চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তিন ওয়ার্ড রেড জোন চিহ্নিত করে লকডাউন : করোনা সংক্রমণ রোধে নির্দেশনা না মানলে কঠোর ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তিনটি ওয়ার্ড রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে এসব এলাকায় লকডাউন কার্যক্রম শুরু হয়। চুয়াডাঙ্গা শহরের গুলশানপাড়া, গোরস্তানপাড়া, ফেরিঘাট রোড, বড়বাজারপাড়া, এতিমখানাপাড়া, থানা কাউন্সিলপাড়া, হাসপাতালপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় হঠাৎ করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ফলে পৌর এলাকার ৪, ৭ ও ৯নং ওয়ার্ড এলাকা রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করে গতকাল দুপুর থেকে লকডাউন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্তগুলো হলো- করোনা শনাক্ত ব্যক্তির বাড়ি লকডাউন ও বাড়ির সকলকে হোম কোয়ান্টিনে থাকতে হবে। কারো বাড়িতে থাকার জায়গা না হলে হাসপাতালের আইসোলেশনে যেতে হবে। পরিবারের অন্য সদস্যদের টেস্ট করাতে হবে। আক্রান্ত এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান বাদে অন্য সকল দোকানপাট সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নো মাস্ক, নো শপিং। এর ব্যতয় ঘটলে দোকান সিলগালা করে দেয়া হবে। এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় ছোট ছোট যানবাহন, ইজিবাইক ও পাখিভ্যান চলাচল করতে পারবে না। গণপরিবহন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করবে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ যে স্বাস্থ্যবিধি দিয়েছে তা মেনে চললে গরুর হাট চলবে, না হলে বন্ধ করে দেয়া হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য আরও কঠোর হতে হবে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমিটির উপদেষ্টা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি বলেছেন, নভেল করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যার যতটুকু দায়িত্ব সেটুকু পালনে সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। সকলে আমরা সচেতন হই। করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, বাড়ির পাশের মানুষকে সচেতন হতে বলি। চুয়াডাঙ্গা শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে কেন? গ্রামে বাড়ছে না কেন? আমাদের নির্বুদ্ধিতার কারণেই শহরে করোনা পজেটিভের সংখ্যা বাড়ছে।’ তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ স্বাস্থ্যবিধির কথা বাজারের দোকানিদের বলেছেন? আপনারা সকলে আপনাদের দায়িত্ব পালন করেন? না পারলে প্রশাসনকে বলেন। প্রশাসন আছে। মানুষদের বাঁচানোর তাগিদে লাঠিবাজি করতে হলে, তাও করতে হবে। অনেকে ছোট্ট শিশুকে কোলে করে মার্কেটিং করছে। প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্বাস্থ্যবিভাগ মিলে কাজ করুন।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান বলেন, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা এলাকার ৩টি ওয়ার্ডে হঠাৎ করে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে ওইসব এলাকায় লকডাউন কার্যকর করা হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত লকডাউন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। লকডাউন এলাকায় বাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এসময়ে ওষুধ ও নিত্যাপ্রয়োজনীয় দোকান ব্যাতিত সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এক উপজেলার ইজিবাইক অন্য উপজেলায় যাতায়াত করতে পারবে না।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিজ বাড়িতে আইসোলশনে থাকার সুব্যবস্থা থাকলে সেখানে থাকতে পারবেন। পরিবারের অন্য সদস্যদেরও হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। যাদের বাড়িতে আলাদা থাকার ব্যবস্থা নেই তাদের হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হতে হবে। পজেটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসাদের দ্রুত সময়ে শনাক্ত করে করোনা পরীক্ষা করতে হবে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, লকডাউন ঘোষিত এলাকায় বাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। শপিংমল, কাপড়ের দোকান, কসমেটিকের দোকান বন্ধ রাখতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হলে ক্রেতাকে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক। মাস্ক না থাকলে পণ্য বিক্রি নেয়। দোকানদার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত ক্রেতার মাস্ক না থাকলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিলগালা ও জরিমানা করা হবে। যতোদিন করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে না আসবে ততোদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে। এছাড়া, উপজেলা থেকে উপজেলায় যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তিনি আরও বলেন, রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক, আলমসাধুগুলো এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় যাতায়াত করতে পারবে না। গণপরিবহন চলাচল করবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। পশুহাট চলবে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে। পশুহাটের প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত, সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসন আগের মতো কাজ করবে। সচেতন মানুষদের অবশ্যই করোনা প্রতিরোধে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, কোরবানির পশুহাটে কোরবানির গরু-ছাগল বাদে অন্য পশুহাটে আনা যাবে না। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিকুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার দুপুর থেকে পৌর এলাকার ৪, ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে লকডাউন শুরু হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রশাসনের ঘোষিত লকডাউন না মানলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার আরও বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে ১৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা লকডাউন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। করোনা পজেটিভ রোগীদের বাড়ি লকডাউন করে দেবেন। এই কমিটিকে কার্যকর করতে হবে। আক্রান্তদের নিয়মিত বাজার করে দিতে হবে। যারা গরীব অসহায় তাদের ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে। নো মাস্ক, নো শপিং। কেন তাদের কাছে মালামাল বিক্রি করছেন। মানুষকে কিছু মানতে হবে। ৪ মাস ধরে আমরা করছি না। নাগরিকদের মানতে হবে। আপনাদের সচেতন হতে হবে। সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। নাগরিক হিসেবে আপনারা মানুষের পাশে থাকবেন। গরুর ইজারাদার নিয়ম মেনে চললে হাট চলবে, না হলে হাট চলবে না। মাস্ক বাধ্যতামূলক। বেসিন ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। যতোদিন করোনা থাকবে বাজারে বয়স্ক মানুষ আসবে না।
কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ ইয়াহ্ ইয়া খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন, সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. শামীম কবির, পরিবার পরিকল্পনার অধিদফতরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার সাহা, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা, জেলা তথ্য অফিসার আমিনুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন আলী, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান, জেলা পরিষদের প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম শাহান, জেলা দোকান মালিক সমিতির সহ-সভাপতি হাজি শামসুজ্জামান খোকন ও আব্দুল কাদের জগলু এবং সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দারসহ কমিটির সদস্যরা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More