দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টের কার্যক্রম বন্ধের ১ বছর আজ : ৩০ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত সরকার

দর্শনা অফিস: সেই কাক ডাকা ভোর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যেখানে থাকতো অসংখ্য মানুষের সমাগম। দিনভর যেখানে দেশ-বিদেশের মানুষের আনা-গোনায় মুখরিত থাকতো, সেই স্থানটি আজ জনমানবহীন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। টানা ১ বছর বন্ধ রয়েছে দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টের সকল কার্যক্রম। যে কারণে খেটে খাওয়া ৫ শতাধিক মানুষ হয়ে পড়েছে কর্মহীন। তারা বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছে অন্য পেশা। কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি তা রয়েছে অনিশ্চিত। এ পর্যন্ত সরকার ৩০ কোটি রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে জয়নগর চেকপোস্ট বন্ধের কারণে। করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে। বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্তের কয়েকদিনের মাথায় বন্ধ করা হয় দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টের সকল কার্যক্রম। গত বছরের ১২ মার্চ দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট সীমান্ত পথে বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত বন্ধ হয়। যেহেতু অনেক পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি ভারতে আটকে পড়েন, সেহেতু সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৫ মার্চ পর্যন্ত ভারত থেকে দেশে ফেরার সুযোগ করে দেয়া হয়। ২৬ মার্চ থেকে গোটা দেশ লকডাউনের আওতায় এনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সে থেকেই জয়নগর চেকপোস্টের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ চেকপোস্টে যাত্রীদের মালামাল বহনকারী (কুলি) ভ্যান চালক, ইজিবাইক, সিএনজিসহ সকল প্রকার যানবাহন চালক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা হয়ে পড়েন কর্মহীন। জয়নগরের কয়েকজন ব্যবসায়ী ও দিনমজুরের কাছ থেকে শোনা গেছে, দীর্ঘ বছর ধরেই চেকপোস্টে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন তারা। লম্বা সময় ধরে চেকপোস্টের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে খেয়ে না খেয়ে প্রায় ৫শ’ জন দিন কাটিয়েছে বহুদিন। ৫শ’ জনের কর্মের উপর নির্ভরশীল প্রায় ২ হাজার মানুষ। শেষ পর্যন্ত কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে বিকল্প পেশা হিসেবে একেকজন একেক পেশা বেছে নিয়ে করছেন জীবিকা নির্বাহ। জয়নগর চেকপোস্টে রয়েছে কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, বিজিবি ক্যাম্প, আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, স্বাস্থ্য বিভাগ, সংঘনিরোধ ভবনসহ অর্ধশত বিভিন্ন দোকানপাট। সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথা নিয়মে বেতন পেলেও খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে কর্মহীন হয়ে পড়তে হয়। দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট সীমান্ত পথে প্রতিদিন গড়ে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারী যাত্রীর সংখ্যা ছিলো ২ হাজার জন। এদের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার জন পাসপোর্টধারী যাত্রীকে ভ্রমণ কর কাটতে হতো। বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের প্রত্যেক যাত্রীকে ভ্রমন কর হিসেবে ৫শ’ টাকা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা দিতে হয়ে থাকে। ভারতীয়রাও বাংলাদেশ থেকে নিজ দেশে ফেরার সময় ৫শ’ টাকা ভ্রমণ কর দিতে হতো। ফলে গড়ে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার যাত্রীকে ভ্রমণ কর দিতে হতো সরকারকে। তাছাড়া ভারত থেকে আনা মালামালের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও নেহাতই কম ছিলো না। সে হিসেব মতো আজ ২৬ মার্চ টানা ১ বছরে ভ্রমণ কর বাবদ রাজস্ব ২৭ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং বিভিন্ন মালামালের কাস্টমস কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের টাকা নিয়ে সর্বমোট প্রায় ৩০ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও কয়েকদিন ধরে বাড়ছে প্রাদুর্ভাব। যে কারণে এ রুট চালু অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কবে নাগাদ দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টের কার্যক্রম চালু করা হবে তা নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারছেন না।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More