টাকা লেনদেনের দ্বন্দ্বে সোনা চোরাকারবারির গুলিতে চাচা ভাতিজা নিহত

ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তবর্তী বাঘাডাঙ্গায় গ্রামে দিনে দুপুরে আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি

 

মহেশপুর প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় ‘সোনা চোরাচালানের টাকা লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্বের জের’ ধরে গোলাগুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বিকেল চারটার দিকে উপজেলার বাঘাডাঙ্গা গ্রামের পলিয়াটিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন বাঘাডাঙ্গা গ্রামের শামীম ইসলাম (৩৫) ও মন্টু ম-ল (৫০)। তারা সম্পর্কে চাচা ভাতিজা। এ ঘটনায় শামীমের বাবা সামছুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদ বিন হেদায়েত বলেন, শামীম ও মন্টু মারা গেছেন। শামীমের বাবা শামসুলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, হতাহত ব্যক্তি ও হামলায় জড়িত ব্যক্তিরা সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। চোরাচালান নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাঘাডাঙ্গার পলিয়াটিপাড়ার তরিকুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একই গ্রামের পশ্চিমপাড়ার শামীম হোসেন ও মন্টু ম-লের বিরোধ ছিলো। উভয়পক্ষই ভারত থেকে পণ্য এনে ব্যবসা করেন। বুধবার বিকেল ৪টার দিকে তরিকুল ও তার স্বজনদের সঙ্গে শামীম ও মন্টু ম-লের ধাক্কাধাক্কি করতে দেখেন এলাকাবাসী। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়।

এলাকাবাসী জানান, গুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা শামীম ও মন্টুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। গুলিতে আহত হন শামীমের বাবা সামছুল ইসলামও। স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে নেপার মোড় এলাকায় শামীমের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর মন্টু ম-ল মারা যান। উন্নত চিকিৎসার জন্য সামছুল ইসলামকে যশোর পাঠানো হয়েছে।

নিহত শামীমের স্বজনদের অভিযোগ, স্থানীয়ভাবে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য বেশ কয়েক দিন ধরে শামীম ও মন্টুকে হত্যার চক্রান্ত করা হচ্ছিলো। বুধবার ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। তারা এই জোড়া হত্যাকা-ের বিচার দাবি করেন।

তবে তরিকুলের স্বজনদের দাবি, তরিকুল ইসলামকে হত্যা করতে তাদের বাড়িতে হামলা করা হয়। তখন উভয়পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। হঠাৎ গুলিতে দুজন আহত হন। তাদের ধারণা, সশস্ত্র অবস্থায় তারা এসেছিলেন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তাদের অস্ত্রের গুলিতেই তারা আহত হন। পরে তারা মারা গেছেন বলে শুনেছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ওবাইদুর ইসলাম ও নারী ইউপি সদস্য ছায়েরা খাতুন জানান, কিছুদিন পূর্বে শামীমের মাদকের চালান ধরিয়ে দেয়াকে কেন্দ্র করে পল্লিআইট গ্রামের শামীম ও তরিকুলের মধ্যে মারামারি হয়। পরে শামীমের মামলায় তরিকুলকে জেল খাটতে হয়। তিনি আরও জানান, গত দুই-দিন আগে তরিকুল জেল থেকে জামিনে ফিরলেও শামীম গ্রুপের চাপে সে বাড়ি থেকে বের হতে পারছিলেন না। বুধবার বিকেলে শামীম তার দলবল নিয়ে তরিকুলের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তরিকুল বাড়ির ছাদের ওপর গিয়ে শামীম ও মন্টুকে লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলিতে মন্টু ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ সময় স্থানীয়রা আহত শামীমকে মহেশপুর উপজেলা হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। নেপা ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল হক মৃধা বলেন, দুইপক্ষই ভারতে নানা ব্যবসায় জড়িত। ব্যবসা নিয়ে বিরোধে হত্যাকা- ঘটেছে বলে তারা ধারণা করছেন।

মহেশপুর থানার ওসি মাহাবুবুর রহমান বলেন, হতাহত ও হামলাকারী সবাই স্বর্ণ চোরাকারবারি। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই গুলি ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সন্ধ্যায় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মন্টুর মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। বর্তমানে তরিকুল ইসলাম ওরফে আকালে পলাতক আছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More