প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ : অধিকাংশ বিদ্রোহীই থাকবেন নির্বাচনি মাঠে
স্টাফ রিপোর্টার: জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দল না থাকায় মাঠে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী এখন আওয়ামী লীগ। ২২ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী থাকায় তারা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন। বাকি যে ৩৯টিতে ভোট হচ্ছে তার বেশিরভাগেই রয়েছে দলেরই এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে বিদ্রোহী ও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে উভয় সংকটের মধ্যে শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের বিষয়ে নমনীয়ই দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাসীনদের। বিদ্রোহী দমনে কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারাও বিষয়টি নিয়ে ‘কড়া কথা’ বললেও চোখে পড়ছে না দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিদ্রোহীদের বসাতে গেলেই বাড়বে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের সংখ্যা। এতে নির্বাচন নিয়ে বাড়বে সমালোচনা।
এরই মধ্যে আজ রোববার শেষ হচ্ছে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়। সময় শেষ হওয়ার পরে রিটার্নিং কর্মকর্তারা একক প্রার্থীদের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করবেন। বাকি জেলাগুলোতে ১৭ অক্টোবর ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ২৬ সেপ্টেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় প্রতীকে ভোট না হওয়ায় এবং বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিার সমালোচনা এড়াতে বিদ্রোহীদের নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা নেই আওয়ামী লীগের। ফলে এসব বিদ্রোহী প্রার্থীর অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনি মাঠে থেকে যাবেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে যাচাই-বাছাই করে ত্যাগী ও যোগ্যদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বিদ্রোহীদের বিষয়ে দলের অবস্থানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গতবারের কিছু বিদ্রোহী এবারও মনোনয়ন চেয়েছিলেন, কিন্তু আমরা কোনো বিদ্রোহীকে মনোনয়ন দেইনি। কারণ এটা আমাদের আগেরই সিদ্ধান্ত ছিল। এবারও কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা আগামীতেও আর কোনোদিন আওয়ামী লীগে দলীয় মনোনয়ন পাবে না। ৬১ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ৫০০ জন। ৯ সেপ্টেম্বর তাদের মধ্য থেকে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে দলটি। এর মধ্য থেকে ৩১ জেলায় নতুন মুখ আনা হয়েছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া বড় অন্য কোনো দলের অংশগ্রহণ নেই। ফলে ১৯ জেলায় একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এছাড়া যাচাই-বাছাইয়ে আরও তিন জেলার একজন ছাড়া অন্যদের প্রার্থিতা বাতিল হয়। ফলে ২২ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। বাকি ৩৯ জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে মোট বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ১৪২ জন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর মধ্যে অন্তত ২০ জেলায় প্রায় অর্ধশত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে আমরা কথা বলে যাচ্ছি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করছি। আপনারা কেমন সাড়া পাচ্ছেন, শেষ পর্যন্ত কি বিদ্রোহীরা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছে না সবাই বসে যাবে। তবে যারা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে তাদের বিষয়ে দলের নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) এবং পার্টির হাইকমান্ডের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনের শুরু থেকেই তাদের ব্যাপারে নমনীয় দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগকে। সাতক্ষীরায় গত নির্বাচনে বিদ্রোহীকে এবার দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। নরসিংদী জেলা পরিষদে গতবার চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন আসাদোজ্জামান। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল মতিন ভূঁইয়া। আসাদোজ্জামানের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে আব্দুল মতিন ভূঁইয়া আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন পেয়েছেন। এছাড়া আরেক জেলায় গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তেমন এক নেতাকে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বাইরে কোনো দল না থাকায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ এবার কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে গেলে সব জেলায়ই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হতেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হতো। তাই বিদ্রোহী দমনে কোনো ‘অ্যাকশনে’ যাচ্ছেন না তারা। অন্যদিকে সমানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তার আগে তৃণমূলে কোনো ধরনের বিভেদ-বিশৃঙ্খলা চায় না আওয়ামী লীগ। দলের সাংগঠনিক অবস্থা আরও জোরদার করতে নির্বাচনের আগেই পূর্বের বিদ্রোহীদের ক্ষমা করে দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা চলছে দলের হাইকমান্ডে।
একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক নেতা বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে একজন করে প্রার্থীকে দলের সমর্থন দেওয়া হয়েছে। সেখানে আরেকজন দাঁড়ালে আওয়ামী লীগ কি তাকে বসিয়ে দিতে পারে? নির্বাচন করার অধিকার তো সবার আছে। আমরা চেয়েছি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক। এছাড়া এই নির্বাচন যেহেতু দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না, ফলে বিদ্রোহী প্রার্থীরা খুব বেশি মাথাব্যথার কারণ নয়। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেদিকেই আমাদের বেশি মনোযোগ। এদিকে কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা না থাকলেও বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় এমপি বা প্রভাবশালী মহল স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থীদের নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন। তাদের নির্বাচন থেকে সরাতে দেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের হুমকি-ধমকি। প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলছে ভোটারদের ওপরও। ভোটারদেরও নানাভাবে চাপ, এমনকি হুমকি-ধমকিও দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।