দীর্ঘ ১১ মাস অপেক্ষার পর দেশজুড়ে গণ-টিকাদান শুরু আজ

চুয়াডাঙ্গায় এক হাজার ৮১৬জন মেহেরপুরে ১২ শতাধিক ও সারাদেশে ৩ লাখ ২৮ হাজার ব্যক্তির নিবন্ধন
স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘ ১১ মাস অপেক্ষার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনার টিকাদান শুরু হচ্ছে আজ রোববার। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশের এক হাজার ১৫টি কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলবে এ কর্মসূচি। এ লক্ষ্যে আগে থেকে নিবন্ধন করা ৩ লাখ ২৮ হাজার ১৩ জনের তালিকা গতকাল শনিবার বিকেলে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে চুয়াডাঙ্গায় এক হাজার ৮১৬ জন ও মেহেরপুরে ১২ শতাধিক ব্যক্তি নিবন্ধন করেছেন। চুয়াডাঙ্গায় সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান কোভিড-১৯ টিকা দেয়ার মধ্যদিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে। সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। গতকাল শনিবার পর্যন্ত জেলায় এক হাজার ৮১৬ জন মানুষ নিবন্ধন করেছেন। প্রথম দিন দেয়া হবে ৪২০ জনকে টিকা দেয়ার কথা রয়েছে।
অপরদিকে, মেহেরপুরে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত ভ্যাকসিন গ্রহণে আগ্রহী এক হাজার ২০৯ জনের ওপরে নাম রেজিস্ট্রেশন হয়েছে বলে সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দীন নিশ্চিত করেছেন। বিকেল পর্যন্ত আরও কতোজন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে তা সার্ভারে সমস্যার কারণে তথ্য দিতে পারেনি সিভিল সার্জন। এরই মধ্যে নিবন্ধনকারীদের মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তাও দেয়া হয়েছে। প্রতি টিকায় ০ দশমিক ০৫ মিলিলিটার পরিমাণ ভ্যাকসিন থাকবে।
কার্যক্রমের প্রথম দিনই টিকা নেবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এছাড়া জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য, সচিব ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ টিকা নেবেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রায় সব ধরনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন্ হয়েছে। টিকা দিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের ২ হাজার ৪০২টি দল নিয়োজিত থাকবেন। আর কেউ নিবন্ধন না করে থাকলেও তিনি টিকা নিতে পারবেন। কেননা কেন্দ্রেই নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকায় ৩১ হাসপাতাল ও ২৫ কেন্দ্রসহ মোট ৫৬টি স্থানে টিকা দেয়া হবে। সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের ২০৬টি দল কাজ করবে। ঢাকার বাইরে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলিয়ে ৯৫৯ স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব জায়গায় ২ হাজার ১৯৬টি দল কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। দুজন স্বাস্থ্যকর্মী এবং দুজন স্বেচ্ছাসেবক মিলিয়ে প্রতি টিমে চারজন সদস্য থাকবেন। প্রত্যেক দলের স্বাস্থ্যকর্মী সর্বোচ্চ ১৫০ জনকে টিকা প্রয়োগ করতে পারবেন। এ হিসাবে প্রথম দিন প্রায় ৩ লাখ ২৯ হাজার ৪০০ জন মানুষকে টিকা দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক রাজধানীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টিকা নেবেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে।
চুয়াডাঙ্গায় আজ রোববার সকাল থেকে শুরু হবে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি। আজ সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ওই কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। প্রথমে জেলার সিভিল সার্জনকেই দেয়া হবে কোভিড-১৯ এর টিকা। সুরক্ষা অ্যাপসে নিবন্ধন করা ব্যক্তিদেরই কেবল ওই টিকা দেয়া হবে। ইতোমধ্যে টিকাদানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ। আজ প্রথম দিন ৪২০ জনকে দেয়া হবে ভারত সরকারের উপহার করোনাভাইরাসের টিকা।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ জানুয়ারি সকালে ৩৬ হাজার ডোজ টিকা চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে পৌঁছায়। ইতিমধ্যে জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সগুলোতে পাঠানো হয়েছে ওই টিকা। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ১০ টি কেন্দ্রের মধ্যে সদর হাসপাতালে ৮টি কেন্দ্র, বিজিবি হাসপাতাল ও পুলিশ হাসপাতালে ১টি করে কেন্দ্রে এবং উপজেলা স্বাস্ব্য কমপ্লে¬ক্সগুলোতে ৩টি করে কেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচি চলবে। এসব কেন্দ্রে করোনাভাইরাসের টিকাদান নিয়ে কাজ করবে স্বাস্থ্য বিভাগের ৫০টি দল। টিকাদান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া টিকাদানকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি দলে ২জন করে টিকাদানকর্মী ও ৪ জন স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। প্রথম দিন সদর উপজেলার ১০টি কেন্দ্রে ৩৭০ জন, দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্ব্য কমপে¬ক্সের ৩টি কেন্দ্রে ২০জন, আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের ৩টি কেন্দ্রে ২০ জন এবং জীবননগর উপজেলার ৩টি কেন্দ্রে ১৯ জনকে দেয়া হবে কোভিড-১৯ এর টিকা। টিকাদান কর্মসূচি সকাল ৮টায় শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। প্রতিদিনই অনেক মানুষ সুরক্ষা অ্যাপসে নিবন্ধন করছে। তবে গতকাল পর্যন্ত জেলার চার উপজেলার ১ হাজার ৮১৬ জন মানুষ নিবন্ধন করেছেন। এরমধ্যে সদর উপজেলার ১ হাজার ৬ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ১৯৪ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৪০০ জন এবং জীবননগর উপজেলার ২১৬ জন নিবন্ধনের আওতায় এসেছেন।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান জানান, প্রথম চালানে চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে করোনাভাইরাসের ৩ হাজার ৬০০ ভায়াল টিকা হস্তান্তর করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড। এক একটি ভায়ালে ১০টি করে টিকা রয়েছে। সে হিসেবে ৩৬ হাজার টিকা পাওয়া গেছে। এই টিকা ৩৬ হাজার জনকে প্রথমবারের মতো দেয়া হবে। ইতিমধ্যে জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সগুলোতে পাঠানো হয়েছে ওই টিকা। জেলার চার উপজেলাতেই টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, করোনাভাইরাসের টিকাদানের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী, জনসেবায় নিয়োজিত কিছু বেসরকারি দফতর ও বয়স্ক মানুষসহ ৭ হাজার জনের তালিকা স্বাস্থ্য বিভাগে পাঠানো হয়েছে। তাদের প্রত্যেককেই সুরক্ষা অ্যাপসে নিবন্ধন করে টিকা নিতে হবে। জেলার অন্যান্য সাধারণ মানুষও সুরক্ষা অ্যাপসে নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারবে।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর উপজেলায় কোভিড-১৯ মহামারী করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের প্রথম চালান পৌঁচেছে। প্রথম চালানের ৩ হাজার ডোজ গতকাল শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে অ্য্যাম্বুলেন্সযোগে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। আজ রোববার হতে এ উপজেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা ভাইরাসের টিকা প্রদান করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দুপুরে করোনা ভাইরাসের প্রথম চালানটি পৌঁছুলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সেলিমা আখতার ভ্যাকসিনের চালানটি গ্রহণ করেন। উপজেলা পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদা খাতুন, হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. হেলেনা আক্তার নিপা, ডা. সুমন প্রমূখসহ হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মী ও ইউপিআই বিভাগের কর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, প্রাপ্ত টিকা হতে আজ রোববার নিবন্ধিত চিকিৎসক, নার্সদের ও স্বাস্থ্য সহকারীদের টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের টিকা প্রদান উদ্বোধন করা হবে। জীবননগর হাসপাতালের ৩টি বুথে কোভিড-১৯ টিকা দেয়া হবে বলে জানা যায়।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, সারাদেশের মতো আজ রোববার মেহেরপুর জেলাতেও করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে। ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন গ্রহণে আগ্রহী ১ হাজার ২০০ জনের ওপরে নাম রেজিস্ট্রেশন হয়েছে বলে সিভিল সার্জন নিশ্চিত করেছেন। প্রথম ধাপে প্রয়োগের জন্য মেহেরপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এসে পৌঁছেছে ১২ হাজার ডোজ করোনা টিকা।
সিভিল সার্জন কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, অন লাইনে রেজিস্ট্রেশন চলছে। গতকাল শনিবার সকালের দিকে সদরে ৭৮৭ জন, গাংনী উপজেলায় ৩১৩ জন ও মুজিবনগর উপজেলায় ১০৯ জন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। তবে বিকেল পর্যন্ত আরও কতোজন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে তা সার্ভারে সমস্যার কারণে তথ্য দিতে পারেননি সিভিল সার্জন।
এদিকে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য নানা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সকাল ১০টায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনলাইনে উদ্বোধন করবেন। এর পরে দুপুর ১২টায় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন ভার্চুয়াল উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে সদর হাসপাতালে এ কার্যক্রম শুরু হবে।
উদ্বোধনের সময় নিজে টিকা নিবেন উল্লেখ করে মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দীন বলেন, জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টিকা গ্রহণ করবেন। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একযোগে এ কার্যক্রম শুরু করা হবে।
জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম রিয়াজুল আলম বলেন, গাংনী হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) আব্দুর রশিদ এ উপজেলায় প্রথম ব্যক্তি হিসেবে টিকা গ্রহণ করবেন। এরপর রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী টিকা প্রয়োগ করা হবে। মুজিবনগর উপজেলাতেও একইভাবে দুপুর ১২টার দিকে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশনের ক্রমানুযায়ী টিকা প্রদান করা হবে।
এদিকে সাধারণ মানুষের মাঝে টিকা গ্রহণ নিয়ে নানা সংশয় রয়েছে। টিকা প্রদান বিষয়ে নেতিবাচক কোন প্রভাব যাতে না পড়ে সেলক্ষ্যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন। প্রথম দিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, অনুমোদিত বেসকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের জনবল, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গনা, সম্মুখ সারির আইন শৃংখলা বাহিনী, সামরিক বাহিনী, রাষ্ট্র পরিচালনায় নিমিত্ত অপরিহার্য কার্যালয়, সম্মুখ সারির গণমাধ্যমকর্মী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিবর্গ এবং সম্মুখ সারিতে কাজ করা লোকজনকে করোনা ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More