আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য হ্রাস : এলসি মার্জিন শিথিল ও শুল্ক কমানোর প্রভাব নেই
স্টাফ রিপোর্টার: পণ্যমূল্য কমাতে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য হ্রাস, এলসি মার্জিন শিথিল ও পণ্য আমদাতিতে শুল্ক কমানোসহ একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজারে বাড়ানো হয়েছে তদারকি। তারপরও কমছে না নিত্যপণ্যের দাম। আর আসন্ন রমজান মাস ঘিরে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার ছক সাজিয়েছে। তারা কারসাজি করে রোজা শুরুর ৩ মাস আগ থেকেই বাড়াচ্ছে দাম। এর মধ্যে ছোলা নভেম্বরের তুলনায় চলতি ফেব্রুয়ারিতে প্রতি কেজি কিনতে ২৫ টাকা বেশি ব্যয় হচ্ছে। ১৩৫ টাকা কেজির চিনি এখন ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মসুর ডাল কিনতে হচ্ছে ১৪০ টাকা। পেঁয়াজের কেজি এখনও ১২০ টাকা। বাড়তি মাছ মাংসের দামও। ফলে শবেবরাতের আগেও মূল্যবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু পণ্যের দাম কমেছে। ৮ পণ্য আমদানির এলসি মার্জিন ও ৪ পণ্যের শুল্ক কমানো হয়েছে। তারপরও পণ্যের দাম কমছে না। উলটো বাড়ছে। অন্যবারের মতো এবারও অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত পড়েছে রমজাননির্ভর পণ্যের ওপর। এতে ভোক্তার জন্য সরকারের ছাড়ের সুবিধা চলে যাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেটে। ফলে সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপের সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। এছাড়া এবারই প্রথমবারের মতো নিত্যপণ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনটি মন্ত্রণালয় ও দপ্তর সমন্বয় করে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে-বাণিজ্য, কৃষি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু একটি বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের ধারাবাহিকতায় রোজা সামনে রেখে চিনি, ভোজ্যতেলসহ কয়েকটি পণ্যের শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়। ইতোমধ্যে সেটি কার্যকর করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এছাড়া রোজায় পণ্যের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পণ্যের আমদানি বাড়াতে ডলারের জোগান দেয়া হচ্ছে। খুচরা বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নভেম্বরে প্রতি কেজি চিনি ১৩৫ টাকা বিক্রি হলেও ডিসেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৪৫-১৫০ টাকা। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি ভালোমানের মসুর ডাল নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা। ডিসেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকা, আর ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। প্রতি কেজি ছোলা নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা। ডিসেম্বরে দাম বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৯০-৯৫ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। ভোজ্যতেলের মধ্যে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। ডিসেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৫৫ টাকা, আর ফেব্রুয়ারিতে দাম বেড়ে ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের মধ্যে নভেম্বরে প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ১৬৮ টাকা, ডিসেম্বরে দাম বেড়ে ১৭০ টাকা ও ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৭২ টাকা। প্রতি কেজি তিউনেশিয়ান খেজুর নভেম্বরে ৩০০ টাকা বিক্রি হলেও ডিসেম্বরে বিক্রি হয় ৪০০ টাকা। আর সেই একই খেজুর ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা। এদিকে নভেম্বরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকা বিক্রি হলেও ডিসেম্বরে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। ফেব্রুয়ারির শুরুতে ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, ডিসেম্বরে ছিল ১৭০ টাকা আর নভেম্বরে দাম ছিলো ১৮৫ টাকা। পাশাপাশি নভেম্বর থেকে কমতে থাকে গরুর মাংসের দাম। সে সময় প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৭০০ টাকা। ডিসেম্বরে দাম কমে বিক্রি হয় ৫৫০-৬০০ টাকা। নির্বাচনের পর দাম কিছুটা বেড়ে ৬০০-৬৫০ টাকা হয়। এরপর ফের ফেব্রুয়ারিতে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকা। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার জন্য এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে বছরের পর বছর ভোক্তারা ঠকছেন। আর প্রতিবছর রমজান মাস ঘিরে কারসাজির ব্যপ্তি আরও বাড়ে। এবারও সেটাই হয়েছে। দেখা যাচ্ছে শবেবরাতের আগেই পণ্যমূল্য বাড়ানো হয়েছে। তাই সংশ্লিষ্টদের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা। অনিয়ম পেলে কঠোর ভাবে আইনের আওতায় আনা। গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানান, যারা নিয়ম মোতাবেক ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ করে সাধারণ মানুষের কষ্টের কারণ হবে না, সেই আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের আমরা নীতি সহায়তা দিয়ে যাব। কিন্তু কেউ মজুতদারি করে মূল্য শৃঙ্খলে ব্যত্যয় ঘটালে তাকে বা তাদের কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়েছে। এটি অব্যাহত থাকবে। খুচরা বাজারে নভেম্বরে প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হয় ২৮০-৩০০ টাকা। যা ডিসেম্বরে দাম কমে ২৪০-২৫০ টাকা হয়। তবে ফেব্রুয়ারিতে দাম বেড়ে ফের ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি দেশি রসুন নভেম্বরে বিক্রি হয় ২০০-২২০ টাকা। ডিসেম্বরে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে ফেব্রুয়ারিতে প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More