কিশোর গ্যাংয়ের হিংস্রতায় তপুর জীবননাশ : শান্তিপাড়ার সুমন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় বিদায় অনুষ্ঠানে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সুমন নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার ভোরের দিকে পৌর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত সুমন শান্তিপাড়ার মৃত রুহুল আমিনের ছেলে। এর আগে মাহবুবুর রহমান তন্ময় ওরফে তপু হত্যার ঘটনায় রোববার মধ্যরাতে সদর থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই মাসুদুর রহমান। মামলায় ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত সুমন ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন (পিপিএম বার) গতকাল সোমবার দুপুরে জানান, এসএসসি পরীক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান তন্ময় ওরফে তপু হত্যাকা-ের ঘটনায় মামলা হয়েছে। রোববার রাত ১২টার দিকে নিহতের বড়ভাই মাসুদুর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরই মধ্যে এজহারভুক্ত আসামি সুমনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু তথ্য দিয়েছে সে। বাকি আসামিদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালানো হচ্ছে। মামলাটি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এজাহারে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের নামে বেশকিছু মামলা রয়েছে। তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। তারা কোনো দলের নেতার হয়ে কাজ করে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামলার তদন্ত ও আসামিদের গ্রেফতারের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে না। তবে, শিগগিরই সুসংবাদ পাওয়া যাবে।
নিহত তপুর বন্ধুরা জানান, মূলত একই বিদ্যালয়ের এসএসসি পরিক্ষার্থী এক মেয়ের সাথে তপুর প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। ওই মেয়েকে পছন্দ করতো হকপাড়ার শিহাব নামে এক যুবক। ঘটনার দিন সকালে স্কুলের সামনে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলছিলো তপু। ওই সময় শিহাবও মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে সেখানে গিয়েছিল। একপর্যায়ে তপুর সঙ্গে শিহাবের বাগবিত-া হয়। এরপর শিহাব ফোন করে আকাশসহ কয়েকজনকে স্কুলের সামনে ডেকে নেয়। দুপুর ১২টার দিকে কালো রঙের বাইকে করে সেখানে হাজির হয় ফার্মপাড়ার ইমন হোসেন, শান্তিপাড়ার এমদাদুল হক আকাশ ও মুসলিমপাড়ার রূপক হোসেন। এরপর আরও কয়েকজনকে আসতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর তারা বিদ্যালয়ে ঢুকে তপুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তাকে হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এদিকে, এসএসসি পরীক্ষার্থী তপু হত্যার ঘটনায় অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশকিছু তথ্য। হত্যাকা-ে জড়িত শিহাব, ইমন, আকাশ ও রূপকসহ সাতজনই কিশোর গ্যাঙের সদস্য। ওই গ্যাঙে রয়েছে শহরের ফার্মপাড়া, হকপাড়া, বেলগাছি, হাসপাতালপাড়া, শান্তিপাড়া, মুসলিমপাড়াসহ আশপাশ এলাকার প্রায় অর্ধশত কিশোর। যার নেতৃত্বে রয়েছে শান্তিপাড়ার ইউসুফ আলীর ছেলে এমদাদুল হক আকাশ। এর আগেও হত্যা-ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকা-ে উঠে আসে আকাশ ও তার নেতৃত্বাধীন কিশোর গ্যাঙের সদস্যদের নাম। আর চাঁদাবাজি-জোরপূর্বক টাকা আদায়ের অভিযোগ তো নিত্যদিনের। এসব ঘটনার অভিযোগে মামলা থাকা স্বত্বেও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াই আকাশসহ গ্যাঙের সদস্যরা। শুধু তাই নয় বিভিন্ন এলাকায় শুরু করে ত্রাসের রাজত্ব। মাঝেমধ্যেই পাড়া-মহল্লায় ধারালো অস্ত্রের মহড়া দিতেও দেখা যায়। এর আগে শান্তিপাড়ার নির্মাণাধীন চারতলা ভবন থেকে দেশীয় অস্ত্র ও মাদকসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ১৩ জনের নেতৃত্বেও ছিলো আকাশ। পরে আকাশের স্বীকারোক্তিতে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। গ্যাঙ লিডার এমদাদুল হক আকাশ ও তার গ্রুপের সদস্যরা মূলত একটি রাজনৈতিক দল ও অঙ্গ সংগঠনের ছত্রছায়ায় থেকে কৌশলে এসব অপরাধ কর্মকা- পরিচালনা করে আসছিলো বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চেও নেতাদের আশপাশে দেখা যায় তাদের।
নিহত তপুর বড়ভাই মাসুদুর রহমান জানান, তপু কোনো রাজনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত ছিলো না। এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে বিদ্যালয়ে গিয়েছিলো। সেখানে ওরা আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। কি কারণে মেরেছে আমরা কিছুই জানি না। তপুর কোনো শত্রুও ছিলো না। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More