শিগগিরই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে: শিক্ষামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, এ বছরের এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শিগগিরই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তিনি বলেন, আমরা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ গ্রহণ করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকি। করোনার এই কঠিন সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পানি না।
বুধবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) আয়োজিত ‘ক্র্যাব শিক্ষাবৃত্তি ২০২১’ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে শামস-সন্ধ্যা ট্রাস্টের সহযোগিতায় ক্র্যাবের প্রয়াত ও অসচ্ছল সদস্যদের ১০ জন মেধাবী সন্তানকে শিক্ষাবৃত্তি বাবদ ৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়।
ক্র্যাব সভাপতি মিজান মালিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফ।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক সংকট করোনা মহামারীর মধ্যে বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে চলতে পারি না। বিজ্ঞান বলছে শতকরা ৫ শতাংশ বা তার কমে সংক্রমণের হার না নামা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা স্বাস্থ্যসম্মত নয়, বিজ্ঞানসম্মত নয়। এখন সংক্রমণের হার প্রায় ২৪ শতাংশ। কোনো কোনো জেলায় সংক্রমণ ৫০ শতাংশ বা তারও ঊর্ধ্বে। এই সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি আদৌ যৌক্তিক কী না তা ভেবে দেখার দরকার আছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বিভিন্ন সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চেষ্টা করেছিল। তারা খোলার পরে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পরে আবারও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। উন্নত দেশগুলো যেখানে শ্রেণিতে ২০/২৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নেই। অন্যদিকে, আমাদের এখানে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা গায়ে গায়ে লেগে বসে থাকে। সেখানে খোলার প্রশ্নটা একেবারেই অবান্তর।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সময়ে অভিভাবকদের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাদের কেউ কেউ খুলে দেয়ার কথা বললেও এ সময় খোলা হলে তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন না বলে একবাক্যে জবাব দেন। তারা বলেন, সন্তানদের মেরে ফেলার জন্য পাঠাতে পারি না।
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বহু দেশ এমন কী উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করেছে। কোনো কোনো দেশ প্রেডিকটেড গ্রেড দিচ্ছে। আমরা সেখানে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে ফেলেছিলাম। এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর দিক দুই/তিনদিন আগে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। পরে আমরা জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে তার ফলাফল দিয়েছিলাম। আমরা যেভাবে বিচার বিশ্লেষণ ও টালি করে ফলাফল দিয়েছি দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের ফলাফল এ রকমই হতো। কাজেই কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
তিনি বলেন, এ বছরের সিদ্ধান্ত আমরা খুব শিগগিরই জানাব। কী পদ্ধতি আমরা করব সবকিছুই আমরা জানাব। তবে, শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ সবাইকে বলব উদ্বিগ্ন হবেন না। বৈশ্বিক সংকট চলছে। এই সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সকল ক্ষেত্রে সেভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। একইভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হবে। এটি সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর। অবশ্যই আমরা প্রজ্ঞা, জ্ঞানের সবকিছু প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত নেব।
মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন সারা বিশ্বেই ব্যত্যয় ঘটেছে। আমাদের এখানেও কিছুটা ঘটেছে। কিন্তু তাদের যাতে দীর্ঘ মেয়াদে কোনো ক্ষতি না হয়ে যায় তার জন্য সর্বোচ্চ নজর রাখছি। আমরা কেভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ গ্রহণ করেই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকি।
বিকল্প সময়ে সরকার দ্রুত সময় পাঠদান শুরু করেছে দাবি করে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, আমরা যত দ্রুত সক্ষম হয়েছি, বিশ্বের আর কোথাও এত দ্রুত শুরু করেনি। যে কারণে বিশ্বে শিক্ষা নিয়ে কোনো সভা হলে বাংলাদেশের দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনলাইনে এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদানের বিষয়টির প্রশংসা করা হয়।
তিনি বলেন, দেশি-আন্তর্জাতিক নানা ধরনের জরিপ বলছে ৪৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত শিক্ষার্থী অনলাইন বা টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান গ্রহণ করতে পারছে। সর্ব নিম্নটা ধরে নিয়ে আমরা এই হার বাড়াতে অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতিতে গেছি। এতে ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। স্বাভাবিক পাঠক্রমে এর চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ক্র্যাব ও পুলিশ অবিচ্ছেদ্য অংশ। আজ যে সময় সন্তানরা বৃত্তি পাচ্ছে, তখন তাদের বাবা নেই। এই সন্তানরাই একদিন অনেক বড় হবে। সামাজিক কাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা সমাজের আলো দেখতে চাই। তিনি সকলকে সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের আহ্বান জানান।
বৃত্তি প্রাপ্ত ক্র্যাব সদস্যদের সন্তানদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পড়ালেখা করতে হবে। ভালো বন্ধুদের সাথে মিশতে হবে। মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে। ভবিষ্যতে ক্র্যাবের সঙ্গে একযোগে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ক্র্যাবের সাবেক সভাপতি এস এম আবুল হোসেন, ক্র্যাব উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, শেখ নজরুল ইসলাম, সিনিয়র সদস্য বেলায়েত হোসেন প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন, ক্র্যাবের যুগ্ম সম্পাদক হাসান-উজ-জামান, দপ্তর সম্পাদক ইসমাঈল হুসাইন ইমু, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাইফ বাবলু, আন্তর্জাতিক সম্পাদক রুদ্র রাসেল, নির্বাহী সদস্য গোলাম সাত্তার রনি ও এসএম মিন্টু হোসেন, সাবেক সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিকু।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More