দেশে সাইবার হামলার আশঙ্কা : সতর্ক হওয়া জরুরি

সম্পাদকীয়

আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যে দেশে সব ধরনের সাইবার হামলার আশঙ্কা করছে সরকার। এজন্য দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ৪ আগস্ট শুক্রবার বাংলাদেশ ই-গভর্নমেন্ট কম্পিউটার ইন্সিডেন্ট রেসপন্স টিম বা বিজিডি ই-গভ সার্ট এ সংক্রান্ত অ্যালার্ট জারি করেছে। দেশের আইসিটি খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইসিটি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) আওতাধীন বিজিডি ই-গভ সার্ট নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনেই সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে অ্যালার্ট জারি করা হয়ে থাকে। ১ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে দেশে সাইবার হামলার আশঙ্কা রয়েছে। এর আগে, দেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট থেকে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়াও মাঝে মধ্যেই হ্যাকিংয়ের শিকার হচ্ছে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার ওয়েবসাইটও। এমন পরিস্থিতিতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম বা সার্ট গঠনের পরামর্শ দেয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। সংস্থাগুলোকে নিজস্ব লোকবল দিয়েই ওই সার্ট গঠনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কারিগরি দুর্বলতা শনাক্ত হলে বিজিডি ই-গভ সার্টকে জানাতে বলা হয়েছে। পরে বিজিডি ই-গভ সার্ট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো (সিআইআই) তালিকাভুক্ত সরকারি ২৯ সংস্থাকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবন ও কর্মপ্রবাহ তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছে। ফলে একে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অপরাধও পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। দেশে ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অর্থ চুরিসহ নানা অপরাধ বাড়ছে। ইন্টারনেট মানবজীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে পড়ায় এ সংক্রান্ত অপরাধ রোধে সচেতনতাই হতে পারে সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ। তবে কেবল সচেতনতা তৈরিই যথেষ্ট নয়, পাশাপাশি সাইবার অপরাধ দমনে কঠোর আইন ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থাও থাকতে হবে। সাইবার ক্রাইম ইউনিট নামে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি ইউনিট আছে বটে, তবে এর জনবল খুবই অপ্রতুল। যে হারে সাইবার অপরাধ বাড়ছে এবং মানুষ যে হারে ইন্টারনেটনির্ভর হচ্ছে, তা বিবেচনায় নিয়ে এ খাতের জনবল বাড়ানো জরুরি। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, আর্থিক খাতে সাইবার ক্রাইম কত বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমসের নিউইয়র্ক শাখায় থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনায় তা স্পষ্ট হয়েছে। এ অবস্থায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, কঠোর আইন ও এর প্রয়োগের মাধ্যমেই কেবল সাইবার অপরাধীদের অপতৎপরতা নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব। আমরা মনে করি, ব্যাংক ও আর্থিক খাতসহ সব ধরনের সাইবার অপরাধ দমনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিকল্প নেই। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ভালো দিকের পাশাপাশি অনেক মন্দ দিকও রয়েছে। মন্দ দিকগুলো মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সততা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বজায় রাখার বিষয়টিও জরুরি। তা না হলে যে কোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা থেকে যাবে-যা মোটেই প্রত্যাশিত নয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More