রমজান উপলক্ষ্যে আট পণ্য আমদানি সহজ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন রমজান উপলক্ষ্যে আবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) স্থাপনে ব্যাংক-গ্রাহকের সম্পর্কের ভিত্তিতে নির্ধারণের সিদ্ধান্ত ফের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবশ্যকীয় খাদ্যপণ্যর যে তালিকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়েছে, সেখানে ভোজ্য তেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি এবং খেজুর রয়েছে। এসব পণ্য আমদানিতে ন্যূনতম মার্জিনে এলসি খোলার সিদ্ধান্ত ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে রোববার একটি সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, আসন্ন রমজান মাসে মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে উক্ত পণ্যসমূহের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে সংরক্ষিতব্য নগদ মার্জিনের হার ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো। এর আগে গত জুলাই মাসে ডলার সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে ৭৫ থেকে শত ভাগ নগদ মার্জিন আরোপের পাশাপাশি এসব পণ্যর বিপরীতে কোনো ধরনের ব্যাংক ঋণ দিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কিন্তু ওই তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে শিশুখাদ্যসহ অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জ্বালানি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক স্বীকৃত জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও সরঞ্জামসহ চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, উৎপাদনমুখী স্থানীয় শিল্প ও রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য সরাসরি আমদানিকৃত মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল, কৃষি খাতসংশ্লিষ্ট পণ্য এবং সরকারি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। গত জুলাইয়ের সার্কুলারেই আবশ্যকীয় খাদ্য পণ্যর মার্জিনের বিষয়ে কোনো কড়াকড়ি নির্দেশনা রাখা হয়নি।

নতুন সার্কুলার লেটার জারি করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, গত ব্যাংকার্স সভায় রমজান মাস উপলক্ষ্যে আবশ্যকীয় পণ্য আমদানিতে এলসি খোলার জন্য ব্যাংকে প্রধান নির্বাহীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। তারই আলোকে একটি সার্কুলার লেটার ইস্যু করা হয়েছে ফলোআপ নির্দেশনা দেয়ার জন্য।

মুদ্রা ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় অধিকতর সুসংহত রাখার কথা জানিয়ে ‘মোটরকার (সেডানকার, এসইউভি, এমপিভি ইত্যাদি), ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স হোম অ্যাপ্লায়েন্স, স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকার, মূল্যবান ধাতু ও মুক্তা, তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, প্রসাধনী, আসবাবপত্র ও সাজসজ্জা সামগ্রী, ফল ও ফুল, নন সিরিয়াল ফুড যেমন অশস্য খাদ্যপণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য ও পানীয়; যেমন টিনজাত খাদ্য, চকোলেট, বিস্কুট, জুস, সফট ড্রিংকস ইত্যাদি, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়, তামাক, তামাকজাত বা এর বিকল্প পণ্যসহ অন্যান্য বিলাসজাতীয় পণ্যের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে। এমন নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা আগে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত মার্জিন রাখার বাধ্যবাধকতা ছিল। আবশ্যকীয় ও বিলাসী পণ্য ব্যতীত অন্যান্য সব পণ্যের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। ১০০ শতাংশ ও ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিনে আমদানিতব্য পণ্যের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের বিপরীতে প্রয়োজনীয় মার্জিন গ্রাহকের নিজস্ব উৎস থেকে গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ এসব পণ্য আমদানিতে ব্যাংক কোনো প্রকার অর্থায়ন করতে পারবে না এমন নিষেধাজ্ঞাও দেয়া রয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমিয়ে আনতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি আরোপ করার উদ্যোগ বাংলাদেশ ব্যাংক গত এপ্রিল থেকে নিয়ে চলছে। এর ফলে গত বছরে প্রতি মাসে এলসি নিষ্পত্তি যেখানে ৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে ছিল তা গত নভেম্বরে ৫ বিলিয়েনের ঘরে নেমেছে। আর নতুন এলসি খোলার হার ৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে আগামী জানুয়ারি নাগাদ এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির হার কাছাকাছি পর্যায়ে চলে আসবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More