আস্থা অর্জনে ইসির কার্যকর ভূমিকা জরুরি

সম্পাদকীয়

সোমবার ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হলেও মাত্র ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ ভোট পড়ায় তিনি অনেকটা ফাঁকা মাঠে জয় পেয়েছেন বলা যেতে পারে। তবে আলোচনার বিষয় হচ্ছে, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিতে মোট ভোটারের ৮৮ দশমিক ৪৯ শতাংশই ভোট দিতে আসেননি। এটা কি শুধু সংসদ-সদস্য পদ স্বল্পমেয়াদি হওয়ার কারণে? নাকি পরিবেশ ও ফলাফল নিয়ে ভোটারদের মধ্যে সংশয় কাজ করেছে? বলাবাহুল্য, বর্তমান কমিশনের জন্য এটাই ছিলো প্রথম শতভাগ স্বচ্ছ ব্যালটে অনুষ্ঠিত ভোট। এতে তারা শতভাগ সফল বলে দাবিও করেছেন। তবে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে তাকে যেভাবে হামলার শিকার হতে হয়েছে, তার দায় কমিশন এড়াতে পারে কি?

উল্লেখ্য, বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে নৌকার ব্যাজধারী বেশকিছু লোক হিরো আলমের ওপর চড়াও হয়। হামলাকারীরা যখন তাকে সড়কে ফেলে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি-লাথি মারছিলো, তখন পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে থাকলেও তাদের এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। এ অবস্থায় হিরো আলম ও তার সমর্থকরা ওই স্থান থেকে কোনোমতে দৌড়ে পালান। পরে আহতাবস্থায় তাকে রামপুরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা পরে বলেছিলেন, তারা শুধু কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বে আছেন, বাইরে কী হচ্ছে তা তাদের দেখার বিষয় নয়। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল কারও কাছ থেকে যদি এমন বক্তব্য পাওয়া যায়, তাহলে দেশি-বিদেশি মহলের কাছে কী বার্তা যাবে?

হিরো আলমের ওপর হামলা চালিয়ে কার কী লাভ হয়েছে, তা বোধগম্য নয়। এ হামলার ঘটনায় এরই মধ্যে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ‘সহিংসতা ছাড়াই প্রত্যেকের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মৌলিক মানবাধিকার অবশ্যই নিশ্চিত ও সুরক্ষিত করতে হবে।’ যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ১২টি দেশ যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। এ বিবৃতিতে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানানোর পাশাপাশি পূর্ণ তদন্ত ও দোষীদের জবাবদিহিতার দাবি জানানো হয়েছে। অবশ্য নির্বাচন কমিশন হিরো আলমের ওপর হামলাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেছে। পশ্চিমা মিশনগুলোর বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ হলেই একটা মগের মুল্লুক পাইছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’ গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিদেশি মিশনগুলোর বিবৃতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ প্রতিক্রিয়া দেন তিনি।

জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন ছিলো অনেকটা প্রাক-পরীক্ষা। কিন্তু সেই পরীক্ষায় কি পাস করতে পেরেছে কমিশন? এদিন অধিকাংশ কেন্দ্র ছিলো ভোটারশূন্য। সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে, অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের এজেন্ট ছাড়া অন্যদের দেখা যায়নি। কোথাও কোথাও অন্য এজেন্টদের বের করে দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। সব মিলে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে যে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’র প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এসব ঘটনায় তার প্রতিফলন ঘটছে না। আরপিও সংশোধনীতে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব হয়েছে; কিন্তু সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোয় কমিশন যে আচরণ দেখিয়েছে, তা যেমন জনগণকে হতাশ করেছে, তেমনি কমিশনকেও করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। খোদ রাজধানীতে একটি উপনির্বাচন সামলাতেই যদি নির্বাচন কমিশনকে এতো বেগ পেতে হয়, তাহলে সারাদেশে একযোগে জাতীয় নির্বাচন তারা কীভাবে সামাল দেবেন? আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করতে ইসি কার্যকর পদক্ষেপ নেবে-এটাই প্রত্যাশা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More