অনলাইন ক্লাসে কর্মীদের বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ

নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ

বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামসহ দুই প্রশিক্ষককে গ্রেফতার
স্টাফ রিপোর্টার: গণহারে কর্মীর সংখ্যা না বাড়িয়ে বোমা তৈরিতে দক্ষ কর্মীবাহিনী গঠনের ওপর বেশি মনোযোগ দিয়েছে নব্য জেএমবি। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে তারা অনলাইন ক্লাসে নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে কর্মীদের বেশ কয়েকজন দক্ষ কারিগর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এ প্রশিক্ষকদের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রোববার দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের পাঁচদিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট জানায়, বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে জঙ্গি সদস্যরা শক্তিশালী বোমা (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস-আইইডি) তৈরি করে আসছিলেন। শক্তিশালী বোমা বানাতে তারা তাতে বিউটেন গ্যাস ও বিয়ারিং বল ব্যবহার করতেন। রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বোমাগুলো বিস্ফোরণের কৌশল নেয়া হয়েছিলো।
সিটিটিসিসূত্র জানায়, বোমা তৈরির প্রশিক্ষণের জন্য নব্য জেএমবির আলাদা সেল রয়েছে। দেশে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়-এমন স্কুলের সন্ধানও পাওয়া গেছে। যেখানে সারা দিন ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ‘টেলিগ্রাম অ্যাপ’ ব্যবহার করে বোমা তৈরির মূল কারিগরকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। পুরো চক্রটিকে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামসহ দুই প্রশিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে প্রশিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে ডেভিড কিলার (নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য) এবং কেরানীগঞ্জ থেকে কাউসার হোসেন ওরফে মেজর ওসামাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া আরও অনেকে নজরদারিতে রয়েছেন। সোমবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি প্রধান) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ১৭ মে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে প্লাস্টিকের ব্যাগে শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে রোববার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে মামুনকে মোটরসাইকেলসহ গ্রেফতার করা হয়। এ মোটরসাইকেলে করেই সাইনবোর্ডের ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বোমাটি রাখা হয়েছিলো। সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান আরও বলেন, গ্রেফতার মামুনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আড়াইহাজারের নোয়াগাঁওয়ে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় তিনটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ৩০০ গ্রাম লাল রংয়ের বিস্ফোরক জাতীয় পাউডার, সাতটি বিউটেন গ্যাসের ক্যান, এক সেট রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস, দুই প্যাকেট ছোট সাইজের বিয়ারিং বল, ৫০০টি ক্রিসমাস বাল্ব, এক রোলের দুই ইঞ্চি সাদা কার্টন টেপ এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। মোটরসাইকেলটি নব্য জেএমবির সাংগঠনিক কাজে ব্যবহার করা হতো। পরে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে।
সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, পল্লবী থানার একটি মামলার পলাতক আসামি কাউসারকে রোববার রাত ৮টার দিকে কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়। নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রশিক্ষক ও বোমা তৈরির মূল কারিগর কাউসারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই রাতেই বন্দর থানার কাজীপাড়ার জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। আস্তানা থেকে বোমা তৈরির ১১ ইঞ্চি লম্বা জিআই পাইপ, গ্রেনেড তৈরির দুটি জিআই বক্স, চারটি রিমোট কন্ট্রোল ও দুটি জিহাদি বইসহ বেশকিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও জানান, নব্য জেএমবির সামরিক শাখার অন্য সদস্যদের সঙ্গে কাউসার অনলাইনে ও অফলাইনে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। নব্য জেএমবির আমীর মাহাদী হাসান ওরফে আবু আব্বাস আল বাঙ্গালীর সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। গ্রেফতার দুই জঙ্গির মধ্যে কোনো যোগসাজশ ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, সিøপার সেল হিসাবে তারা কাজ করে আসছিলেন। আমিরের নির্দেশে আলাদা আলাদাভাবে তারা কাজ করতেন। তাদের মধ্যে কোনো যোগসাজশ আমরা লক্ষ করিনি। তবে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কাউসারের নামের আগে ‘মেজর’ কেন ব্যবহার করা হয়- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা তাদের সাংগঠনিক নাম। সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্য তারা।
এদিকে, সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের এডিসি রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, লাল রংয়ের পাউডার দিয়াশলাইয়ের কাঠির মাথা থেকে নেওয়া হয়। এরপর সেগুলোর সঙ্গে চিনি মেশানো হয়। এতে সেটি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আর বিউটেন গ্যাসটি আগুন ধরানোর জন্য ব্যবহার হয়। কৌশলটি হলো-বিস্ফোরণ ঘটলে একইসঙ্গে অনেক মানুষ আহত ও জখম হবে। এতে কেউ নাও মরতে পারে। বোমা দ্বিগুণ বিধ্বংসী ক্ষমতাসম্পন্ন করতে এটা করা হয়। বোমা শক্তিশালী করতে বিয়ারিং যুক্ত করা হয়। আর বোমা বিস্ফোরণের জন্য রিমোট কন্ট্রোল প্রযুক্তি ব্যবহারের কৌশল নেওয়া হয়। ক্রিসমাস বাল্বগুলো প্রজ্বালক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আর এসব বোমা তৈরির অন্যতম টার্গেট পুলিশ।
গ্রেফতার নব্য জেএমবির সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং কাউসার হোসেন ওরফে মেজর ওসামাকে পাঁচদিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। সোমবার আদালতে তাদের হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। আদালত শুনানি শেষে তাদের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রোববার রাতে বন্দরের ধামগড় কাজীবাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম, রিমোট কন্ট্রোল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় সোমবার বন্দর থানায় মামলা হয়েছে। সন্ধ্যায় মামলাটি করে ঢাকা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সিটিটিসি। মামলায় আবু নাইম ওরফে কাউসার হোসেন ওরফে মেজর ওসামাকে (২৭) আসামি করা হয়। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানার সাকোপা গ্রামের আজিমউদ্দিনের ছেলে কাউসার। বন্দর থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More