করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ : দ্রুত কঠোর অবস্থান নেবে সরকার

প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়া হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

স্টাফ রিপোর্টার: করোনা সংক্রমণের উচ্চহার নিয়ন্ত্রণে সরকার দ্রুত কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। জনগণ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে-এজন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়া হতে পারে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু কর্মসূচি গ্রহণও করা হয়েছে। আগামী ২৩ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত কর্মসূচি আরও কঠোরভাবে প্রতিপালন করা হবে। যান চলাচল, অপ্রয়োজনে লোক সমাগম প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এমনকি ফুটপাতে ভিড় এড়াতে অবৈধ দোকানপাট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হতে পারে। সব মিলিয়ে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে ঠেলে না-দিতে অথবা ফের লকডাউন এড়াতে, সামাজিক অনুষ্ঠানে অতিথি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সর্বস্তরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো সাময়িক বন্ধ রাখতে হবে। পাশপাশি কাঁচাবাজার, শপিং মল, মসজিদ, রাজনৈতিক সমাগম, ভোট অনুষ্ঠান, ওয়াজ-মাহফিল প্রভৃতি ক্ষেত্রে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে সরকার। তবে এখনই সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের মতো কোনো কর্মসূচিতে সরকার যাচ্ছে-না বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সম্প্রতি দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। গত বছরের এ সময়ের তুলনায় বর্তমানে এই হার কয়েকশ গুণ বেশি। এই পরিস্থিতিতেও সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন গা-ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে, তাতে অবস্থা গতবারের চেয়ে ভয়াবহ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, জনগণের সহযোগিতা না-পেলে করোনা সংক্রমণ কমানো সম্ভব নয়। স্বাস্থ্যবিধি না-মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার মুখে পড়তে হবে। মন্ত্রী বলেন, দেশের জনসাধারণ স্বাস্থ্যবিধি না-মানায় বাড়ছে করোনা। সংক্রমণ ২ থেকে ১০ শতাংশে উঠেছে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা আদায়সহ কঠোর অবস্থানে যাবে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেয়া হতে পারে বলেও জানান তিনি।
এদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত একদিনে আরও ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ১৭২ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুই হাজার ১৭২ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৮ জন হয়েছে। অন্যদিকে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৬৯০ জন। অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে শনাক্তের হার ১০ দশমিক ২৯ ভাগ, মৃত্যুহার ১ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং সুস্থতা ৯১ দশমিক ৫১ শতাংশ। সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতি লাখ নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে ৩৩৫২ দশমিক ০৬ জন। সুস্থ হয়েছে ৩০৬৭ দশমিক ৪৪ জন। অর্থাৎ, প্রতি দশ লাখে সুস্থতার তুলনায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৮৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি।
এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। তবে এখন পর্যন্ত লাকডাউন দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের নেই। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছে মানুষ। সারা পৃথিবীতেও বাঙালিরা এটি উদ্যাপন করছে যথাযোগ্য মর্যাদায়। এক্ষেত্রে আমাদের বুঝতে হবে, আমাদের পরবর্তী সময়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত একেবারে ‘হাইয়েস্ট লেভেল’ থেকে আমাদের কাছে এরকম কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
বর্তমান সময়ে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এক অনুষ্ঠানে বলেন, যে কোনো পরিস্থিতিতেই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানা পূর্বশর্ত। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেক সময় তার শৈথিল্য দেখা যায়। সংক্রমণ বাড়ার পেছনে এটা একটা বড় কারণ বলে আমরা মনে করি। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মাস্কের ব্যবহার এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের ধরণ একেবারে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সংক্রমণ বাড়ছে বলে মনে করছি। সুতরাং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। টিকা দিই বা না-দিই; মাস্ক পরতে হবে, সঠিকভাবে পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে এবং হাত ধোয়ার অভ্যাস চর্চা করে করোনা প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে গত বছরের ২ জুলাই চার হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা একদিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More