দেশ ও জনগণের স্বার্থেই শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রত্যাশিত

সম্পাদকীয়

শেষ পর্যন্ত ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। এটি ঢাকার বাসিন্দাদের তো বটেই, দেশবাসীর জন্যও স্বস্তির খবর। এ জন্য সমাবেশ আহ্বানকারী দলটি তো বটেই, সরকারও কৃতিত্ব দাবি করতে পারে। এর আগে ঢাকার বাইরে বিএনপির নয়টি সমাবেশেও কোনো গোলযোগ হয়নি; যদিও কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীনদের উসকানি ছিলো।

সেই সঙ্গে আমরা এ-ও মনে করি যে সরকার ও বিরোধী দল বিচক্ষণতার পরিচয় দিলে সমাবেশের স্থানকে কেন্দ্র করে যে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে, তা এড়ানো যেত। ডিএমপির কাছে সমাবেশের স্থানের জন্য বিএনপি অনেক আগেই চিঠি দিয়েছিলো। দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনাও হয়। তারপরও এ সংঘাত ছিলো অনাকাক্সিক্ষত। বিএনপির ঢাকার সমাবেশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একধরনের অস্থিরতা চলছিলো, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে নেতাদের বক্তব্যে। কারও কারও হটকারী কথা এ উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেয়। সমাবেশ ঘিরে কয়েক সপ্তাহজুড়ে দুইপক্ষের মধ্যে যে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই চলছিলো, তার সহিংস রূপ দেখলাম ৭ ডিসেম্বর বিএনপির অফিসের সামনে সংঘটিত সংঘর্ষে। এতে কোনো পক্ষের দায় বেশি, সেই বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়, সরকার ও বিরোধী দলের কাছে দেশবাসী সংযত ও সহিষ্ণু আচরণ আশা করে। সেই সংঘর্ষে যে একজন দলীয় কর্মী মারা গেলেন, সেই ক্ষতি অপূরণীয়। এ কথা ভুললে চলবে না যে রাষ্ট্র ও রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য।

বিএনপির সমাবেশ থেকে দলীয় সাত সংসদ সদস্য সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের এ পদত্যাগ যতই প্রতীকী প্রতিবাদ হোক না কেনো, এর একটি রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে। এতোদিন বিএনপি সংসদের ভেতরে থেকে সরকারের বিভিন্ন নীতি ও কাজের সমালোচনা করতো। সংসদের ভেতরে-বাইরে সমালোচনার দ্বার উন্মুক্ত বলে সরকারি দলের নেতারা প্রচার চালাতেন। এখন আর সেই সুযোগ থাকলো না। এর আগেও বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ থেকে সংসদ সদস্যের পদত্যাগের বহু নজির আছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির সাত সদস্য পদত্যাগ করলে সংসদ অচল হবে না। এর চেয়ে অনেক বেশি সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলেও সংসদ অচল হয় না। পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪৭ জন সদস্য পদত্যাগ করার পরও সংসদ দুই বছর সচল ছিলো। ক্ষমতাসীনদের স্বীকার করতে হবে যে নির্বাচন নিয়ে উদ্ভূত সমস্যাটি রাজনৈতিক। রাজনৈতিকভাবে সেটি সমাধান করতে হবে। দলীয় সরকারের অধীন বিরোধী দল নির্বাচনে যেতে কেন ভয় পায়, সেটাও ক্ষমতাসীনেরা খুব ভালো করে জানেন। বহুবার তারাও বিরোধী দলে ছিলেন। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি এবং ২০০৬ সালে বিএনপি এটি অনুধাবন করতে পারেনি বলেই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান মেলেনি। আজ দেশ ও জনগণের স্বার্থেই শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রত্যাশিত। সমাবেশের স্থান নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ যদি শেষ পর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে ফয়সালা হয়ে থাকে, নির্বাচন বা অন্যান্য সমস্যার সমাধান হবে না কেন? এখানে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা। তবে এ ক্ষেত্রে যে ক্ষমতাসীনদের দায়িত্বই বেশি, সে কথা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। সমাবেশের আগে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের যেসব নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন, অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিয়ে সরকার সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে পারে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More