আলমডাঙ্গার ছোটপুটিমারী মাঠে লাটাহাম্বার দিয়ে রাস্তায় বেরিকেড : অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গণডাকাতি

চুয়াডাঙ্গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি : গত ৯দিনে তিনস্থানে হাফপ্যান্ট বাহিনীর তাণ্ডব

স্টাফ রিপোর্টার/মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে হ্যাফপ্যান্ট বাহিনীর সদস্যরা সড়কে বেরিকেড দিয়ে যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, সোনার গয়নাসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার ছোটপুটিমারী-নাগদাহ সড়কের জাকের ম-লের পরিত্যক্ত বাড়ির অদূরে সড়কে গাছ ফেলে বেরিকেড দেয় হাফপ্যান্ট বাহিনীর ৫/৬ সদস্যরা। এরপরই একটি লাটাহাম্বার গতিরোধ করে তাদের জিম্মি করে। পরে লাটাহাম্বার রাস্তায় ওপর রেখে পথ আটকে দেয় ডাকাতদল। প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ধরে ইজিবাইক, পাখিভ্যান, মোটরসাইকেলের ২০-২৫ যাত্রীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, সোনার গয়না ও মূল্যবান মালামাল লুট করে পালিয়ে যায়। এছাড়া জেহালা ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য হাসেম মাহমুদও ডাকাতির কবলে পড়ে। তার নিকট থেকে ১ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে আলমডাঙ্গার থানা পুলিশ, মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্প পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে গণডাকাতির ঘটনা অস্বীকার করেছে পুলিশ। গত ৯দিনে আলমডাঙ্গায় দুইস্থান ও জীবননগর-চানপুর সড়কে হাফপ্যান্ট বাহিনীর সদস্যরা যাত্রীদের জিম্মি করে গণডাকাতি করে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে ডাকাতির ঘটনা বারবার অস্বীকার করা হচ্ছে। এতে ভুক্তভোগীরা নগদ টাকা, সোনার গয়নাসহ মূল্যবান মালামাল উদ্ধারে পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই।

এর আগে গত ৩১ মে রাত ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের ব-বিল ঠা-ুর ইটভাটার সামনে ডাকাতদল তা-ব চালায়। এতে ইজিবাইক ও প্রাইভেটকারের মোট ১০/১২ জন যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা ও সোনার দুটি আংটি ছিনিয়ে নেয়। ভুক্তভোগী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিষয়টি স্বীকার করলেও আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ কিছুই জানেন না বলে জানান।

অপরদিকে গত রোববার রাত সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ঘন্টাব্যাপী জীবননগর চানপুর সড়কে বেরিকেড দিয়ে প্রায় ঘন্টাব্যাপী ডাকাতদল তা-ব চালায়। এতে ২০ থেকে ২৫ জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অর্থ ও সোনার গয়না লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ গতকাল বুধবার রাতে আলমডাঙ্গার ছোটপুটিমারী-নাগদাহ সড়কে গণডাকাতির ঘটনা ঘটলো। গত ৯দিনে জেলায় তিন স্থানে গণডাকাটির ঘটনা ঘটলেও এখনো পর্যন্ত পুলিশ তাদের শনাক্ত করতে পারেনি।

গতকাল ডাকাতির কবলে পড়া আলমডাঙ্গার নাগদাহ ইউনিয়নের বলিয়ারপুর গ্রামের তারা জোয়ার্দ্দারের ছেলে টিপু বলেন, বাড়ি যাওয়ার পথে ছোটপুটিমারী গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে আমাকে গতিরোধ করে ডাকাতদল। তারা ৬ জন ছিল। এরমধ্যে একজনের পেট মোটা ছিলো। তাদের হাতে হেঁসো ও লাঠি ছিলো। আমার নিকট থেকে ৬শ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। এছাড়াও পাখিভ্যান, আলমসাধু ও মোটরসাইকেলের প্রায় ২০-২৫ জন যাত্রীকে জিম্মি করে টাকা ও মালামাল নিয়েছে।

ঘোলদাড়ি পাইকপাড়ার জিনারুলের স্ত্রী মারুফা বলেন, আমার একজোড়া কানের দুল নিয়েছে। খুলতে দেরি হওয়ায় তারাই আলো জ্বালিয়ে খুলে নিয়েছে। ডাকাতদল ৫/৬ জন ছিল। তাদের প্রত্যেকের হাতে হেঁসো ও লাঠি ছিলো। আমরা পাখিভ্যানে ছিলাম। রাস্তায় লাটাহাম্বার দিয়ে বেরিকেড দিয়েছিলো তারা। মোটরসাইকেল ১০-১৫টি, দুটি ইজিবাইক, আলমসাধু ও পাখিভ্যানের অনেক লোক ছিলো। তারা সবার নিকট থেকে টাকা, মোবাইল ও মূল্যবান মালামাল লুট করে নেয়। পরে খবর পেয়ে গ্রামের লোকজন ঘটনাস্থলে আসলে ডাকাতদল পালিয়ে যায়।

পাইকপাড়ার জহুরুলের স্ত্রী আমেনা খাতুন বলেন, আমরা মেয়ে জামাইয়ের বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। ডাকাতদল আমাদেরও গতিরোধ করে। আমার স্বামীর নিকট থানা বিদেশি একটি টর্চলাইট ছিনিয়ে নিয়েছে।

একই গ্রামের তাহাজ্জেলের স্ত্রী জহুরার নিকট থেকে এক জোড়া কানের দুল নিয়েছে। জেহালা ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য হাশেম মাহমুদের নিকট থেকে ১ হাজার টাকা নিয়েছে। গ্রামবাসী চলে আসায় ডাকাতদল পালিয়ে যায়। এরপর যার যার মতো বাড়ি চলে যায়।

ভুক্তভোগীরা বলছেন নিয়মিত পুলিশের টহল থাকলে অনেকটাই রোধ করা সম্ভব। নিয়মিত টহল না থাকার কারণে ডাকাতের ঘটনা ঘটছে।

আলমডাঙ্গা থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ডাকাতির চেষ্টা করেছিল। কারোর থেকে কিছু নিতে পারেনি। নাগদাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশকে জানায়। পুলিশ সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এতে কোনো ঘটনা ঘটেনি।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More