মুহূর্তেই বেদনায় রূপ নিলো কার্পাসডাঙ্গা মিশনপাড়ার উৎসবের আনন্দ

বড়দিনে দু’দিনের ছুটি নিয়ে শাওনের চিরবিদায়

কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি: বড়দিনের উৎসব উদযাপনে দু’দিনের ছুটিতে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ হারিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা মিশনপল্লীর যুবক শাওন। মোবাইলে কথা বলতে চলন্ত ট্রেনের দরজার পাশে গিয়ে আসনে আর ফিরে যাননি তিনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান না পেয়ে জানানো হয় মির্জাপুর স্টেশন মাস্টার ও রেলওয়ে পুলিশকে। পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ভোরে জয়দেবপুর-মির্জাপুর স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকা থেকে শাওনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বিকেলে শাওনের মরদেহ নেয়া হয় কার্পাসডাঙ্গার মিশন পল্লীতে। গির্জায় প্রার্থনা শেষে বিকেলেই কার্পাসডাঙ্গার খ্রিষ্টান কবরস্থানে শাওনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এদিকে, বুধবার রাতে শাওনের দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে কার্পাসডাঙ্গা মিশনপাড়ায় বড়দিন উৎসবের আনন্দ মহূর্তেই বেদনায় রূপ নেয়। নিহত শাওন নওদা (২৬) চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা মিশনপাড়ার সোওল নওদা ওরফে পটলের ছেলে। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। বড়দিন উপলক্ষে বুধবার রাত ৮টার দিকে দুই আত্মীয়ের সাথে জয়দেবপুর থেকে চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনে নিজ এলাকা চুয়াডাঙ্গায় ফিরছিলেন শাওন।
জানা গেছে, খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের সবচে বড় উৎসব বড়দিন। বড়দিন উপলক্ষে মাত্র দু’দিনের ছুটি পেয়েছিলেন শাওন। গত বুধবার রাত ৮টার দিকে জয়দেবপুর থেকে চুয়াডাঙ্গায় ফেরার উদ্দেশে চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন শাওন, শাওনের বোনের দেবর অবুন কাঠান এবং অবুন কাঠানের স্ত্রী। ‘চ’ বগির ৮৮, ৮৯, ও ৯০নং আসনে বসেন তারা। ট্রেনটি জয়দেবপুর ছাড়ার কিছুক্ষণ পরই শাওন মোবাইলে কথা বলতে গিয়ে নেটওয়ার্ক সমস্যা দেখা দেয়। কথা বলার জন্য ট্রেনের দরজার পাশে যান তিনি। দীর্ঘসময় নিজের সিটে ফিরে না আসায় তার মোবাইলে ফোন করেন অবুন কাঠান। ফোন বন্ধ পেয়ে খোঁজাখুজি শুরু করেন তিনি। না পেয়ে একপর্যায়ে ট্রেনের টিকেট চেকারকে জানানো হয়। মির্জাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছুলে স্টেশন মাস্টারকে জানিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে পুরো ট্রেনে খুঁজেও শাওনের সন্ধান না পাওয়া যায়নি।
চিত্রা এক্সপ্রেসের যাত্রী চুয়াডাঙ্গার মো. শরীফ জানান, মির্জাপুর রেলস্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকার সময় অনেক যাত্রী নেমে পড়ে। ওইসময় ট্রেনের দরজার পাশে বাইরের দিকে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। তখন অনেকেই ধারণা করেন মোবাইলে কথা বলার সময় শাওন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। রেললাইনের সিগন্যাল পোস্টের সাথেও ধাক্কা লেগে এ দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে, মোবাইলে কথা বলার সময় শাওনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করা হয়েছে কিনা এ নিয়েও প্রশ্ন ঘুরপাক করতে থাকে যাত্রীদের মধ্যে।
এদিকে, শাওনের সন্ধান না পেয়ে ঘটনার তদন্তের জন্য সাথে থাকা অবুন কাঠান ও তার স্ত্রীকে স্টেশন মাস্টারের হেফাজতে রাখা হয়। মির্জাপুর স্টেশন মাস্টার নাজমুল হুদা বুধবার রাতে বলেন, শাওনের সাথে থাকা লোকজনের অভিযোগ শাওন ট্রেন থেকে পড়ে গেছে। তাদের দুজনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে জয়দেবপুর-মির্জাপুরের মাঝামাঝি ‘মোচাক’ লোকাল স্টেশনের কাছাকাছি। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। ইতোমধ্যে শাওনের সন্ধানে পুলিশ কাজ করছে। এছাড়াও শাওনের পরিবারের সদস্যদের খবর দেয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে জয়দেবপুর-মির্জাপুর রেললাইন থেকে শাওনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তার পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। বিকেলে চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা মিশনপাড়ায় শাওনের লাশ পৌঁছুলে শোকের ছায়া নেমে আসে মিশন পল্লীতে। বুধবার রাতেই শাওনের দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে বড়দিন উৎসবের আনন্দ মহূর্তেই বেদনায় রূপ নেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে গির্জায় প্রার্থনা শেষে কার্পাসডাঙ্গা খ্রিষ্টান কবরস্থানে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More