আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজ আন্দোলনের মুখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদত্যাগ

দুর্নীতি-অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনসহ অবস্থান কর্মসূচি পালিত

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম ছরোয়ার মিঠু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করেছেন। কলেজটির সাধারণ শিক্ষার্থীদের দিনভর আন্দোলনের মুখে শনিবার বিকেলে তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত পদত্যাগপত্রে গোলাম ছরোয়ার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছেন। পদত্যাগের পর সহকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বিদায়ী বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন এমপি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার। ওনার সভাপতিত্বে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি আমাকে নিয়োগ দেয়। চেয়ারে বসার পর থেকে নিয়ম মেনে দায়িত্ব পালন করেছি।’
তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে) অবৈধ, দুর্নীতিবাজ, স্বৈরাচারী ও ঘুষখোর আখ্যা দিয়ে শনিবার সকাল থেকে কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। দুপুরের পর শিক্ষকেরা সংহতি প্রকাশ করলে আন্দোলন চাঙা হয়ে ওঠে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে গোলাম ছরোয়ার পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন। পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনকারীরা আনন্দ মিছিল করতে করতে কলেজ চত্বর ত্যাগ করেন। পদত্যাগী গোলাম ছরোয়ার সন্ধ্যায় বাড়ির পথে রওনা দেন। এদিকে গোলাম ছরোয়ারের পদত্যাগের পর নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়েও আলোচনা শুরু হয়। বিকেলে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পরবর্তী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ আলী মামুন রেজার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। সৈয়দ আলী মামুন রেজা বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘দায়িত্ব পেলে কলেজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে যা যা করার সবই করা হবে।’
পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী সকাল ১০টায় আলমডাঙ্গা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা খ- খ- মিছিল নিয়ে ব্যানার সহকারে কলেজ চত্বরে প্রবেশ করেন এবং অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। সকাল থেকেই তারা ঘোষণা দেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে গোলাম ছরোয়ার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কলেজ চত্বর ত্যাগ করবে না। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দুর্নীতি-অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে আন্দোলনকারীরা বক্তব্য দেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তৎকালীন পরিচালনা কমিটি পাঁচজনকে ডিঙিয়ে গোলাম ছরোয়ারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি (গোলাম ছরোয়ার) কলেজকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন।
বেলা তিনটার দিকে কলেজের সাধারণ শিক্ষকেরা কমনরুম থেকে একে একে বের হয়ে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। শিক্ষকদের সংহতি প্রকাশের পর আন্দোলন জোরালো হয়। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনি আলম নূর, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল বারী ও আলমডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল আলিমকে সঙ্গে নিয়ে বেলা সাড়ে ৩টায় কলেজ চত্বরে প্রবেশ করেন। কর্মকর্তারা টানা পৌনে ৬টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। তারা অভিযুক্ত গোলাম ছরোয়ারসহ কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছান। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদত্যাগের মধ্যদিয়ে পরিবেশ শান্ত হয়।
ইউএনও রনি আলম নুর সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিকূল পরিবেশের কারণে গোলাম ছরোয়ার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্রটি নিয়ম অনুযায়ী মাউশির মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হবে এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More