এক বোতলের দাম ৫ হাজার টাকা ! ভুক্তোভোগি পরিবারে স্বস্তি

বর্তমান পরিস্থিত অব্যাহত রাখার দাবি

নজরুল ইসলাম: একটি পরিবারে একজন মাদকসেবি থাকলেই পুরাপরিবার পরিজনের সদসস্যরা থাকে উদবেগ উৎকণ্ঠায়। মাদকসেবির টাকা জোগাড় কিংবা শাসন করতে গিয়ে ঘটে অপ্রিতিকর পরিস্থিতি। তাই মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট কাউকেই ভালোভাবে নেয় না পরিবার কিংবা সমাজ। দেরিতে হলেও বিষয়টি উপলব্ধি করে দু’দেশের সীমান্তে মাদকের ব্যাপারে প্রশাসনের নজদারিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে এক বোতল ফেসনিডিলের দাম ৫ হাজার টাকায় ঠেকেছে। দাম যাইহোক না কেন এক বোতল ফেনসিডিল যোগাড় করা এখন সুসাধ্য হয়ে পড়েছে মাদকসেবিদের নিকট। ফেনসিডিলের মূল্য আকাশচুম্বি হওয়ায় সহজে টাকার যোগান করতে পারছে না সেবনকারিরা। ফেনসিডিলের এমন মূল্য হওয়াতে ভুক্তোভোগি মাদকসেবি পরিবারে কিছুটা হলেও মিলেছে স্বস্তি। এর ধারা অব্যাহত থাকলে একদিন ফেনসিডিল সেবন করা ভুলে যাবে সেবনকারিরা। তবে ফেনসিডিলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া এবং দুষপ্রাপ্য হওয়ায় গাঁজার সরবরাহ বেড়েছে। তাইতো এখন ফেনসিডিলের পরিবর্তে দেশের অভ্যান্তরে প্রশাসনের হাতে আটক হচ্ছে গাঁজার চালান।
মাদক শুধু কৈশোর বা তারুণ্যেকে ছোবল বসায়নি। কাজ না পেয়ে হতাশ, শিক্ষা জীবন শেষ করতে পারেনি, চাকরি জীবনে সাফল্য পায়নি, অপরাধের সঙ্গে যুক্ত কিংবা পারিবারিক জটিলতায় আছে, এমন মানুষেরাই শুধু মাদকে দংশিত হচ্ছে না। সাফল্যের চূড়ায় বসে থাকা মানুষেরাও কোন কোন সময় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। পারিবারিক বিত্ত আছে, শিক্ষায়, মেধার শীর্ষে থাকার পরেও মাদকের কাছে সঁপে দিচ্ছে নিজেদের। কারণ কী ? অতিসুখ, সাফল্য সইতে পারছে না তারা ? বিত্ত ও সাফল্যের প্রদর্শন বা বিলাস করতে গিয়েও অনেকে মাদকের কাছে নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছে। সঙ্গদোষে মাদককে বন্ধু ভেবে নেওয়ার ঘটনাও আছে। সব কিছুর যোগফল হলো মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্টের চরম শত্রু। আগে এক মহল্লায় এক বা দুই জন পাওয়া যেত যাদের মাদকে আসক্তি আছে। বর্তমানে এর সর্বত্রে বিস্তার ঘটেছে। ফলে ভভীষত প্রজন্মকে বাঁচাতে মাদক রোধে সরকার জিরোটলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে।
অপর দিকে মাদক হচ্ছে একটি ভেষজ দ্রব্য যা গ্রহণে মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব পড়ে। যা আসক্তি সৃষ্টি করে। মাদক দ্রব্যে সেবনে তন্দ্রাচ্ছন্নতা, মেজাজ পরিবর্তন, মানসিক, আচ্ছন্নতা রক্তচাপের পরিবর্তন ঘটায়। মাদক দ্রব্য গ্রহণ করলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। দিন দিন মাদক গ্রহণের ফলে এর প্রতি আসক্তি বাড়ে। মানুষ নেশার জন্য যা ব্যবহার করে তাই মাদক দ্রব্য। মাদক সেবিদের নিকট পরিচিত নাম ফেনসিডিল, হেরইন, গাঁজা, মদ, ইয়াবা। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার এনার্জি ড্রিংক কোমল পানীয়। মাদক সেবনের পরপরই ব্যাক্তির মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক নিওরোট্রান্সমিটার বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘদিন ধরে মাদক সেবন করলে একজন মানুষ তার সকল কার্যক্ষম হারিয়ে ফেলে। প্রকৃতপক্ষে দেখা যায় মাদকাসক্ত ব্যাক্তি আসলে একটা সময়ে আর আনন্দের জন্য নেশা করে না। এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। ফলে মাদকই হয়ে পড়ে মাদকাসক্ত ব্যাক্তির একমাত্র চিন্তা চেতনা। এক সময় ক্ষতিকর প্রভাবে ডেকে আনে তার মৃত্যু। আর এর এ কারবারের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী ও শিশু-কিশোররাও জড়িত। এটা সহজেই অনুমান করা যায় যে, মাদকাসক্তির কারণে যুব সমাজের নিজেদের জীবন শুধু বিপন্ন হয় না, এতে গোটা পরিবার এবং সমাজ রাষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিষয়টি উপলব্ধি করে বর্তমান সরকার মাদকের ব্যাপারে জিরোটলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছেন। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে মাঠ পর্যায়ে, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্র অধিদপ্তর নিরলশভাবে কাজ করেেছ। একটি সূত্র জানিয়েছে, সীমান্তের ওপারের প্রশাসনও মাদকের ব্যবপারে কোঠর অবস্থান নিয়েছে। যার ফলে সীমান্ত দিয়ে ফিনসিডিল আসা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রে এসছে। অর্থনীতির ভাষায় যোগান কম হলে মূল্য বৃদ্ধি পায়, আর যোগান বৃদ্ধি পেলে মূল্য কমে যায়। দু’দেশের প্রশাসেনর কোঠর নজদারি এবং আন্তরিকতায় ফেনসিডিল পাচার অকেকাংশে নিয়ন্ত্রনে এসেছে বেেল সুধিমহলের দাবি। ফলে বর্তমানে দেশের সীমান্ত এলাকায় এক বোতল ফেনসিডিলের মূল্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকায় দাড়িয়েছে। এতেও নাকি ভেজাল। নামপ্রকাশে অনিচ্ছিুক কয়েজন মাদকসেবি জানালেন, পিয়োর একবোতল ফেনসিডিলের দাম ৫ হাজার টাকা। সবচেয়ে বড় কথা দাম যাইহোক না কেন জোগাড় করাই অসম্ভব। মাদকসেবি কয়েকজন পরিবারের সদস্যর সাথে কথা বললে, তারা বলেন, প্রশাসকে ধন্যবাদ। টাকা জোগাড় করে এক বোতল ফেনসিডিল সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ফেনসিডিল নামক মরণ নেশাজাত দ্রব্যর কথা একদিন ভুলে যাবে আমাদের সন্তানেরা। এটা অব্যাহত থাকলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্টের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।
ঝিনাইদহ খালিশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়ন এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল কামরুল আহসান বলেন, দু’দেশের পক্ষ থেকে ফেনসিডিলের ব্যাপারে জিরোটলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। তবে সদস্যা হচ্ছে সে দেশে গাঁজা ও মদের ব্যাপারে প্রশাসন খিছুটা শিথিল। ফলে সীমান্তের লোকজন এগুলো প্রকাশ্যে ব্যবহার করে থাকে। যার ফলে ফেনসিডিলের পরিবর্তে অনেক সময় দেশে মদ ঢুকে পড়ছে। তার পরও কোন প্রকার মাদকের ব্যাপারে কেউ ছাড় পাবে না এবং পাচ্ছে না।
চুয়াডাঙ্গা পুুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে মাদকের ব্যাপারে শুধু জিরো টলারেন্স না, আমি মাইনাস জিরো টলারেন্ট অবলম্বন করেছি। তবে সীমান্ত এলাকায় রাতে অভিযান চালানোতে আইনি জটিলতা আছে। তার পরও চেষ্টা চালোনো হচ্ছে। মাদকের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যে বা জারাই জড়িত থাকু না কেন তাকে আইনের আওায় আসতেই হবে। মাদকাশক্ত অনেক পরিবারের দাবি প্রশাসন যেন এধারা অব্যাহত রাখে তাহলে এর সুফল একদিন ভুক্তোভোগি পরিবারগুলো পাবে। ###

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More