জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করতে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস পালিত

স্টাফ রিপোর্টার: জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করি, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করি’ এ সেøাগানকে ধারণ করে জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস-২০২৩ উদযাপন করা হয়েছে। দিনটি উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে র‌্যালি ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনাসভায় বক্তারা বলেন, মানুষের জন্ম একবার, মৃত্যু একবার। তাই জন্ম-মৃত্যু সনদ থাকবে একটি করে। দেশের সব নাগরিক জন্ম ও মৃত্যু সনদের আওতায় এলে এ দেশের জনসংখ্যার পরিসংখ্যান হিসাব করতে সহজ হবে এবং ভোটার তালিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। বক্তারা বলেন, দেশ তথ্য-প্রযুক্তি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং খাদ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে পথ নকশা তৈরি করেছেন। সে অনুযায়ী দেশ এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায়। ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে নাগরিক অধিকার নিশ্চিতের জন্যই জন্ম ও মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করা সবার জন্য জরুরি। বক্তারা আর বলেন, রাষ্ট্রে দ্রুত নাগরিক সেবা প্রদান এবং গ্রহণের জন্য জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আবশ্যক। সকলের নিবন্ধন সম্পন্ন হলে তাৎক্ষণিক যেকোনো সেবা প্রদান সহজ হবে। তবে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করতে এসে যেনো কেউ হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও সবাইকে খেয়াল রাখার অনুরোধ করা হয়। বক্তারা আরও বলেন, জন্ম নিবন্ধন শিশুর অধিকার। জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে বিনামূল্যে জন্মনিবন্ধন করতে হবে। জন্ম নিবন্ধনে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যারা নিবন্ধন করে তাদের সহায়তা করতে হবে। একের অধিক জন্ম সনদ আইনত অবৈধ। জন্মনিবন্ধন ব্যক্তি লাভের বিষয় নয়। দেশের বাজেট তৈরীতে পরিকল্পনা গ্রহনে বাধাগ্রস্থ হয়। মৃত্যু নিবন্ধন করাও জরুরি। মৃত্যু সনদ তৈরিতে সতর্ককতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রতিটি নাগরিকের যে দায়িত্বগুলো রয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। সার্ভারের সমস্যাগুলো শিগগিরই কেটে যাবে। আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। এ কাজটি করার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন আছে। ১১ ধরণের তথ্য দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, সচিব, গ্রাম পুলিশ, কাউন্সিলর নিবন্ধকের কাছে পাঠাবেন। ক্লিনিক ও মাতৃসদন তথ্য দিতে পারেন। জেলখানায় কেউ জন্ম নিলে তথ্য দিতে পারেন। যারা পরিত্যক্ত শিশু, তাদের তথ্য কে দেবে? পাবলিক প্লেসে শিশু ও মারা গেলে থানার ওসি জানাবেন নিবন্ধকের কাছে। আমরা সকলেই আইনগুলো জানবো বা জানাতে হবে। ইউডিসি ডিজিটাল সম্প্রসারণ প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। তথ্য যদি সঠিক থাকে তাহলে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে পারবেন।
চুয়াডাঙ্গায় জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস উদযাপন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বেলা ১০টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে কোর্টমোড় ঘুরে একই স্থানে এসে শেষ হয়। এরপর চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক শারমিন আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সভায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মনজু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক এবং সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) শামীম ভূইয়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার শাহিদুল আলমের সঞ্চালনায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন কারী কবির আহমেদ ও গীতা পাঠ করেন সুনীল মল্লিক। অন্যান্যের মধ্যে সাংবাদিক সমিতিরি সাবেক সভাপতি অ্যাড. রফিকুল ইসলাম, বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলী হোসেন, শংকরচন্দ্র ইউপি সচিব মাসুদুর রহমান, বেগমপুর ইউপি সদস্য মো. কায়েস ও পদ্মবিলা ইউনিয়ন পরিষদের তফাদার বিপুল দাস বক্তব্য রাখেন। এসময় বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ, সচিববৃন্দ, ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যেক্তা, হিসাব সহকারী, জিও-এনজিও কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস উপলক্ষে র‌্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের হয়। র‌্যালিটি চৌরাস্তা মোড় প্রদক্ষিণ করে আবার উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। র‌্যালি শেষে উপজেলা পরিষদ সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকসানা মিতা’র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল কুমার দাস, দামুড়হুদা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিদা খাতুন, দামুড়হুদা মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শেখ মাহবুবুর রহমান, দামুড়হুদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী, কার্পাসডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিম, কুড়–লগাছি ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন, নতিপোতা ইউপি চেয়ারম্যান ইয়ামিন আলী, হাউলী ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন প্রমুখ।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা’র জীবননগরে জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস উদযাপিত হয়েছে। দিবসটি উদযাপনে উপজেলা প্রশাসন র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসিনা মমতাজের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান হাজি হাফিজুর রহমান হাফিজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম ইশা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা সুলতানা লাকী, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তিথি মিত্র। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার জালাল উদ্দীন, আন্দুলবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান মীর্জা হাকিবুর রহমান লিটন, সীমান্ত ইউপি চেয়ারম্যান ইশাবুল ইসলাম মিল্টন, মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খাঁন, জীবননগর সাংবাদিক সমিতির সভাপতি জি. এ জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বাবু,সহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিক, সূধী ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠানে জন্ম ও মৃত্যু শতভাগ নিবন্ধিত হওয়ায় মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিব লিয়াকত আলীকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানটি সার্বিক সঞ্চালনায় ছিলেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার সৈয়দ আব্দুল জব্বার।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, সারা দেশের ন্যায় মেহেরপুরে র‌্যালি ও আলোচনা সভার মধ্যদিয়ে জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস উদযাপন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে এ আলোচনা সভা ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. শামীম হোসেনের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর-২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সুপার ডাঃ জমির মোঃ হাসিবুস সাত্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল করীম, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ ইয়ারুল ইসলাম, পিরোজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস ছামাদ বাবলু বিশ্বাস, মেহেরপুর পৌরসভার কাউন্সিলর আল মামুন, পিরোজপুর ইউনিয়নের সচিব আজিমউদ্দিন, বুড়িপোতা ইউনিয়নের সদস্য আলমগীর হোসেন লাল্টু, পিরোজপুর ইউনিয়নের সদস্য ইস্কান্দার মোহাম্মদ বিপ্লব, আমঝুপি ইউনিয়নের হিসাব সহকারি রাজিয়া সুলতানা, গ্রাম পুলিশ সুলতান আহমদ প্রমুখ। এদিকে এর আগে জাতীয় জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন দিবস-২০২৩ উপলক্ষে একটি র্যা লি বের করা হয়। স্হানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ শামীম হোসেনের নেতৃত্ব র‌্যালিটি পাবলিক লাইব্রেরি চত্বর থেকে শুরু করে বাদ্যের তালে তালে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালিতে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল করিম, মেহেরপুর-২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সুপার ডা. জমির মো. হাসিবুস সাত্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল করীম, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম, পিরোজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস, মেহেরপুর ইসলামিক ফাউ-েশনের উপ-পরিচালক এজেএম সিরাজুম মনির, বাড়াদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম, শ্যামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান, আমদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রওশন আলী টোকন, বুড়িপোতা ইউনিয়নের সচিব সানোয়ার হোসেন সানু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভা করেছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার সকালে এ উপলক্ষ্যে একটি র‌্যালি উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর থেকে বের হয়ে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। পরে উপজেলা পরিষদ হলরুমে আলোচনা সভা করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করি, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করি’। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া সিদ্দিকা সেতুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথী ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ খালেক। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সচিব, মেম্বর ও গ্রামপুলিশ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা জন্ম মৃত্যুর নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন এবং নানা জটিলতা নিরসনে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More