চাকরি দেয়ার নামে হাতিয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা : ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল রোডে সাসকো গ্রুপের নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা

স্টাফ রিপোরর্টার: চুয়াডাঙ্গা শহরের হাসপাতাল সড়কে হেলথ এইড মেডিকেল সেন্টারের বিপরীতে একটি বাসার নিচ তলায় দুটি মাত্র রুম নিয়ে সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান সাসকো গ্রুপের নাম ব্যবহার করে ব্যানার ফেস্টুন ও সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিলেন সদর উপজেলার মাখালডাঙ্গা গ্রামের মৃত কলম আলী বিশ্বাসের ছেলে নাজমুল হক। ভাওয়াল অ্যাসোসিয়েশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন হাজি রিয়াজ উদ্দীন পার্ক (৩য় তলা) মাওনা চৌরাস্তা, শ্রীপুর গাজীপুর সাসকো হেলথ কেয়ার ইন্টা. এনজিও নামে অস্পৃষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানের চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনের অনুমতিপত্র থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির মূল অনুমোদনের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি নাজমুল হক। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালায় সদর উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভুয়া কোম্পানির কথিত চেয়ারম্যান নাজমুল হককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে এ জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাজ্জাদ হোসেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির রুমজুড়ে চারিদিকে ব্যানার ফেস্টুনে নানা প্রকার লোভনীয় বিজ্ঞাপনে ভরা। চুয়াডাঙ্গার সাবেক পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামেরও একটি ফেস্টুনে টিকা নেয়া ছবি। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা চিহ্নিত করেন ছবিটি করোনাকারীন সময়ে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার। ময়লার ঝুড়িতে বেশ কিছু সিরিঞ্জ ও হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিনের ব্যবহৃত প্যাকেট থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির কথিত চেয়ারম্যান নাজমুল হক টিকা প্রদানের কোনো রেজিস্ট্রার দেখাতে পারেননি। টিকা দেয়ার জন্য প্রশিক্ষিত কোনো নার্স বা চিকিৎসকও সেখানে ছিলো না। সাধারণ ফ্রিজে অন্য টিফিন বাটিতে খাবারের সাথে একই ইউনিটে ভ্যাকসিনগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছিলো। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নামজুল হক নামের ওই ব্যক্তি নামিদামী কোম্পানি সাসকো গ্রুপের নাম ব্যবহার করে সেবাপ্রার্থীদের সাথে প্রতারণা করছিলো। ওই অপরাধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪৪ ধারায় প্রতারণা করায় তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সকল ভুয়া বিজ্ঞাপন খুলে ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি আরেকটি অভিযোগ ছিলো, কর্মীদের বেতন পরিশোধ না করা ও জামানত বাবদ টাকা নিয়ে ফেরত না দেয়া। এটাও একটি প্রতারণার বিষয়। ভুক্তভোগীদের আমরা পরামর্শ দিয়েছি, আইনগতভাবে এর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। এ সময় তিনি আরও বলেন, আমরা অভিযান শুরু করেছি। প্রতারণা গ্রুপ থেকে যাতে রক্ষা করা যায় সেই চেষ্টা আমরা করবো। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যহত থাকবে। এদিকে, চাকরি দেয়ার নাম করে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে জামানত বাবদ ১০ লাখ টাকার উপরে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে ভুয়া এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। বেশ কয়েকজন তরুণ ও তরুণী অভিযোগ করেছেন, জামানত বাবদ এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা করে কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন প্রতারক নাজমুল হক। দামুড়হুদার বুইচিতলা গ্রামের মাওলা বক্সের মেয়ে শিক্ষার্থী মাহফুজা খানম বলেন, প্রথম দিকে ভালো বেতন এবং সুযোগ সুবিধার কথা বলেছিলো। তিনি আমার প্রথম দিন ফরম পূরণ করে ২১১ টাকা নেন। তারপর বলেন ট্রেনিং এর জন্য ২০ হাজার টাকা লাগবে। টাকার জন্য খুব পেসার দিতো। টাকা না দিলে যোগদান হবে না। এভাবে পেশার দিয়ে আমার থেকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। বেতন যা দেয়ার কথা তা কোনো মাসেই দেইনি। আমি অল্প কয়েক মাস কাজ করেছি। উনি আমার বেতনের টাকাই দেননি। আমি বেতনের ১২ হাজার টাকা এখনো পাই। জামানতের এক লাখ ২৫ হাজার টাকাও পাই। কথা ছিলো সেটি আমাদের ফেরত দেয়া হবে। কিন্তু কোনো টাকাই ফেরত দিইনি। কল দিলে বলে আমি ঢাকাতে। দেখা করতে চাই না। আমার জামানতের টাকা এবং বেতন ফেরত পাওয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আলমডাঙ্গা উপজেলার বলেশ্বরপুর গ্রামের তাসফিয়া জামান অভিযোগ করে বলেন, সাসকো অফিসে প্রথম দিন আমার আব্বুর সাথে এসে ফরম পূরণ করি। সেদিনও ফরম পূরন বাবদ কিচু টাকা নেয়। বলেছিলো প্রথম দিনেই ২০ হাজার টাকা লাগবে। আমি আর আম্মু এসে পরেরদিন ২০ হাজার টাকা দিয়ে গেছি। তারপর বলেছে এক সপ্তাহের মাধ্যমে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা লাগবে। এক সপ্তাহের মধ্যে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে গেছি। জামানতের টাকা ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও কোনো টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। প্রথম দিকে আজ দেবো, কাল দেবো করে ঘুরিয়েছেন। এখন পুরোই অস্বীকার করছেন নাজমুল হক। টাকা ফেরত পেতে আগামীকাল (আজ) চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করবো। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান নাজমুল হক বলেন, সাসকো গ্রুপের নাম দেয়া আমার ভুল হয়েছে। এ কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত আমাকে জরিমানাও করেছেন। তবে আমার প্রতিষ্ঠানে ঠিকমতো কাজ না কর‌্য কয়েকজনকে বাদ দেয়া হয়েছে। তারাই আমার ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আমি কারোর থেকে জামানত নেইনি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More