জোনভিত্তিক কার্যক্রম নিয়ে বিভ্রান্তি : চূড়ান্ত হয়নি তালিকা

যখন যেসব এলাকা লকডাউন করা হবে : তখনই সেইসব এলাকার নাম প্রকাশ করা হবে
স্টাফ রিপোর্টার: জোনভিত্তিক কার্যক্রম নিয়ে বিভ্রান্তি বাড়ছে। রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে জোনভিত্তিক কার্যক্রম শুরুর পর সবার প্রশ্ন, সারাদেশে কবে নাগাদ এ কার্যক্রম শুরু হবে। তবে স্বাস্থ্যবিভাগ গতকাল রোববার পর্যন্ত জোনভিত্তিক কার্যক্রমের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। এদিকে বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন, টেলিভিশনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোনভিত্তিক ভাগের খবর প্রকাশিত ও প্রচারিত হচ্ছে। কিছু গণমাধ্যমে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির উদ্ধৃতি দিয়ে রেড জোনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ও ফোকাল পারসন হাবিবুর রহমান খান এ ধরনের খবরকে ভিত্তিহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘জোনভিত্তিক তালিকা এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। ওইসব গণমাধ্যম কিভাবে তালিকা পেলো?’ তবে তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে জানান হাবিবুর রহমান। করোনা প্রতিরোধে সরকার গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির উদ্ধৃতি দিয়ে জোনভিত্তিক কার্যক্রমের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে গণমাধ্যমে। এই কমিটির সদস্য সচিব জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘জোনভিত্তিক কোনো তালিকা আমরা প্রকাশ করিনি। এমন তালিকা আমাদের হাতে পৌঁছায়নি।’
এদিকে স্বাস্থ্যবিভাগসূত্রে জানা যায়, রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোন ভাগ করা এলাকাগুলোর পূর্ণাঙ্গ তালিকা একসঙ্গে প্রকাশ করা হবে না। যখন যেসব এলাকা লকডাউন করা হবে, তখনই সেইসব এলাকার নাম প্রকাশ করা হবে।
সার্বিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘রাজাবাজারসহ কয়েকটি এলাকার মধ্য দিয়ে জোনভিত্তিক পরীক্ষামূলক লকডাউন আগেই শুরু হয়ে গেছে। অনেকে বিষয়টি না বুঝে জোনভিত্তিক লকডাউন শুরু হতে যাচ্ছে বলে প্রচার করছেন। জোনভিত্তিক এলাকাসমূহের একটি তালিকা অবশ্যই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে রয়েছে। কিন্তু তা জনসম্মুখে প্রকাশ করার বিষয় নয়। লকডাউন বাস্তবায়নকারী কমিটি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাই আগে থেকে তালিকার বিষয়ে জানার এখতিয়ার রাখেন।’ মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘চলমান লকডাউন প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা রেড জোনে অন্তর্ভুক্ত হবে, আবার সংক্রমণরোধে উন্নতি ঘটিয়ে রেড জোন থেকে মুক্তি পাবে। তাই একটি এলাকাকে বেশি সময়ের জন্য রেড জোনে রাখা যেমন ঠিক হবে না, তেমন সংক্রমণের হার বেড়ে গেলে একটি এলাকাকে বেশি দিন ধরে ইয়েলো জোনে রাখাও ঠিক নয়। জোনভিত্তিক লকডাউনের বিষয়টি অনেকটা পরিবর্তনশীল। কোনো এলাকার করোনা পরিস্থিতির অবনতি সেটি এমনিতেই রেড জোনে যুক্ত হয়ে যাবে। আর রেড জোনের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটালে চলে যাবে ইয়েলো ও পরবর্তীতে গ্রিন জোনে।’
ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জোনভিত্তিক লকডাউনের পাইলটিংয়ের মাধ্যমে অনেক কিছু শিক্ষা পাচ্ছি। লকডাউন কার্যকর করার আগে খুব কম সময় পাবেন লকডাউন এলাকার বাসিন্দারা। তবে লকডাউন কার্যকর করার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কমিটি ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিষয়টি কয়েকদিন আগেই জানানো হবে, যাতে তারা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন। লকডাউন দেয়ার অনেক আগে থেকে জানানোর অভিজ্ঞতা ভালো না। লকডাউন এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় চলে গেলে লকডাউন দেওয়ার উদ্দেশ্য সফল হবে না। তাছাড়া লকডাউন চলাকালেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহে সমস্যায় পড়তে হবে না এলাকাবাসীর। লকডাউন বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত কমিটি, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের এলাকাবাসীর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহসহ সমস্যাসমূহ সমাধান করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন।’
মহাপরিচালক জানান, করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গঠিত এলাকাভিত্তিক কমিটি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ রেড জোনে তালিকাভুক্ত করার জন্য কোনো এলাকার নাম প্রস্তাব করলে তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে পর্যালোচনা করে বাস্তবভিত্তিক হলে লকডাউনের জন্য তালিকাভুক্ত করা হবে।
এদিকে, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার মূলত জোনভিত্তিক লকডাউনের মাধ্যমে করোনা মোকাবেলার কৌশল গ্রহণ করেছে। সেই কৌশলে রেড জোন চিহ্নিত এলাকায় লকডাউন ও সাধারণ ছুটি থাকবে। এছাড়া আগের শর্তেই সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন ও সরকারি-বেসরকারি অফিস চলবে।’ জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জোনিং করে লকডাউন, এটা খুবই একটা কার্যকর ব্যবস্থা বলে আমরা মনে করছি। একইসঙ্গে চার-পাঁচটি স্থান রেডজোন ঘোষণা করে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হতে পারে। পরীক্ষামূলক লকডাউন চলছে রাজাবাজারে। সেখানকার ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোকে সংশোধন করা হবে। একটি স্থানকে শুধু লকডাউন করলেই চলবে না। সেখানে বসবাসকারী মানুষের জন্য আমাদের কিছু দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে, এগুলো নিশ্চিত করতে হবে।’ ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘দেশের বিদ্যমান সংক্রামক রোগ আইন অনুযায়ী রাজধানীর বাইরে জেলাগুলোয় কোনো এলাকা লকডাউন করতে হলে সেই জেলার সিভিল সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতি নিয়েই লকডাউন করতে হবে। সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার লকডাউন কার্যকর করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজধানী ঢাকার বাইরে যে এলাকায় প্রতি লাখে ১০ জন বা এর বেশি কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী থাকবে সেখানেই রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন করা হবে। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে রোগীর অবস্থান করা জায়গা বা এলাকা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। কোন এলাকায় লকডাউন করা হবে তা আগে থেকে বলা হলে তো লোকজন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাবে। রেড জোনে জনসাধারণের চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। যাদের খাবার প্রয়োজন তা পৌঁছে দেয়া হবে।’ জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ জুনের পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের মতো নির্দেশনাসহ অফিস ও গণপরিবহন খোলা থাকবে, সেজন্য একটি অর্ডার জারি করা হবে। বর্তমানে যে অবস্থায় চলছে সবকিছু সেভাবেই চলবে। নতুন করে কোনো ছুটি ঘোষণা করা হবে না। তবে যে এলাকা রেড জোনের আওতায় থাকবে, সেখানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হবে। এ সংক্রান্ত আরও কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পেয়েছি।’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী সরকার রেড, ইয়েলো ও গ্রিন-এই তিনটি জোনে চিহ্নিত করবে। বেশি আক্রান্ত এলাকাকে রেড, অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়োলো ও একেবারে কম আক্রান্ত বা আক্রান্তমুক্ত এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। রেড জোনকে লকডাউন করা হবে, ইয়োলো জোনে যেন আর সংক্রমণ না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সতর্কতা থাকবে গ্রিন জোনেও।
অপর একটিসূত্র জানায়, জোনভিত্তিক কার্যক্রম নিয়ে রোববার রাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। ওই বৈঠকে জোনগুলো চিহ্নিত করে কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More