চুয়াডাঙ্গায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগ-যুবলীগে উত্তেজনা

জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম জোয়ার্দ্দারকে প্রধান আসামি করে থানায় হত্যা মামলা

শনিবারের মধ্যে মূল আসামিদের ধরা না হলে চুয়াডাঙ্গায় হরতালের হুঁশিয়ারি আ.লীগের : আটক ৬
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর মল্লিক নিহতের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে চুয়াডাঙ্গা। জাহাঙ্গীর মল্লিকের লাশ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আগামী শনিবারের মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করা না হলে রোববার অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। জাহাঙ্গীর মল্লিক হত্যামামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দারকে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে যুবলীগের নেতৃবৃন্দ। তারাও পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানানো হয়েছে। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাহাঙ্গীরের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছুলে পরিবার পরিজনের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। শত শত মানুষের উপস্থিতিতে বেদনাবিধুর পরিবেশে বিকেল ৩টার দিকে জানাজা শেষে গ্রাম্য কবরস্থানে দাফনকাজ সম্পন্ন হয়। অপরদিকে, জাহাঙ্গীর হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত একজনসহ জড়িত সন্দেহে আরও পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন এজাহারভুক্ত আসামি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে আনিস উদ্দীন (৬০), একই এলাকার ওমর আলীর ছেলে লিমন (৩২), মৃত বিশারত আলী শেখের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২৮), এনামুল হকের ছেলে সাগর হোসেন (২১), মকবুল হোসেনের ছেলে এনামুল হক (৫২) ও উসমান আলীর ছেলে মিঠুন আহমেদ (২৮)।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া কেরুজ বাণিজ্যিক খামার এলাকায় বালুর ব্যবসা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মধ্যে। এরই মধ্যে গত বুধবার বিকেলে উপজেলার নুরুল্লাপুর গ্রামের রনজিত মল্লিকের ছেলে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর মল্লিককে (৩৫) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তিতুদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বালুব্যবসায়ী শুকুর আলীর অভিযোগ স্থানীয় যুবলীগের কয়েকজন মিলে জাহাঙ্গীর মল্লিককে বালুর খোলায় পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় বুধবার রাতে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় একটি হত্যামামলা করেন নিহত জাহাঙ্গীর মল্লিকের পিতা রনজিত মল্লিক। মামলায় জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও যুবলীগ কর্মী মোমিন, জিসান, লিমন হোসেন, শাকিব হোসেনসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে জাহাঙ্গীর মল্লিকের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর জাহাঙ্গীরের লাশ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। লাশ নিয়ে তারা বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদসভায় বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরেফিন আলম রঞ্জু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্র্দ্দার অনিক, কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মানিক প্রমুখ।
এসময় এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার পুলিশের প্রতি আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, ‘পুলিশ যদি সক্রিয় থাকতো তাহলে এ হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটতো না। হত্যাকা-ের সাথে জড়িতদের পূর্বের মামলা থাকা সত্বেও তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। এ ঘটনায় মামলা দায়েরর পরও মূল হোতাদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আগামী শনিবারের মধ্যে যদি জাহাঙ্গীর মল্লিকের এজাহার নামীয় আসামিদের গ্রেফতার করা না হয়, তাহলে পরদিন রোববার চুয়াডাঙ্গায় আধাবেলা হরতাল পালন করা হবে। বিকেলে হাসান চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হবে।’
জাহাঙ্গীর মল্লিক হত্যামামলার প্রধান আসামি চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘হত্যামামলাটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এখান থেকে যুবলীগের রাজনীতি মুছে দেয়ার জন্য বারবার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গার যুবলীগের কার্যক্রম অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও গতিশীল হওয়ায় তা হয় না।’ তিনি বলেন জাহাঙ্গীরকে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে যুবলীগের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে আমরাও কঠোর কর্মসূচি দেবো এবং চুয়াডাঙ্গাকে অচল করে ছাড়বো।’
এদিকে, জেলা যুবলীগের আহ্বায়কের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা মিথ্যা দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে যুবলীগ। গতরাত পৌনে ৯টার দিকে যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে শহীদ হাসান চত্বর থেকে মিছিলটি বের হয়ে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা যুবলীগের সদস্য আজাদ আলী, হাফিজুর রহমান হাপু, আবু বক্কর আরিফ, অ্যাড. তসলিম উদ্দিন ফিরোজ, আলমগীর আজম খোকা।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান বলেন, ‘জাহাঙ্গীর হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বৃহস্পতিবার পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত জাহাঙ্গীরের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More