শুধু আইন নয় যথাযথ প্রয়োগও জরুরি

সম্পাদকীয়

জাতীয় সংসদে ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) বিল-২০২৩’ পাস করা হয়েছে। এতে খাদ্যপণ্য সরকার নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি মজুদ করলে যাবজ্জীবন বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। খাদ্য বাজারজাত করার ক্ষেত্রে প্রকৃত নাম পরিবর্তন করে বিক্রি করলেও দুই বছর কারাদ- বা ১০ লাখ টাকা অর্থদ- হবে। ১৯৫৬ সালের ফুড (স্পেশাল কোর্ট) অ্যাক্ট এবং ১৯৭৯ সালের ফুডগ্রেইনস সাপ্লাই (প্রিভেনশন অব প্রি-জুডিসিয়াল অ্যাক্টিভিটি) অর্ডিন্যান্স বাতিল করে নতুন এই বিল অনুমোদন করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে অনুমোদিত এই বিল এখন রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর আইন হিসেবে কার্যকর হবে। বিলে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন ও বিপণন সংক্রান্ত কিছু অপরাধ চিহ্নিত করে বলা হয়েছে, কোনো অনুমোদিত জাতের খাদ্যশস্য থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যকে ওইরূপ জাতের উপজাত পণ্য হিসেবে উল্লেখ না করে ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বিপণন করলে তা হবে অপরাধ। খাদ্যদ্রব্যের মধ্য থেকে স্বাভাবিক উপাদানকে সম্পূর্ণ বা আংশিক অপসারণ বা পরিবর্তন করে উৎপাদন বা বিপণন করলে সেটিও অপরাধ হবে। এছাড়া খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম উপাদান মিশ্রণ করে উৎপাদন ও বিপণন করলে সেটিও হবে অপরাধ। নতুন আইন বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আদালত থাকবে। এই আদালত ‘খাদ্যদ্রব্য বিশেষ আদালত’ নামে চিহ্নিত হবে। এই আইনের অধীন কিছু অপরাধের বিচার ভ্রাম্যমাণ আদালতেও করা যাবে। গত এপ্রিলে মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া প্রস্তাবিত আইনটি গত বুুধবার সংসদে পাসের জন্য উত্থাপন করেন খাদ্যমন্ত্রী। জাতীয় সংসদে এই বিলের ওপর আলোচনা হয়েছে। সংসদ সদস্যদের অনেকে আইনটির অপব্যবহারের সুযোগ থাকা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন, এই আইনের আওতায় যে কাউকে যেকোনো সময়ে ধরা যাবে। যে কাউকে ধরে যাবজ্জীবন দ- দিয়ে দেয়া যাবে। এই আইনের ফলে দেশের কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াবে। খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনটি পাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনটি কার্যকর হলে খাদ্যদ্রব্য মজুদের সুযোগ থাকবে না, বরং খাদ্য ও খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। ফলে সাধারণ মানুষ অনেক বেশি লাভবান হবে। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, প্রকৃত মজুদদারদের চিহ্নিত করা সহজ। কৃষকদের ওপর এই আইন প্রয়োগের কোনো আশঙ্কা নেই। এই আইনের অধীনে প্রণীত বিধিমালায় এ বিষয়ে আরো পরিষ্কার করা হবে। আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিকের পাঁচ মৌলিক অধিকারের একটি খাদ্যের অধিকার। নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা এর মধ্যেই পড়ে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে এই অধিকার বিভিন্নভাবে ক্ষুণœ হচ্ছে। খাদ্যপণ্যের মান, পুষ্টিগুণ নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। যেমন বাজারে পাওয়া যায় মিনিকেট চাল। এই চাল নিয়ে অসাধু ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যের ফলে ভোক্তা প্রতারিত হচ্ছে। ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) বিল-২০২৩’ পাস হয়েছে। আইনে পরিণত হওয়ার পর দ্রুত বিধান তৈরি করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগই হচ্ছে সবচেয়ে জরুরি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More