ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও দুজন নিহত : বেশির ভাগ স্থানে হরতালের প্রভাব পড়েনি : আজ দোয়া শুক্রবার বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার: শান্তিপূর্ণভাবে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের প্রতিশ্রুতি দিলেও সারাদেশে তা-ব চালিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুইজন নিহত হন। তারা হলেন আলামিন (২০) ও আশিক (৩৫)। এদিনের ঘটনায় সারাদেশে সাংবাদিক, পুলিশসহ দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও রাজধানীর ডেমরা-মাতুয়াইলের সাইনবোর্ডসহ দেশের বিভিন্ন স্থান রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বেশ কয়েকটি স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হরতালকারীদের সংঘর্ষ হয়। কয়েকটি স্থানে ট্রেনে হামলা চালানো হয়। রেলপথের নাট-বল্টু খুলে নেয়ার পাশাপাশি রেললাইনে কংক্রিটের স্লাব ফেলে রাখা হয়। দিনের একপর্যায়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-নোয়াখালী ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকটি স্থানে ট্রেন আটকাও পড়ে। পিকেটাররা বেশকিছু এলাকায় যানবাহনে আগুন দেয়। মোটরসাইকেলসহ নানা ধরনের যানবাহন ভাঙচুর করে। তবে কয়েকটি জায়গা ছাড়া অধিকাংশ স্থানে পুলিশ সহনশীল আচরণ করেছে। কিশোরগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষকালে ওসিসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় তিনটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। সিলেটে ছাত্রলীগ ও হেফাজত কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন। হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে ওসির গাড়ি এবং দুটি মোটরসাইকেল ভাংচুর ও আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা। এ সময় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। হরতালকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে দোকানপাটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। খুলনাসহ অনেক স্থানে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালিত হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, চুয়াডাঙ্গাসহ অনেক স্থানে হরতালের তেমন প্রভাব পড়েনি। দেশের বিভিন্ন স্থানে হরতালের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ শোডাউন করেছে। এদিকে দাবিদাওয়া মানা না হলে কঠিন কর্মসূচি দেয়ার হুংকার দিয়েছেন হেফজাত আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। এদিকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম। সোমবার দেশব্যাপী দোয়া মাহফিল এবং আগামী শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল করবে সংগঠনটি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গত শুক্রবার ঢাকা, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ করেন হেফাজত সমর্থকরা। ওইদিন পুলিশের গুলিতে হাটহাজারিতে ৪জন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১জন মারা যান। এর প্রতিবাদে পরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ হলে গুলিতে আরো পাঁচ জন নিহত হন। এই হতাহতের প্রতিবাদে গতকাল হরতাল আহ্বান করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

ঢাকায় হরতাল চলাকালে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে, বৈদ্যুতিক খুঁটি ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা অবরোধ করেছে। বিভিন্ন অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশের ওপর হামলাও চালানো হয়। হামলায় দুজন ওসিসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হয়েছেন। তবে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকা এবং দেশের বেশির ভাগ স্থানে হরতালের খুব একটা প্রভাব পড়েনি। ঢিলেঢালাভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। রাস্তায় গণপরিবহণের সংখ্যা অন্য দিনগুলোর চেয়ে কম ছিলো।

রাজধানীর পল্টনে হরতালের সমর্থনে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে। মোহাম্মদপুরে সড়ক অবরোধ করেন হরতাল সমর্থকরা। রাজধানীজুড়ে মোড়ে মোড়ে সতর্ক অবস্থানে ছিলো পুলিশ। সাতমসজিদ রোড, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ এবং প্রেসক্লাব এলাকায় সীমিত সংখ্যক বাস চলতে দেখা গেছে। বেলা ৩টার পর প্রগতি স্মরণিতে রাস্তার উভয়পাশে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন হেফাজত সমর্থকরা। এ সময় সেখানে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বায়তুল মোকাররম এলাকায় সক্রিয় ছিলেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। দফায় দফায় মিছিল, সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছেন তারা।

এদিকে সকাল থেকে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ফলে হেফাজতের মিছিল শুরু হলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। পালটাপালটি অবস্থান ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। পরবর্তী সময়ে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। রাজধানীর কুড়িলের বসুন্ধরা গেট এলাকায় বসুন্ধরার বড় মাদরাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ করেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মিছিল নিয়ে সড়কে আসেন তারা। আধাঘণ্টা অবস্থান নিয়ে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। পরে মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা হারুন বোখারির মোনাজাতের মধ্য দিয়ে তারা অবস্থান কর্মসূচি শেষ করেন। ফার্মগেট, কাওরান বাজার, তেজগাঁও, মগবাজার, হাতিরঝিল, রামপুরা এলাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে হরতালের প্রভাব ছিলো এসব এলাকায়।

এদিকে হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে কোনো প্রভাব পড়েনি চুয়াডাঙ্গায়। যে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে ছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জেলার প্রবেশদ্বারসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও মোড়ে মোড়ে মোতায়েন করা ছিলো অতিরিক্ত পুলিশ। স্বাভাবিক ছিলো সড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সব ধরণের যানবাহন চলাচল। গতকাল রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। হরতালের সমর্থনে বা হরতালবিরোধী কাউকে দেখা যায়নি। অনেকটাই প্রভাবহীন এ হরতালে সারাদিন স্বাভাবিক ছিলো জীবনযাত্রা। শহরের সব সড়কেই সব ধরণের যানবাহন চলাচল করছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতের কার্যক্রমও স্বাভাবিক রয়েছে। বিপণীবিতানগুলো খোলা রয়েছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোও চলছে স্বাভাবিক নিয়মে। রাস্তায় হেফাজতের কোনো অবস্থান না থাকলেও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান ছিলো সুসংহত। বাস টার্মিনাল থেকে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুরে বাস চলাচল করেছে। সেই সঙ্গে ঢাকাগামী কোচসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে দূরপাল্লার বাসও চলছে। ট্রেন চলাচলও স্বাভাবিক। এছাড়া আন্তঃজেলা রুটে বাস, ট্রাক, মাইক্রো, ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সাসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোনো পিকেটিং দেখা যায়নি। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। চুয়াডাঙ্গাসহ উপজেলা শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি। এছাড়া সাদা পোশাকে রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

জেলা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার ইবু মাথাভাঙ্গাকে বলেন, চুয়াডাঙ্গায় হরতালের কোনো প্রভাব ছিলো না। প্রতিটি দোকানপাট আগের মতোই খোলা ছিলো। পুরো শহরের সবরকম মার্কেট ও দোকান খোলা ছিলো সারাদিন। কোনো ধরণের পিকেটিং এর খবর আমরা পাইনি। জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রিপন মোল্লা বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় সবকিছু স্বাভাবিক ছিলো। বাস-ট্রাকসহ সব দূরপাল্লার পরিবহন সারাদিন চলাচল করেছে। হরতালের কোনো প্রভাবই ছিলো না। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম মাথাভাঙ্গাকে বলেন, চুয়াডাঙ্গায় হেফাজতের কোনো হরতাল ছিলো না। হরতালে চুয়াডাঙ্গার মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ছিলো। হেফাজত ইসলাম রাস্তায় নামেনি। এরপরও শহরসহ বিভিন্নস্থানে তিন স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো। শহরে পুলিশি টহল ছিলো। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তিনি।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More