চুয়াডাঙ্গা ১ ও ২ আসনে কোন দুজনকে সেবক হিসেবে বেছে নেবেন জনগণ

চলছে ভোট গ্রহণের তোড়জোড় : ভোটারদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করার গুরুদায়িত্ব

রফিকুল ইসলাম: অপেক্ষার প্রহরগোনার পালা প্রায় শেষ। আজ দিন শেষে রাত পোয়ালে আগামীকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে গোপন ব্যালটে ভোটগ্রহণ। ভোটারগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে সিল মেরে নির্বাচিত করবেন প্রতিনিধি। নির্বাচিতরা হবেন জাতীয় সংসদের সদস্য। আইন প্রণয়নসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে রাখবেন অবদান। এ হিসেবে প্রার্থীরা জনগণের সেবক হিসেবেই নিজেদের দাঁড় করাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চেয়েছেন। গতকাল থেকে প্রচার প্রচারণা বন্ধ হয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণায় সরব ছিলেন প্রার্থীসহ পক্ষের নেতাকর্মী সমর্থকেরা। চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনে তথা দুটি নির্বাচনি এলাকায় প্রচার প্রচারণায় মুখোরিত জনপদ।
সরেজমিন ঘুরে কিছু ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সাথে এ দলের মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উঠে আসাদের সাথেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে যাচ্ছে। দুটি আসন স্বতন্ত্র প্রার্থী একাধিক থাকায় ত্রিমুখি ভোটযুদ্ধের বিষয়টি উঠে এসেছে আলোচনায়। দুটি আসন থেকেই জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী দুজন ইতোমধ্যেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা থাকলেও শেষ পর্যন্ত কতোটা জমাতে পেরেছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
আগামীকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যালোটে ভোটের মাধ্যমে সেবক নির্বাচিত হবেন। তারা আগামী পাঁচ বছর চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করবেন। চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনে নির্বাচনকে ঘিরে কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই সরব ছিলেন। সেবক হওয়ার জন্য প্রার্থীরা ছুটেছেন মাঠে মাঠে, ভোটারের বাড়িতে বাড়িতে। সরেজমিনে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার দুটি আসনে মোট ১৫ জন প্রার্থী ভোটে দাঁড়ালেও আওয়ামী লীগের বাইরে অন্যদলগুলোর প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় তেমন সাড়া ফেলতে পারেননি। বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে, সে হিসেবে দুটি আসনেই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদের ৭৯ চুয়াডাঙ্গা-১ (আলমডাঙ্গা ও সদরের একাংশ) আসনে এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৮০ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৩৮৭, নারী ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ৫৮৯ ও হিজড়া ভোটার ৪ জন। ৮০ চুয়াডাঙ্গা-২ (জীবননগর, দামুড়হুদা ও সদরের একাংশ) আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৪০২, নারী ভোটার ২ লাখ ৩১ হাজার ৬৯২ ও হিজড়া ভোটার ৪ জন।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে মোট ৬জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, টানা তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য আলহাজ এমএ রাজ্জাক খান রাজ (ফ্রিজ) এবং আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালা (ঈগল) জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সোহরাব হোসেন (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) কেন্দ্রীয় মহাসচিব ইদ্রিস চৌধুরী (আম) ও নির্দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম শহিদুর রহমান (ট্রাক)। তবে এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে মোট ৯জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি টানা তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর (নৌকা), দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মীর্জা শাহরিয়ার মাহমুদ লন্টু (ঢেঁকি), আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য আবু হাশেম রেজা (ট্রাক) ও নুর হাকিম (ঈগল) এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি নজরুল ইসলাম মল্লিক (ফ্রিজ)। এছাড়া জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রবিউল ইসলাম (লাঙ্গল), জেলা জাসদের (ইনু) প্রচার সম্পাদক দেওয়ান মো. ইয়াছিন উল্লাহ, জেলা জাকের পার্টির সভাপতি আব্দুল লতিফ খান (গোলাপফুল) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির কেন্দ্রীয় মহাসচিব ইদ্রিস চৌধুরী (আম)। এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চুয়াডাঙ্গা মহকুমা কমিটির সভাপতি ডা. আসহাব-উল-হক নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মিয়া মো. মুনছুর আলী নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মকবুল হোসেন নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরি সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মিয়া মো. মুনছুর আলী নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শামসুজ্জামান দুদু নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে সপ্তম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শামসুজ্জামান দুদু নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম বিশ্বাস নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জেয়ার্দ্দার ছেলুন নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন নির্বাচিত হন।
চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চুয়াডাঙ্গা মহকুমা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত আবু সাঈদ চৌধুরী নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫ দলীয় জোটের প্রার্থী জনতা মুক্তি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মির্জা সুলতান রাজা নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. হবিবুর রহমান নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাজি মো. মোজাম্মেল হক নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে সপ্তম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাজি মো. মোজাম্মেল হক নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত হাজি মো. মোজাম্মেল হক নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক হাজি মো. আলী আজগার টগর নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত হাজি মো. আলী আজগার টগর নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে হাজি মো. আলী আজগার টগর নির্বাচিত হন।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More