বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শুরু আজ

আফগানিস্তানের বিপক্ষে মূল লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত টাইগাররা
মাথাভাঙ্গা মনিটর: ১৩তম ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর দেশ ছেড়ে ভারতের গুয়াহাটিতে পা রাখেন সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিমরা। সেখানে শ্রীলংকা ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছেন তারা। এবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে মূল লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত টাইগাররা। তবে বিশ্বকাপের আগ মুর্হূতে মাঠ ও মাঠের বাইরের বিভিন্ন ঘটনায় বেশ চাপে পড়ে যায় তারা। তবে ভারতে পৌঁছানোর পর আগের সব বিতর্ক পেছনে ফেলে সাকিব-শান্তরা মাঠে নামতে পুরোপুরি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। তাইতো এবার ব্যাট-বল হাতে টাইগারদের জ্বলে ওঠার সময়। একই সঙ্গে জয় দিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরুর লক্ষ্য নিয়ে আজ আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ধর্মশালায় বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায় শুরু হবে এই ম্যাচটি। বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যকার ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি ও টি স্পোর্টস। ভারতের দিল্লিতে দিনের আরেক ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলবে এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলংকা। ধর্মশালা নাকি ছবির মতো সুন্দর। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ দলে যে গোল তৈরি হয়েছিল সেটা এই সুন্দরের ছোঁয়ার মিলিয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আর মিডিয়া থেকে কিছুটা দূরে সরে থাকা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে বিশ্বকাপ শুরু করার চনমনে উত্তেজনা চলছে। হিমাচলের শীতের আবায়নে থাকা সাকিব আল হাসানের দল ২২০০ কিলোমিটর দূরের বাংলাদেশের উন্মাদোনার উষ্ণতা টের পাচ্ছে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বাংলাদেশের মানুষ অনেকটা ঘর কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। বাইরের উচ্ছ্বাস টের পাওয়ার উপায় নেই। টিভি আর মোবাইলে দূর থেকে সমর্থন দিয়ে দলকে উজ্জীবিত করে যাচ্ছে। অতিচেনা প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান সম্পর্কে খুব ভালো জানাও রয়েছে সাকিবদের। নিজেদের সপ্তম ওয়ানডে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা নিয়ে বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় বিশ্বকাপ যাত্রায় নামবে টাইগাররা। অধিনায়ক সাকিব বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে থেকে এখন পর্যন্ত সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হননি। যদিও একটি টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিয়ে আলোচনায় এসেছেন। সার্বজনীন মিডিয়ার সামনে নিজের পরিকল্পনা জানানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। প্রথম ম্যাচে নামার আগের দিনেও সংবাদ মাধ্যমের সামনে আসেন প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। বাংলাদেশের লক্ষ্য নিয়ে কোচ জানান, ‘ভালো বিশ্বকাপ কাটানো, ম্যাচ জেতা আমার লক্ষ্য। আমাদের লক্ষ্য সেমিফাইনালে খেলা। এটা স্বপ্নও হতে পারে, লক্ষ্যও হতে পারে। এতে কোনো ফারাক পড়ে না।’ বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হয় গুয়াহাটি থেকে প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে। দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের একটিও খেলতে পারেননি সাকিব। অনুশীলনে পায়ে ব্যথা পেয়েছিলেন। কিন্তু শঙ্কা কেটেছে আগেই। পুরো ফিট সাকিব সামনে থেকেই দেবেন নেতৃত্ব। বিশ্বকাপে এখনো আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারেনি টাইগাররা। ২০১৯ বিশ্বকাপে অলরাউন্ডার পারফরম্যান্সে আফগানদের প্রায় একাই হারিয়ে দিয়েছিলেন সাকিব। পাঁচ উইকেট তুলে নেওয়ার সঙ্গে করেছিলেন মহামূলবান ৫১ রান। ৮৩ রান করে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন মুশফিকুর রহিম দু’জনই আছেন এবারও বাংলাদেশে দলে।
যদিও কিছুদিন আগেই ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২-১ এ সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। তবে এশিয়া কাপে আফগানদের বিপক্ষে দাপুটে জয় তুলে নিয়েছিল টাইগাররা। সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে দু’দলের মুখোমুখিতে বাংলাদেশের জয় দুই ম্যাচে, আফগানিস্তান জিতেছে তিনটিতে। বিশ্বকাপে নামার আগে প্রস্তুতি ম্যাচেও দু’জনের অবস্থা প্রায় একই। দাপটের সঙ্গে তারা শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে। বড় টুর্নামেন্টে আফগানদের হারানোর অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখছে।
আফগানিস্তানের পেসার ফজল হক ফারুকীর বলে বারবার আউট হওয়ার ঘটনাই তামিমের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শুরুতে ফজল হক ফারুকীকে যেন না খেলতে হয় এজন্য তামিমকে নিচের দিকে ব্যাটিং করার কথা বলেন বিসিবি সভাপতি। সেই ঘটনা নিয়ে শেষ পর্যন্ত দল থেকেও বাদ পড়তে হয় এই বাঁ-হাতি ওপেনারকে। দলে সাকিব-তামিম দ্বন্দ্বের প্রভাব এখন নেই। তামিমের জায়গায় দলে নেওয়া তানজিদ হাসান প্রস্তুতি দুই ম্যাচে ভালো পারফর্ম করেছেন। টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনায় অন্যকিছু। ধর্মশালায় প্রথমে ব্যাট করলে এক ধরনের ওপেনিং জুটি এবং পরে ব্যাট করলে আরেক ধরনের জুটি নামানোর পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনায় মিরাজও রয়েছেন। যিনি কিছুদিন বাংলাদেশের সব সমস্যার আসান হয়ে দাঁড়িয়েছেন। একাদশে মাহমুদউল্লাহর সুযোগ আসতে পারে অতীতে আফগানদের বিপক্ষে ভালো ব্যাটিংয়ের রেকর্ড থেকে। টিম ম্যানেজমেন্ট চার পেসার নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনাও করছে! শেষ পর্যন্ত সেটা না হলেও একাদশে থাকবে তিন পেসার। ভারতের মাটিতে বেশি খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে মুস্তফিজুর রহমানের। এই বিশ্বকাপে তার সেরাটা দেখার অপেক্ষায় সবাই। তার সঙ্গে তাসকিন আহমেদ এবার বড় বাজি। এ ছাড়া শরীফুল ইসলামকে রেখেই আজ একাদশ তৈরি হতে পারে। চতুর্থ পেসার খেলালে হাসান মাহমুদের সুযোগ থাকবে।
ধর্মশালার উইকেটে শুরুতে পেসাররা সুবিধা পায়। শুরুতে উইকেটে আর্দ্রতা থাকে। বলও ধীরে আসে। সময়ের সঙ্গে রান করা সহজ হতে পারে। এই মাঠে রান তাড়া করে জেতা অনেকটাই কঠিন। আফগান অধিনায়ক হাসমতউলস্নাহ শাহিদী জানালেন, তারা এবার বিশ্বকাপে আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘একজন নেতা হিসেবে আমি খুব আত্মবিশ্বাসী যে এবারের বিশ্বকাপে আমরা অনেক কিছু অর্জন করতে পারব। এটাই আমাদের চাওয়া এবং লক্ষ্য। অতীতে যা ঘটেছে তা নিয়ে আমরা চিন্তা করি না।’ রশিদ-নবীদের নিয়ে গড়া আফগানিস্তানের স্পিনই মূল শক্তি হলেও পেস তাদের ব্যাটিং লাইনআপ নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরিতে অনায়াসে বড় রান তাড়া করে জিতেছে।
আর অভিজ্ঞতার বিচারে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ অনেকখানিই এগিয়ে। সাকিব ও মুশফিকের চারটি করে বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। মাহমুদউলস্নহও খেলেছেন তিনটি বিশ্বকাপ। শুধু তাই নয় পারফরম্যান্সের বিচারেও বাংলাদেশের অধিনায়ক অনেকখানি এগিয়ে। বর্তমানে বিশ্বকাপ খেলছেন এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৪৬ রান ও চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট সাকিবের দখলে। ২০০৬ সালে ওয়ানডে অভিষেকের পর বাংলাদেশের হয়ে একটি বিশ্বকাপও মিস করেননি তিনি। গত চার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ও উইকেট সংগ্রাহক সাকিব। ২৯ ম্যাচে ৮২.২৬ স্ট্রাইকরেটে ৪৫.৮৪ গড়ে তার রান হাজারের ওপরে। বিশ্বকাপে দুটি সেঞ্চুরি ছাড়াও ১০টি হাফ সেঞ্চুরি আছে সাকিবের।
সমান ম্যাচে তার উইকেট ৩৪টি। শেষ বিশ্বকাপে তো ঝড়ই তুলেছিলেন ইংলিশ কন্ডিশনে। ব্যাট হাতে ৬০৬ রানের পাশাপাশি নিয়েছেন ১১ উইকেটও। ২৪০টি ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা থাকা সাকিব যে ব্যাট ও বল হাতে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ যোদ্ধা হবেন, এ নিয়ে বিতর্ক নেই কোনো। ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে খেলেছিলেন সাকিব। ২০১৫ ও ২০১৯ দুটি বিশ্বকাপের পর ফের অধিনায়ক হিসেবে মাঠে নামতে যাচ্ছেন বাঁ-হাতি এই অলরাউন্ডার।
সাকিবের মতো পাঁচটি বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছেন মুশফিকও। এবারের বিশ্বকাপের বাকি ৯ দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ। চার বিশ্বকাপে দুজনই খেলেছেন সমান ২৯ ম্যাচ। ব্যাট হাতেও বাংলাদেশের নির্ভরতার প্রতীক মুশফিক। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর তার ব্যাটে ধারবাহিকভাবেই রান আসছে। এই সময় ৪৩ ম্যাচ খেলেছেন মুশফিক। রান করেছেন দেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪৭৯। ৪ বিশ্বকাপে তার রান ৮৭৭। আছে ১ সেঞ্চুরি ও ৬ হাফ সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ খেলায় মাহমুদউল্লাহ আছে দুই নম্বরে। তার এটি চতুর্থ বিশ্বকাপ। সে হিসেবে বাংলাদেশ দলেই সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। ২০১৫ সালে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে টানা দুই সেঞ্চুরি করেন তিনি। বিশ্বকাপে ১৭ ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরিতে এই অলরাউন্ডের রান ৬১৬। বল হাতে তার উইকেট চারটি।
বাংলাদেশের স্কোয়াডে থাকা তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজও এর আগে দুটি বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছেন, লিটন দাস ও মুস্তাফিজুর রহমান খেলেছেন একটি করে। তবে বাংলাদেশ দলে নতুন মুখও কম নেই। এবারই প্রথম স্বপ্নের বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে আট ক্রিকেটারের। তাদের মধ্যে নাজমুল হোসেন শান্ত দারুণ ছন্দে আছেন। এর বাইরে নাসুম আহমেদ, হাসান মাহমুদ, শেখ মেহেদী হাসান, তাওহীদ হৃদয়, তানজিদ হাসান তামিম, তানজিম হাসান সাকিব ও শরিফুল ইসলাম প্রস্তুত আফগানদের বিপক্ষে নিজেদের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ রাঙাতে।
সূচি প্রকাশ করার পরই আইসিসি জানিয়েছিল বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচে চোখ রাখতে। তার মধ্যে একটি ম্যাচ ছিল বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। সেই অপেক্ষা ফুরাচ্ছে। যদিও আইসিসি বিশ্বকাপের এক আসরে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচের বেশি জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ নিয়মের কারণে তিনটি ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল টাইগাররা। যা বিশ্বকাপের মঞ্চে এযাবৎ বাংলাদেশের সেরা পারফরমেন্স হিসেবে বিবেচিত। তবে সেই সাফল্যকে এবার পেছনে ফেলার পালা টাইগারদের সামনে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More