দেন এসব নেতা। পাশাপাশি আওয়ামী লীগসহ সব সহযোগী সংগঠনকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন তারা। সংগঠনের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে পারলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন দলটির তৃণমূল নেতারা। ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক কোরাইশী গত নির্বাচনের আগে এ জেলার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী যেসব ওয়াদা করেছিলেন, এর সব আগামী নির্বাচনের আগে পূরণ করার আহ্বান জানান। নির্বাচনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে লক্ষাধিক ভোটে পরাজিত করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, অনেকে দল বুকে লালন করছি, অনেকে দল বিক্রি করে খাচ্ছি। আগামী দিনে নির্বাচনে এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে মনোনয়ন দিলে যতই মিথ্যাচার হোক, জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর বলেন, মাঠ পর্যায়ে যারা রাজনীতি করেন, তাদের মধ্য থেকে যেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের নাম ঘোষণার আগে দলের তৃণমূল নেতাদের পরামর্শগুলোও আমলে নেন সভাপতি শেখ হাসিনা। এর আগে শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এ নির্বাচনে নিজের যোগ্যতায় জয়ী হয়ে আসার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিটি বক্তৃতায় তিনি দলের ঐক্যের ওপরও জোর দিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিদ্রোহী নেতাদের ক্ষমা ঘোষণা এবং পুরোনো নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হলো বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা। তাদের মতে, পুরোনো নেতাদের প্রায় সবাই সাংগঠনিক কর্মকা- পরিচালনাসহ নানা বিষয়ে অভিজ্ঞ। তারা আগামী নির্বাচন যত সহজে ‘ফেস’ করতে পারবেন, তা নতুন নেতাদের দিয়ে সম্ভব নয়। এছাড়া গত কয়েক বছরে এসব নেতার সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একটা ভালো যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। এই যোগাযোগ এবং অভিজ্ঞতা দুটিই আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের জন্য কাজে লাগবে। এদিকে আজ সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতিম-লীর প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বাকি ৩৩ শূন্যপদ পূরণের বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে সম্পাদকম-লী ও সদস্য পদগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে (আইইবি) অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের নাম ঘোষণার সময় সে কথাই বলেছিলেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থাৎ সংকট এড়াতে দ্রুত শূন্যপদগুলোও পূরণ করতে চান তিনি। আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য দ্রুত আওয়ামী লীগকে তৈরি করাই তার প্রধান লক্ষ্য। নতুন কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রেকর্ড গড়ে টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন ওবায়দুল কাদের। স্বাধীন বাংলাদেশে দলটির আর কোনো নেতা টানা তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হতে পারেননি। দলের বেশির ভাগ নেতা একই পদে পুননির্বাচিত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। এবারের কমিটিতে কোনো নতুন মুখ নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র এক বছর বাকি। এই কমিটির নেতারাই এ নির্বাচনে জনগণের কাছে যাবেন এবং তারাই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতার ব্যাপারে দলের হাইকমান্ড অসন্তুষ্ট। বিশেষ করে একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কয়েক সদস্যের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য হাইকমান্ডের কাছে রয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদকরা টাকা নিয়ে কমিটি করেছেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে আশ্রয় দিয়েছেন-এমন অভিযোগও রয়েছে। কিন্তু সামনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থাকায় সভাপতি শেখ হাসিনা দলের মধ্যে কোন্দল বা তীব্র অসন্তোষ তৈরির বিষয়ে ঝুঁকি নিতে চাননি। দলটির এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোববার বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দুদিন আগেই আমাদের আশ্বস্ত করেন এবারের কমিটিতে বড় কোনো পরিবর্তন হবে না। তা সত্ত্বেও আমাদের সবার মধ্যেই কমিটিতে থাকা না থাকা নিয়ে একটা দুশ্চিন্তা ছিলো। আমরা ভাবতেই পারিনি এভাবে পুরোনোদের রেখে কমিটি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, গতকাল (রোববার) এ নিয়ে আমরা কয়েকজন পুরানো নেতা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। মনে হয়েছে, আমাদের অভিজ্ঞতাটা দরকার, যা আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্পূর্ণরুপে কাজে লাগাতে চায়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More