আজ কেন্দ্রে কেন্দ্রে নেয়া হবে নির্বাচনী সরঞ্জাম : কাল ইভিএমে ভোটগ্রহণ

হামলা-মামলা ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সম্পন্ন হলো চুয়াডাঙ্গার ৮ ইউপি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা

স্টাফ রিপোর্টার: হামলা মামলা ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শেষ হয়েছে চুয়াডাঙ্গার ৮ ইউপি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা। শেষ মুহূর্তে তাই উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রার্থীরা ছুটেছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য নির্বাচনী মাঠে বিপুল সংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। আজ বুধবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে নেয়া হবে নির্বাচনী সরঞ্জাম। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৪টা থেকে বিকেলে ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আজ বুধবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে নেয়া হবে নির্বাচনী সরাঞ্জাম।

গত ৮ মার্চ জীবননগর উপজেলার হাসাদাহ ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র (জামায়াত সমর্থিত) চেয়ারম্যান প্রার্থী মাওলানা ইসরাইল হোসেন ও তার ছেলেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে রক্তাক্ত জখম করা হয়। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ঘটনায় ইসরাইল হোসেন দুজনের নাম উল্লেখসহ ৮-১০ জনকে আসামি করে জীবননগর থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। ৯ মার্চ ইসরাইল হোসেন জীবননগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ভোট কর্মী ও পরিবারের নিরাপত্তা দাবি জানান। ৮ মার্চ কেডিকে ইউপি নির্বাচনে কাশিপুর গ্রামে এক সদস্য প্রার্থীর মাইক ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়। ১০ মার্চ উথলী ইউপি নির্বাচনে ভোট চাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষে ৬ জন আহত হন। আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হান্নান ও সতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) আনারস প্রতীকের আবজালুল রহমান ধিরুর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে এ মারামারির ঘটনা ঘটে। ১১ মার্চ আবজালুর রহমান ধিরু চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনেরর মাধ্যমে হামলা প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করেন।  অপরদিকে, একই দিনে জীবননগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আব্দুল হানান। তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবজালুল রহমান ধিরু বিরুদ্ধে তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ তোলেন। আবজালুল রহমান ধিরুর কর্মী-সমর্থকরা আব্দুল হান্নানের কর্মী-সমর্থকদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।

                    এদিকে, আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ও আইলহাস ইউপিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত ১১ মার্চ রাতে নাগদাহ ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নৌকার কর্মীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এঘটনায় উভয়পক্ষে ১১ জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়। আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকার প্রার্থী মো. হায়াত আলী ও স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী প্রার্থী) এজাজ ইমতিয়াজ বিপুলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এ মারামারির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একজনের অবস্থা এখনও পর্যন্ত সঙ্কটপন্ন। তিনি রাজশাহী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পর দিন ১২ মার্চ নৌকার কর্মীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিপুলের আরও এক নারী সমর্থকের ওপর হামলার অভিযোগ করা হয়। এঘটনায় ১২মার্চ এজাজ ইমতিয়াজ বিপুর নাগদাহ গ্রামে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন হায়াত আলী লোকজন তার কর্মী সমর্থকদের মারধরসহ নির্বাচনী অভিযোগ ও মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। পর দিন ১৩ মার্চ পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হায়াত আলী। খেজুরতলা বাজারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী এজাজ ইমতিয়াজ বিপুলের উপস্থিতিতে তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ তোলেন। এ ঘটনায় উভয়পক্ষই আলমডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাঁস ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে  মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৯টি। মোট ভোটার ১২ হাজার ৪৫৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ হাজার ৩১০ জন এবং নারী ভোটার ৬ হাজার ১৪৮ জন। নাগদাহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৯টি। মোট ভোটার ১০ হাজার ৩৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ হাজার ৭৮১ জন এবং নারী ভোটার ৬ হাজার ৫৬৭ জন। দুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ১২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নাগদাহ ইউনিয়ন ৯জন প্রার্থী ও আইলহাস ইউনিয়নে ৩ প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বস্দ্বিতা করছেন। এছাড়াও ইউনিয়ন দুটিতে সংরক্ষিত আসনের মহিলা ২০ জন ও সাধারণ সস ১ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নগদাহ ইউপি নির্বাচনে চেয়ারমান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১২ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনীত ভেদামারি গ্রামের হায়াত আলী (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী নাগদাহ গ্রামের মোহাম্ম ইমতিয়াজ জোয়ার্দার বিপুল (চশমা), খেজুরতলা গ্রামের দারুস সালাম (মোটরসাইকেল), ভেদামারি গ্রামের প্রভাষক আবুল হোসেন (টেবিলফ্যান), নাগদাহ পূর্বপাড়ার গ্রামের আলমগীর হোসেন (রজনীগন্ধা), জোড়গাছা গ্রামের মিশর আলী (টেলিফোন), একই গ্রামের হাবিবুল্লাহ (আনারস), বলিয়ারপুর গ্রামের আতিকুর রহমান (ঘোড়া), জাহাপুর গ্রামের আসাদুজ্জামান রাসেল (আটোরিকশা) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদিকে, আইলহাস ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চেয়ারমান প্রার্থীরা। এর মধ্যে আ.লীগ দলীয় মনোনীত টাকপাড়া গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বাদল (নৌকা), বলেশ্বরপুর গ্রামের মিনাজ উদ্দিন বিশ্বাস (চশমা), স্বতন্ত্র ঘোলদাড়ী গ্রামের মোহাম্মদ বিল্লাল গণি (আনারস) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। এ দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সংরক্ষিত আসনের মহিলা ২৩ জন ও সাধারণ সদস্য ৫১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

                    অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামীকাল বৃহস্পতিবার। সকাল ৮ হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ইভিএমএর মাধ্যমে ৬৪টি কেন্দ্রে এ ভোট গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে ১০টি অস্থায়ী কেন্দ্র রয়েছে। ৬৪টি ভোট কেন্দ্রে ভোট কক্ষের সংখ্যা থাকছে ২৬৪টি। এর মধ্যে কেডিকে ইউনিয়নে ৩টি অস্থায়ী ভোট কক্ষ রয়েছে। উপজেলার মনোহরপুর  ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১টি চেয়ারম্যান পদে ৩জন, সংরক্ষিত ৩টি মহিলা আসনের ৩টি সদস্য পদে  ১০জন ও ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৯টি সদস্য পদে ২৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৪৬১জন। কেডিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১টি চেয়ারম্যান পদে ৩জন, সংরক্ষিত ৩টি মহিলা আসনের ৩টি সদস্য পদে ৯জন ও ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৯টি সদস্য পদে ৩১জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৯৪জন। উথলী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একটি চেয়ারম্যান পদে ৫জন, সংরক্ষিত ৩টি মহিলা আসনের ৩টি সদস্য পদে ১২জন ও ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৯টি সদস্য পদে ৩৪জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ১৫৩জন। রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১টি চেয়ারম্যান পদে ৫জন, সংরক্ষিত ৩টি মহিলা আসনের ৩টি সদস্য পদে ৯জন ও ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৯টি সদস্য পদে ২৫জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ২৭৬জন। হাসাদাহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১টি চেয়ারম্যান পদে ৬জন, ৩টি মহিলা আসনের ৩টি সদস্য পদে ৮জন ও  ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৯টি সাধারণ সদস্য পদে ২৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ইউনিয়নের ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ৮৫৬জন ও বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১টি চেয়ারম্যান পদে ৬জন, সংরক্ষিত ৩টি মহিলা আসনের ৩টি সদস্য পদে ৭জন এবং ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৯টি সদস্য পদে ২৯ জন জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে। এ ৬টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৮৩ হাজার ৭৮৫জন বলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মেজর আহাম্মেদ নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More