জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগ : পাঁচজনের পদত্যাগপত্র গৃহীত

আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ : ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার: চলতি একাদশ জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বিএনপি দলীয় সাত সংসদ-সদস্য। তবে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে সশরীরে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন দলটির পাঁচ সংসদ সদস্য। এ কারণে এই পাঁচজনের পদত্যাগপত্র সংবিধান অনুযায়ী গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বাকি দুজন সশরীরে উপস্থিত থেকে পদত্যাগপত্র না দেওয়ায় এ বিষয়ে যাচাই-বাছাইয়ের পর সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার। পদত্যাগী বিএনপির সাত সংসদ-সদস্য হলেন-উকিল আব্দুস সাত্তার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), মো. হারুনুর রশীদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩), জিএম সিরাজ (বগুড়া-৭), আমিনুল ইসলাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২), জাহিদুর রহমান (ঠাকুরগাঁও-৩), মোশাররফ হোসেন (বগুড়া-৪) এবং ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা (সংরক্ষিত নারী আসন)। এদের মধ্যে উকিল আব্দুস সাত্তার অসুস্থ। আর মো. হারুনুর রশীদ বিদেশে রয়েছেন। তারা পদত্যাগপত্র স্বাক্ষর করে পাঠিয়েছেন বলে জানানো হয়। অন্যরা সশরীরে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

এদিকে বিএনপির সদস্যরা পদত্যাগ করায় একাদশ জাতীয় সংসদের ছয়টি আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী পদত্যাগপত্র গ্রহণের পর সংসদ সচিবালয় গেজেট প্রকাশ করেছেন। গতরাতে বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে রোববার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকারের দপ্তরে যান বিএনপির পাঁচ সংসদ-সদস্য। তারা পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর গণমাধ্যমকর্মীদের স্পিকার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বিএনপির সদস্যরা স্ব-স্ব স্বাক্ষরযুক্ত সাতজনের পদত্যাগের আবেদন জমা দিয়েছেন। পাঁচজন সশরীরে ছিলেন, তাদেরটা গ্রহণ করা হয়েছে। সংবিধানের ৬৭(২) অনুযায়ী ওই আসনগুলো শূন্য হয়ে গেছে। বাকি দুজনের আবেদন যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। স্পিকার জানান, এর মধ্যে উকিল আব্দুস সাত্তার অসুস্থ থাকায় সংসদ সচিবালয় তার স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখবে ও তার সঙ্গে কথা বলবে। সব ঠিক থাকলে তার আবেদনও গ্রহণ করা হবে। তবে ই-মেইলের মাধ্যমে দেওয়ায় মো. হারুনুর রশীদের আবেদন গ্রহণ করা হবে না, তাকে পরে এসে জমা দিতে হবে। তিনি বলেন, আসন শূন্য হওয়ার গেজেট প্রকাশের পর তাদের কাছে পাঠানো হবে। পাশাপাশি এটি নির্বাচন কমিশনেও পাঠানো হবে। আসন শূন্য হলে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন হবে জানিয়ে স্পিকার বলেন, আসন শূন্যের এখন গেজেট হবে। পরে অধিবেশন যখন বসবে সেখানেও জানানো হবে।

এ বিষয়ে সংবিধানের ৬৭(২) বলা হয়েছে, ‘কোনো সংসদ-সদস্য স্পিকারের কাছে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন এবং স্পিকার কিংবা স্পিকারের পদ শূন্য থাকিলে বা অন্য কোনো কারণে স্পিকার স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ডেপুটি স্পিকার-যখন উক্ত পত্র প্রাপ্ত হন, তখন হইতে উক্ত সদস্যের আসন শূন্য হবে।’

জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতেও সংসদ-সদস্যদের পদত্যাগের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। কার্যপ্রণালি বিধির ১৭৭(১) বিধিতে বলা হয়েছে, ‘সংসদের আসন হতে পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক কোনো সদস্য এই মর্মে স্পিকারকে সম্বোধন করিয়া স্বহস্তে লিখিতভাবে জ্ঞাপন করিবেন যে, তিনি তার আসন হইতে পদত্যাগ করিতে ইচ্ছুক এবং তিনি পদত্যাগের জন্য কোনো কারণ দর্শাইবেন না; তবে শর্ত থাকে যে, কোনো সদস্য যদি কোনো কারণ জ্ঞাপন করেন, অথবা অপ্রাসঙ্গিক কোনো বিষয়ে অবতারণা করেন, তা হলে স্পিকার স্বীয় বিবেচনামতে অনুরূপ শব্দ বা বাক্যাংশকে বাদ দিতে পারিবেন এবং ওই সংসদে পাঠ করে শোনানো হবে না।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে অংশ নিয়েছিল। সেই নির্বাচনে বিএনপির ছয় জন বিজয়ী হন, পরে সংরক্ষিত নারী আসনের একটি পায় দলটি। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে শুরুতে বিএনপি জানিয়েছিল, তারা সংসদে যাবে না, শপথও নেবে না। পরে সিদ্ধান্ত বদলে শপথ নেন দলটির সংসদ সদস্যরা। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জয়ী হয়েও নির্ধারিত সময়ে শপথ না নিলে বগুড়া-৬ আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে সে আসনে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী জিএম সিরাজ।

এর আগে শনিবার রাজধানী ঢাকার গোলাপবাগে বহুলালোচিত গণসমাবেশ থেকে বিএনপির সংসদ-সদস্যরা সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এর পরপরই রোববার স্পিকারের দপ্তরে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন দলটির পাঁচ সংসদ-সদস্য।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সাংবাদিকদের বলেন, তারা শনিবারই ই-মেইলের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। গতকাল (রোববার) সশরীরে জমা দিতে এসেছেন। গেজেট হলেই বিএনপির ছেড়ে দেয়া আসনগুলোতে উপনির্বাচন : বিএনপির সংসদ-সদস্যদের পদত্যাগজনিত কারণে শূন্য হওয়া আসনগুলোতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়ের গেজেট পাওয়ার পরই নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে এসব আসনের উপনির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংবিধানের ১৭৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো সদস্যের আসন শূন্য হলে সংসদ সচিবালয়ের সচিব তার গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করবেন। যাতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) শূন্য পদটি পূরণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

বিএনপির সদস্যদের পদত্যাগে আসন শূন্য ঘোষণা হলে উপনির্বাচন প্রয়োজন পড়বে কিনা-জানতে চাইলে সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের আগে কোনো সংসদীয় আসন শূন্য হলে উপনির্বাচন করতে হবে। চলতি একাদশ সংসদের মেয়াদ এখনো এক বছরের বেশি রয়েছে। কাজেই এখন কোনো আসন শূন্য হলে নির্বাচন কমিশনকে আইন অনুযায়ী উপনির্বাচন করতেই হবে।

স্পিকার পরে সাংবাদিকদের বলেন, তারা আমার কাছে সাতজনের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। পাঁচজন সশরীরে ছিলেন, তাদেরটা গ্রহণ করা হয়েছে। সংবিধানের ৬৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ওই আসনগুলো শূন্য হয়ে গেছে। বাকি দুজনের আবেদন যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেব। এর মধ্যে সংসদ সচিবালয় সাত্তার সাহেবের স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখবেন এবং কথা বলবেন। সব ঠিক থাকলে তা গৃহীত হবে। তবে ইমেইলে দেওয়ায় হারুনের আবেদন গ্রহণ হবে না, তাকে পরে এসে জমা দিতে হবে বলে জানান শিরীন শারমিন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More