বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকৌশলী সেজে অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাৎ : চুয়াডাঙ্গার ছেলে নাইমুর রহমান জোয়ার্দ্দার স্ত্রীসহ গ্রেফতার

নিজেকে নারায়ণগঞ্জের ২২৫ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে পরিচয় দিতেন নাইমুর রহমান জোয়ার্দার নামে এক ব্যক্তি। ভুয়া পরিচয়ে তিনি ভুয়া কার্যাদেশ দিয়ে ৫২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় মিরপুর থানায় দায়ের করা একটি মামলায় স্ত্রী ও ভাইসহ গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে। তাঁর গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার মসজিদপাড়ায়। থাকেন সাভারের দক্ষিণ দরিয়াপুরের গেণ্ডা এলাকায়।
অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (২৬ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে নাইমুর রহমান জোয়ার্দারকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ঢাকা মেট্রো-পশ্চিম এর একটি টিম। মঙ্গলবার বিকেলে সিআইডির সিনিয়র এএসপি (মিডিয়া) জিসানুল হক জিসান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে মিরপুর থেকে নাইমুর রহমান জোয়ার্দারকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ঢাকা মেট্রো-পশ্চিম এর একটি টিম। এদিকে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী মো. হেলালুল মোজাদ্দেদ সোমবার রাতে মিরপুর মডেল থানায় নাইমুর রহমান জোয়ার্দার ও তার স্ত্রী এবং ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।
মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, বিগত ২০১৮ সালের ১৬ নভেম্বর নাইমুর রহমান জোয়ার্দার (৩৩) তার (ভুক্তভোগী) বন্ধু মামুনের মিরপুরের পাইকপাড়া অফিসে এসে নিজেকে নারায়ণগঞ্জের ২২৫ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পরিচয় দিয়ে তাদের (ভুক্তভোগী) কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া করে চুয়াডাঙ্গা যান। চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকায় এসে গাড়ির ভাড়ার টাকা ৯ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। নাইমুর রহমান জোয়ার্দার ভুক্তভোগীকে জানান, তিনি পিডিবির নারায়ণগঞ্জ প্রজেক্টের বিভিন্ন মালামাল ক্রয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। তখন কিছু কাজ দেওয়ার ব্যাপারে তাকে অনুরোধ করেন ভুক্তভোগী হেলালুল মোজাদ্দেদ। তখন তিনি (নাইমুর জোয়ার্দার) পিডিবির বিভিন্ন মালামাল সরবরাহের কাজ দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। ভুক্তভোগী তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েল এন্টারপ্রাইজের নাম তাকে (নাইমুর জোয়ার্দার) দেন।
সেই সুবাদে নাইমুর রহমান জোয়ার্দার তার (হেলালুল মোজাদ্দেদ) রয়েল এন্টারপ্রাইজ লাইসেন্সের নামে পিডিবির একাধিক মালামাল সাপ্লাই করা বাবদ একাধিক কার্যাদেশ দেন। কার্যাদেশে উল্লেখ থাকে প্রকল্পের প্রাইভেটকার, হাইয়েস গাড়ি ভাড়া, এসি, কম্পিউটার, থাই, ফ্যান, ওয়াল ফ্যান, গেট ইত্যাদি সরবরাহ করা হবে।
পরে নাইমুর রহমান জোয়ার্দার ও তার স্ত্রী জান্নাতুল নুর (২৬) এবং তার ভাই মশিউর রহমান (২০) পিডিবির কার্যাদেশের চাহিদা মোতাবেক মালামাল ক্রয় এবং সরবরাহের টেন্ডারের জন্য ২০১৯ সালের ১-৪ এপ্রিলের মধ্যে সর্বমোট ৫২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দেন হেলালুল মোজাদ্দেদ। টাকা নেওয়ার পর আসামিরা (নাইমুর রহমান জোয়ার্দার এবং তার স্ত্রী ও ভাই) হেলালুল মোজাদ্দেদের কাছ থেকে পিডিবিতে মালামাল সরবরাহ না করে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। তখন তিনি (হেলালুল মোজাদ্দেদ) কার্যাদেশে দেওয়া ঠিকানা নারায়ণগঞ্জের ২২৫ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ে নাইমুর রহমান জোয়ার্দারের খোঁজ নেন। খোঁজ করলে অফিসের লোকজন জানান যে এ নামে কোনো কর্মকর্তা তাদের অফিসে নেই। নাইমুর রহমান জোয়ার্দারসহ বাকি দুইজন আসামি হেলালুল মোজাদ্দেদের বিশ্বাস অর্জন করার জন্য ইউসিবি ব্যাংকে তার নামের অ্যাকাউন্ট থেকে ৪২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের দুটি চেক দিয়েছিল। তখন তিনি (হেলালুল মোজাদ্দেদ) কাজের কার্যাদেশগুলো এবং চেক দেখালে পিডিবির অফিসের কর্মকর্তারা জানান যে, এ ধরনের কার্যাদেশ তাদের অফিস থেকে ইস্যু করা হয়নি। এটি ভুয়া কার্যাদেশ বলে জানান তারা।
তখন ভুয়া কার্যাদেশ দেওয়ার বিষয় নিয়ে নাইমুর রহমান জোয়ার্দারের সঙ্গে হেলালুল মোজাদ্দেদ আলোচনা করলে তখন তিনি উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নন এবং যে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে, তা সঠিক নয় বলে জানান। তিনি (নাইমুর জোয়ার্দার) এবং তার ভাই মশিউর রহমান কার্যাদেশগুলো কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি করে নিজেকে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পরিচয় দিয়ে মালামাল সরবরাহ করার কথা বলে হেলালুল মোজাদ্দেদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ৪২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
হেলালুল মোজাদ্দেদের টাকা দিয়ে পিডিবিতে পে-অর্ডার পাঠিয়ে পরবর্তীতে পিডিবির ভুয়া সিল তৈরি করে পে-অর্ডার ব্যবহার করে নিজে পিডিবির কর্মকর্তা হিসেবে স্বাক্ষর করে সব টাকা উত্তোলন করেন নাইমুর জোয়ার্দার। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে বিশ্বাস জন্মানোর জন্য তিনি তার স্ত্রীকে ব্যবহার করেন। সব টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য হেলালুল মোজাদ্দেদের কাছে একটি স্ট্যাম্পে চুক্তিবদ্ধ হন নাইমুর। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও নাইমুর কোনো টাকা ফেরত দেননি। বরং টাকা ফেরত চাইলে নাইমুরের স্ত্রী ও ভাই হেলালুল মোজাদ্দেদকে জীবননাশের হুমকি দেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More