আলমডাঙ্গা কুবীর ঠাকুরের ঐতিহাসিক গঙ্গাস্থান ধর্ম-বর্ণ পূর্ণাথীদের ভীড়ে সরগম

জামজামি প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গার ঘোষবিলায় মরমী সাধক ও তান্ত্রিকগুরু কুবীর ঠাকুর স্মরণে কুমারনদের তীরবর্তী গঙ্গাস্থানে বর্ণাঢ্য স্মরণোৎসব ও হিন্দু স¤প্রদায়ের চৈতি বারুনী মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় ৩শ বছরের ঐতিহাসিক এ স্মরণোসবে প্রতি বছরের ন্যায় গতকাল ৩০ মার্চ বুধবার ভোর হতেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা প‚র্ণার্থীদের পদভারে কুমারনদের তীরবর্তী এ তীর্থ গঙ্গাস্থান হয় ওঠে সরগম। বাৎসরিক এ দিনটি এলাকার মানুষের কাছে উৎসবমুখর দিন। এদিনে মিষ্টি কেনা মিষ্টি খাবার ধুম পড়ে যায়। রোগ-শোক বিপদগ্রস্ত মানুষ রোগমুক্তি শেষে এ গঙ্গাস্থানে ছুটে আসেন তাদের বিশ্বাসের দায়মুক্তি হতে। এ বিশ্বাসে মানুষের কতটা রোগমুক্তি কিম্বা বিপদমুক্তি হয়। এ ব্যাপারে যুক্তি ‘বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদূর’। কথিত আছে ইংরেজি ১৮৮৭ সাল বঙ্গাব্দ ১১৯৪ আলমডাঙ্গা থানার জামজামি ইউনিয়নের ঘোষবিলা রঘুনাথপুর গ্রামে কুবীর ঠাকুরের জন্ম হয়। পিতা ছিলেন মুসলমান মাতা যোগিনী সাধিকা। আকস্মিক কুবীরের পিতা গর্ভবতী স্ত্রীকে ছেড়ে হন নিরুদ্দেশ। গর্ভের সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েন যোগিনী সাধিকা। যথাসময়ে ভুমিষ্ঠ হয় এক ফুটফুটে পুত্রশিশু। মা নাম দেন কুবীর। এলাকাবাসী কুবীরকে বাপ পরিচয়হীন জারজ বলে আখ্যায়িত করলে মাতা যোগিনী ছেলেকে কোলে নিয়েই পাশ্ববর্তী মধুপুর গ্রামে আশ্রয় নেন। শিশুকাল থেকেই কুবীর ছিলেন উদাসীন ও ধার্মিক। গুরুর কাছে দীক্ষা নেবার আশায় মাতা যোগিনী তাকে প্রেরণ করলে গুরু তাকে শিষ্য বানাতে চাননি এ ভেবে যে সে পিতৃ পরিচয়হীন। পিছু ছাড়তে নারাজ কুবীর। বাধ্য হয়ে গুরু শেষ পর্যন্ত শিষ্য করে নেন কুবীরকে। এ সময় কবীবের নাম দেন কুবীর ঠাকুর বা কুবীর গোসাই। জনশ্রæতি আছে একদিন কুবীরের মাতা গঙ্গাস্নানে যেতে ইচ্ছে প্রকাশ করলে কুবীর তা খেয়ালবশত আমলে না নিয়ে কর্মে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। মা এতে কুবীরের উপর অসন্তুষ্ট হন। এর পরের বছর মা পুণরায় গঙ্গা¯œানের ইচ্ছে প্রকাশ করেন। কুবীর সম্মতি দেন নিয়ে যাবে। সেই বে-খেয়াল আনমনা কুবীর। একাধারে তাঁত চালায় আর মনে মনে গান গায়। এতে মায়ের রাগ হয় ছেলে কুবীবের ওপর। সকলেই যাত্রা করেছে গঙ্গা¯œানের প‚র্ণার্থী হয়ে। মা যোগিনী মনে খুব কষ্ট পান। এতে হঠাৎ কুবীর মাকে বলে তৈরি হও গঙ্গা¯œানে যাবো। মা যোগিনীতো অবাক! একি গঙ্গা কি এখানে যে বললেই চলে যাওয়া যায়? কুবীর মাকে নিয়ে ঘোষবিলার কুমারনদের তীরে এসে দাঁড়ান। কুবীর এবার বলেন, মা তোমাকে দেখতে চান, দর্শন দাও। কথা মতোই কাজ; স্বরুপে গঙ্গা আর্বিভ‚ত হলে কুবীর মাকে বলে যাও স্নান কর। মা যোগিনী স্নানে নেমে ডুব দিয়ে উঠতেই যুবতী হয়ে ওঠেন। বিপত্তি বাঁধে মা-ছেলে বাড়ি ফেরার পথে হৈ চৈ ও কানাঘুষা শুরু হয়। অনেকে বলতে থাকেন কুবীর তার বৃদ্ধা মাকে সাথে করে নিয়ে হত্যা করে অন্য যুবতীকে ভাগিয়ে এনেছে। কুবীর গ্রামবাসীকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে মাকে সাথে নিয়ে পুনরায় এ ঘোষবিলার কুমারনদের পাড়ে নিয়ে আসে। মাকে কুমার নদীর জলে নেমে ডুব দিতে বলে। মা যোগিনী জলে নেমে ডুব দেয়। নেয়ে উঠে সেই পূর্বের ন্যায় বৃদ্ধা হয়ে যান। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে এ কথা। উৎসুক নারী-পুরুষের ভীড় জমে যায়। এ থেকেই কুমারনদকে গঙ্গা ভেবেই দরিদ্র পূর্ণার্থীরা গঙ্গাস্থান বলে বিশ্বাস পোষণ করে থাকে। সেই থেকেই এখানে হয়ে আসছে গঙ্গাস্থানের বাৎসরিক দুটি ঐতিহাসিক মেলা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More