চুয়াডাঙ্গায় বিনা প্রয়োজনে বাইরে ঘোরাঘুরি : একজনের জেল ৮৪ জনকে ৭৩ হাজার টাকা জরিমানা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করছে প্রশাসন। কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। কিন্তু বিনা প্রয়োজনে রাস্তা ও বাজারে ঘুরছে মানুষ। মানছে না স্বাস্থ্যবিধি, পরছে না মাস্ক। প্রতিদিনই সরকারি বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় ১৫টি পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি অমান্য ও বিধিনিষেধ না মেনে বাইরে বের হওয়ায় জেলায় ৭৯টি মামলায় ৮৪ জনকে ৭৩ হাজার ৫০ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া ১ জনকে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। সকালে শহরের শহীদ হাসান চত্বর, সদর উপজেলার জাফরপুর, ডিঙ্গেদহ বাজার এলাকায় অভিযান চালান জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন। এ সময় ৬টি মামলায় ৬ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করেন তিনি। একই স্থানে পৃথক অভিযান চালান জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম। অভিযানে ৪টি মামলায় ৩ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করেন তিনি।
এদিকে, বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার এলাকা, সদর উপজেলার ভালাইপুর মোড়, আলুকদিয়া ও দৌলাতদিয়াড়ে অভিযান চালান সদর উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে স্বাস্থ্যবিধি না মানার অপরাধে দ-বিধি ১৮৬০ এর ১৮৮ ধারায় ৭টি মামলায় ৭ জনকে ১ হাজার ৭৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাজে সহযোগিতা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সার্টিফিকেট সহকারী সোবহান আলী ও সদর থানা পুলিশ।
অপরদিকে, দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে ৬টি মামলায় বিভিন্ন অপরাধে ১৮ জনকে ১২ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া ১ জনকে ১২ ঘণ্টার আটকাদেশ, ৩ জনকে ৮ ঘন্টার আটকাদেশ ও ৬ জনকে ৪ ঘন্টার আটকাদেশ দেয়া হয়। ১৬ জনকে ছেড়ে দেয়া হয় পিতা-মাতার জিম্মায়। একই সময় দর্শনার ঈশ্বরচন্দ্রপুর তিন রাস্তার মোড়ে গাজা সেবন করায় একজনকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ৩৬(৫) ধারানুসারে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদ- দেয়া হয়। অভিযান পরিচালনা করেন দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুদীপ্ত কুমার সিংহ। অভিযানে সহযোগিতা করে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ অমান্য করা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানায় আলমডাঙ্গা শহরের ৫ জনকে ২ হাজার ৪শ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নূর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ জরিমানা করেন। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ অমান্য করা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঘরের বাইরে বের হওয়ার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেন। শহরের আলিফ উদ্দিন মোড়, চারতলার মোড়, হাউসপুর আনন্দধাম ব্রিজ, লাল ব্রিজ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বাদেমাজুর মৃত জাফর আলীর ছেলে সানোয়ার হোসেনকে ৫শ টাকা, আনন্দধামের আলম হোসেনের ছেলে মাসুদ আলীকে ৬শ টাকা, রাধিকাগঞ্জ গ্রামের ওয়াদুদ আলীর ছেলে নাসির উদ্দিনকে ৫শ টাকা, কালিদাসপুর গ্রামের মহাবুল আলীর ছেলে আফিসকে ৩শ টাকা, হারদী গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে রেজাউলকে ৫শ টাকা জরিমানা করেন। এ সময় আলমডাঙ্গা থানার এসআই সুফল কুমার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে উপস্থিত ছিলেন।
হাটবোয়ালিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ায় অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হাটবোয়ালিয়া বাজারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। হাটবোয়ালিয়া বাজারের নিউ কালেকশন গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী দুলাল মাহমুদকে ২ হাজার টাকা, রাজা মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শেরেকুল হোসেনকে ৩ হাজার টাকা, আমিনা ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী আশরাফুজ্জামানকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই বাজারের খোলা বাজারে কাপড় ব্যবসার কারণে এক হাজার টাকা, মোটরসাইকেলে অযথা ঘোরাফেরার জন্য তিন জনকে ৫শত করে ১৫শত টাকা, মোটরসাইকেলের চালক মিথ্যা কথা বলার অভিযোগে এবং কথার ভুল ত্রুটির কারণে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও ৫ যুবক অযথা ঘোরাফেরার অভিযোগে ২শত টাকা করে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মোট ১০ হাজার ৫শত টাকা জরিমানা করা হয় হাটবোয়ালিয়া বাজারে। অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজ হোসেন, নজরুল ইসলাম ও রিফাত জাহান। অভিযানে সহযোগিতা করে হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্প পুলিশ, জেলা পুলিশের একটি দল ও আনসার সদস্যরা।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, করোনাভাইরাস রোধে দেশব্যাপী আরোপিত লকডাউন অমান্য করায় লকডাউনের দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার জীবননগর উপজেলায় ২১টি মামলায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার বেলা ১২টার দিকে জীবননগর উপজেলার হাসাদাহ বাজার, মনোহরপুর বাসস্ট্যান্ড, সন্তোষপুর বাসস্ট্যান্ড এবং আন্দুলবাড়িয়া বাজারে ভ্রাম্যমাণ পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম। এ সময় কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ অমান্য করে অযথা মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় ঘোরাঘুরিসহ বিভিন্ন অপরাধে ১২ জনকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি। একই সময় জীবননগর পৌর শহরে পৃথক আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মহিউদ্দীন। এ সময় অযথা মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় ঘোরাঘুরিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৯ জনকে ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। অভিযানে সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। এছাড়া জীবননগরে লকডাউনের প্রথম দুইদিনে মোট ৩৭টি মামলায় ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More