জিকের দুই পাম্প নষ্ট আট মাস : ডিজেল কিনে সেচ দিতে ফতুর চাষি

একটি পাম্পের পানি দুটি জেলায় বিভাজন : কৃষকের পানির চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বৃহৎ গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের দুটি পাম্প আট মাসের বেশি নষ্ট। চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহ পার হলেও দেখা নেই বৃষ্টির। খরায় পানি সংকটে বিপাকে পড়েছেন কুষ্টিয়া অঞ্চলের হাজারো বোরো চাষি। প্রতিদিন চড়া মূল্যের ডিজেল কিনে শ্যালো মেশিনে সেচ দিতে হচ্ছে। বোরো আবাদে সবচেয়ে বেশি পানি প্রয়োজন। এ জন্য সেচের টাকা জোগাড়েই অনেক চাষি ফতুর হতে বসেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তারা জিকের নষ্ট পাম্প মেরামতের পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সেচ পাম্পগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন জিকে প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (পাম্প) মিজানুর রহমান বলেন, তিনটি পাম্পের মধ্যে একটি চালু আছে। শুষ্ক মরসুমে পদ্মায় পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় একটি পাম্পে দিনে মাত্র ৬০০ কিউসেক পানি তোলা সম্ভব হচ্ছে। নষ্ট একটি পাম্প মেরামতে জাপানের ইবারা কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর জুলাইতে আমন মরসুম চলাকালে জিকের দুটি পাম্প নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকেই কুষ্টিয়াসহ প্রকল্পের আওতাধীন চার জেলায় পানি সঙ্কট দেখা দেয়। ইবারা কোম্পানি থেকে কেনা পাম্প দুটি দীর্ঘদিনেও সারাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে বোরো মরসুমে এসে পানি সঙ্কট চরমে পৌঁছেছে। রেশনিং করে পানি সরবরাহ করায় ঠিকমতো পানি পাচ্ছেন না কৃষকরা। জমি শুকিয়ে যাওয়ায় শ্যালো মেশিন থেকে পানি নিতে গিয়ে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার কৃষকরা এক ছটাক পানিও পাচ্ছেন না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিনটি পাম্প সচল থাকলে চার জেলায় পানি বিভাজন করা হয়। এখন একটি পাম্প সচল থাকায় শুধু কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় পানি দেয়া হচ্ছে। তাও আগে যেখানে ৯০ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধা পেত, এখন তা কমে হয়েছে ১২ হাজার হেক্টর। এই পানি সরবরাহও কঠিন হয়ে পড়েছে।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বলেন, জিকের পাম্প নষ্ট থাকায় কৃষকের পানির চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। সদর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী চার জেলার কৃষকরা জিকের ওপর নির্ভরশীল। বিকল্প হিসেবে ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিনের পানি ব্যবহার করতে গিয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে তাদের।

কুষ্টিয়ায় চলতি বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার ১৩০ হেক্টর ধরা হয়। আবাদ হয়েছে ৩৬ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে। পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরায়ও বড় পরিসরে বোরো আবাদ হচ্ছে। এ চারটি জেলার ১৩টি উপজেলায় জিকের পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে।

সদর উপজেলার পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামের কৃষক খাইরুল ইসলাম ২৪ কাঠা জমিতে ধান আবাদ করেছেন। প্রতিদিন জমিতে পানি দিতে এক লিটার ডিজেল প্রয়োজন। জমি প্রস্তুতেও লেগেছে সাত লিটার। ধান রোপণের পর বৃষ্টি না হওয়ায় এখন প্রতিদিনই পানি দিতে হচ্ছে। খাইরুলের ভাষ্যে, রোপণ, পরিচর্যা থেকে ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত ৭০ লিটারের বেশি ডিজেল বাবদ ব্যয় হবে ৮ হাজার টাকা। ফিলিং স্টেশনে ১০৯ টাকা লিটার হলেও গ্রাম থেকে কিনতে ৫-৬ টাকা বেশি দিতে হয়। এভাবে চাষ করে যে ধান পাওয়া যাবে, তা বেঁচে খরচের টাকাও উঠবে কী-না সন্দেহ রয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, জিকের একটি খাল বেশ কয়েক বছর আগে কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা হলেও কৃষকরা তার কোনো সুবিধায় পাননি। এতে সরকারের অর্থ অপচয় হয়েছে। পানি না পাওয়ায় ধানের উৎপাদনও কমার আশঙ্কা করছেন তারা।

কৃষক চাঁদ মিয়া জানান, জিকের ক্যানেল থাকলেও, তাতে পানি আসে না। ফলে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত পাম্পই ভরসা। এতে জিকের পানি নিতে বছরে যেখানে বিঘায় মাত্র ২০০ টাকা লাগে, সেখানে দিতে হচ্ছে ৭-৮ হাজার টাকা। অনেকে টাকার অভাবে ঠিকমতো সেচই দিচ্ছেন না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘একটি পাম্পের পানি দুটি জেলায় বিভাজন করা হচ্ছে। কুষ্টিয়ার আওতাধীন এলাকায় দিতে লাগছে ৭ থেকে ১০ দিন। এর পর এ অঞ্চল বন্ধ রেখে চুয়াডাঙ্গায় দেয়া হচ্ছে। আপাতত ঝিনাইদহ ও মাগুরায় কোনো পানি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হায়াত মাহমুদ বলেন, ‘জিকের পানি কুষ্টিয়ার চাষিরা পাচ্ছেন। তাছাড়া বিএডিসি ও সোলার প্যানেল উৎস থেকেও তারা পানি নিচ্ছেন। বাকিরা ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন থেকে সেচ নিচ্ছেন। কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হয় না।’

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More