তপ্ত চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ১৯ ডিগ্রির নিচে

আগাম শীতে ব্যস্ততা বেড়েছে ধনুরীদের

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের উত্তর পশ্চিমে শীতের আমেজ অনুভূত হচ্ছে। রাতে বের করতে হচ্ছে লেপ তোষক। সকালের রোদ গায়ে মাখতে বেশ মজাই লাগছে। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ওই রোদ হয়ে উঠছে অসহনীয়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে অনূভূত হচ্ছে শীত। শিশিরও পড়ছে। শীতের শুরুতে অন্যান্য বারের মতো এবারও ধনুরীদের ব্যস্ততার শেষ নেই। দামও বেগেছে শিমুল তুলোর। তবে কাপাসি তুলোসহ অন্যন্য উপকরণের দাম অনেকটা আগের মতোই রয়েছে বলে জানালেন লেপ তোষক বিক্রেতারা।
আবহাওয়া অধিদফতর পূর্বাভাসে বলেছে, সারা দেশে রাতের এবং দিনের তামাত্রা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। ৫ দিনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না হলেও ৪৮ ঘণ্টায় সামান্য পরিবতনের পূর্বাভাস রয়েছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কক্সবাজারে ৩৪ দশমিক ২ ও সর্বনিম্ন তেতুলিয়ায় ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গায় ছিলো সর্বোচ্চ ৩০ দশমিক ৮ ও সবনিম্ন ১৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় কয়েকদিন ধরে নিচের তাপমাত্রা হু হু করে নামছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার অদূরে তামিূলনাড়– উপকূলে লঘুচাপ বিরাজমান রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগার পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে শীতকাল। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে তাপমাত্রা কমতে থাকে। আজ নভেম্বরের প্রথম দিন। এরই মধ্যে শীত অনুভূত হচ্ছে। মাসের শেষে এসে উত্তরাঞ্চলের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আসে। কিন্তু এবার একটু আগেভাগেই শীত পড়েছে। এরই মধ্যে দেশের সবচেয়ে তপ্ত এলাকা চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে। এরই মধ্যে বেড়েছে চুয়াডাঙ্গার লেপ-তোষক তৈরির কারিগরদের ব্যস্ততা। এক সপ্তাহ ধরে ভোরে একটু একটু করে শীতের আগমনবার্তা জানান দিচ্ছে প্রকৃতি। সকাল বেলায় দেখা মিলছে কুয়াশা। শেষ রাত থেকে শুরু করে ভোর সকাল পর্যন্ত শীত অনুভূতি হচ্ছে। যেন হালকা কাঁথা দিয়ে আর শরীর থেকে শীত নিবারণ করা যাচ্ছে না। শীতের আগমনবার্তা জানান দিচ্ছে লেপ তোষকের কারিগরদের ব্যস্ততা। সামনে শীত তাই লেপ-তোষকের দোকানে বেড়েছে কাজের ব্যস্ততা। কেউবা বাক্সবন্দি পুরোনো লেপ বের করে দোকানে নিয়ে আসছেন মেরামত করার জন্য, আবার কেউ কেউ ঠা-া থেকে বাঁচতে নতুন লেপ তৈরির জন্য ভিড় করছেন লেপ-তোষক তৈরি করার দোকানগুলোতে। সরেজমিনে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বেশ কয়েকটি লেপ-তোষক তৈরি দোকানে কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সাধারণত বছরজুড়ে তারা দৈনিক ৫ ঘণ্টা কাজ করলেও শীতের দুই তিন মাস কাজ করবেন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা।
কিছু কারিগররা জানান, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ঘুরে ঘুরে কাজ করি। আবার কিছু কারিগর দোকানের অর্ডারের কাজ করেন।
চুয়াডাঙ্গার লেপ-তোষক প্রস্তুতকারক দোকানের কারিগর সাইফুল ইসলাম বলেন, শীতের দুই তিন মাস আমরা অনেক কাজ পাই যেটা অন্যান্য সময় পাওয়া যায় না। এখন প্রতিদিন ঠিকমতো কাজ করে দেখা যায়, একজন কারিগর ৪ থেকে ৬টি লেপ তৈরি করতে পারেন। একটি লেপ তৈরি করলে ২০০ টাকা জাজিম ৩৫০ টাকা, তোষক ২০০ টাকা, বালিশ ২০ টাকা, মজুরি পাই। কিন্তু শীতের মাস ছাড়া এতো অর্ডার পাওয়া যায় না। কারিগর রতন আলী ও মিলন হোসেন বলেন, শীতের তিন মাস খুব ব্যস্ত থাকতে হয় কাজ নিয়ে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে প্রতিদিন হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। এখন কাজের চাপ বেশি তাই মজুরি বেশি পাচ্ছি। তাছাড়া আমাদের ১২ মাস টুকটাক কাজ হয় যা দিয়ে মোটামটিভাবে চলাচল করা যায়। চুয়াডাঙ্গা কোর্ট মোড় এলাকার মেসাার্স সাজু শীত বস্ত্রালয়ের মালিক মো. নিলাক হোসেন বলেন, শীতের শুরুতে প্রতিদিনই প্রায় ৫-১০টি লেপের অর্ডার পাচ্ছি। তবে শিমুল তুলার চাহিদা থাকলেও উৎপাদন নেই। যার কারণে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী শিমুল তুলা দিয়ে তৈরি লেপ-বালিসের অর্ডার নিতে পারছি না। এ বছর আমরা তুলা বিক্রি করছি প্রতি কেজি শিমুল তুলা ৪০০ টাকা, কাবাসি তুলা ১৩০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, ফাইবার তুলা ২১০ টাকা, ফোম তুলা ১৬০ টাকা, গার্মেন্টস তুলা ৪০ টাকা, শীত মরসুমে প্রতিটি তুলার দাম কেজিপ্রতি ৮-১০ টাকা বাড়ে বলে তিনি জানান। অন্য দিকে লেপ তোষকের দোকান মালিক ও ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছোট, বড় এবং মাঝারি আকারের এক একটি লেপ তৈরি করতে নেয়া হচ্ছে, ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা, জাজিম ১৮শ টাকা থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা, তোষক ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, কোলবালিশ ১৬০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, মাথার বালিশ ১০০ টাকা থেকে ৮৬০ টাকা। ক্রেতা বিলকিস আক্তার ববি বলেন, সময়ের সাথে সাথে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বাড়ছে কি করার শীতের ঠা-া থেকে বাঁচতে লেপ-তোষক কিনতে তো হবেই।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More