মাঠ ছাড়বে না বিএনপি : ধারাবাহিক কর্মসূচিতে ‘কঠোর বার্তা’

স্টাফ রিপোর্টার: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরগরম রাজনীতির মাঠ। নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বিএনপি। অন্যদিকে নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে অনড় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপিকে রাজপথে ‘প্রতিহতের’ ঘোষণাও দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সঙ্গে মাঠে তৎপর পুলিশ প্রশাসনও। প্রায়ই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। কখনো আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে, কখনো পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এসব সংঘর্ষের পরই মামলা, গ্রেফতারের মুখে পড়ছেন দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির নেতাকর্মীরা। ক্রমে অশান্ত হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠও। এরপরও ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ক্ষমতাসীনদের কঠোর মনোভাব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্যেও আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের এক দফা দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচির পথে হাঁটছে বিএনপি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ দাবি আদায়ে মাঠের রাজনীতিতে আরও কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সরকার বিরোধীদের দমাতে কঠোর অবস্থানে থাকলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল ক্রমেই বাড়ছে। হামলা-মামলায় বিপর্যস্ত কর্মীরা আগামী দিনে পিছু হটতে চান না। তাদের প্রধান লক্ষ্য- সরকার পতনে এক দফা দাবি বাস্তবায়ন করে ঘরে ফেরা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও তৃণমূলের এ প্রত্যাশা মূল্যায়ন করেই ধারাবাহিক কর্মসূচি দিচ্ছে। দ্রুত দাবি আদায়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। দলীয় সূত্র বলছে, গত রমজানেও বিএনপি মাঠের কর্মসূচিতে তৎপর ছিল। মাঝে কিছুদিন আন্দোলনে ছন্দপতনের পর আবারও লাগাতর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছেন দলের নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ সপ্তাহজুড়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলায় সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচি হয়েছে। এ কর্মসূচি সফল করতে গিয়ে পটুয়াখালী, খুলনা, রাজবাড়ী, নেত্রকোনা, ফেনীসহ বেশ কয়েক জেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। গত ২৩ মে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় দলের কেন্দ্রীয় নেতা রবিউল ইসলামসহ অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। দুই মামলায় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ অন্তত ৫০০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। সর্বশেষ ২৬ মে কেরানীগঞ্জে ঢাকা জেলা বিএনপির সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়সহ অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায়ও পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এতে দলটির অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ নিয়মিত বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠ। এ দফায় বিএনপির আন্দোলনের শুরুর দিকে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করলেও ক্রমেই পাল্টে যাচ্ছে দৃশ্যপট। বাড়ছে সহিংসতা। সম্প্রতি রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ পুঠিয়ার সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এনিয়ে সরব আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আবু সাঈদ চাঁদের ‘মন্তব্য’ ঘিরে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারাও। তবে ‘চাঁদ ইস্যু পাশে সরিয়ে’ রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক দফার আন্দোলনে মাঠে সরব থাকতে চাইছে বিএনপি।

রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, ‘দলের ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে একটাই বার্তা পাচ্ছি, সেটা হলো- এক দফার কঠোর কর্মসূচি। পুলিশ এখনো কঠোর আছে, তারপরও আমরা মাঠে আছি। সামনে পুলিশ যত কঠোরই হোক না কেন, আমরা মাঠ ছাড়াবো না।’ যশোরের মনিরামপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সদস্য নিস্তার ফারুক বলেন, ‘গত ১০ দিন আমি রাতে বাড়িতে থাকতে পারছি না। কোনো মামলা না থাকলেও পুলিশ হয়রানি করছে। এলাকায় প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মামলা ছাড়াই নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতার এড়াতে বাধ্য হয়ে সবাই বাড়িছাড়া।’ তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার-হয়রানি করে আন্দোলন দমানো যাবে না। উল্টো আন্দোলনের গতি আরও বাড়বে। দলের হাইকমান্ড অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে জনগণের কাছে দেওয়া ওয়াদা পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দল এখন দৃঢ়। তার বড় উদাহরণ বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা। দলের এমন কঠোর অবস্থানের কারণে নেতাকর্মীদের মনোবল আরও বেড়েছে। আগামীতে সব বাধা পেরিয়ে কর্মীরা রাজপথে থাকবেন।’ বিএনপির সাতক্ষীরা, সিলেট ও বগুড়ার জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, দলের লক্ষ্য এবার দৃঢ়। এজন্য তারাও বাড়তি মনোবল পাচ্ছেন। সব বাধা পেরিয়ে তারা এক দফার আন্দোলনে রাজপথে থাকবেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More