চুয়াডাঙ্গার সংক্রমিত এলাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ২৪ জন করোনা শনাক্ত

কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি: সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় হঠাৎ বেড়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশের বাড়ি দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা এলাকায়। গত এক সপ্তাহে কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের চারজন করোনায় মারা গেছেন। সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা অর্ধশতাধিক। দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে ভারত ফেরতদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ১১ জনের মধ্যে ৭ জনের বাড়িও দামুড়হুদা উপজেলায়।
ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় ওই উপজেলার হরিরামপুর ও শিবনগর গ্রামের সাধারণ মানুষের করোনা পরীক্ষা শুরু করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে শিবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে করোনা পরীক্ষার অস্থায়ী কেন্দ্রে ওই দুই গ্রামের মানুষের কোভিড-১৯ র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। দুপুর পর্যন্ত ১১৮ জনের করোনা পরীক্ষায় ১২ নারীসহ ২৪জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। সকালে ওই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আলি মুনছুর বাবু। এ সময় দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুদীপ্ত কুমার সিংহ, দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেক, কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানসহ কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত দামুড়হুদা উপজেলা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে বেলা ১১টার দিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় দামুড়হুদা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের সাতটি গ্রামে লকডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। লকডাউনের আওতায় আনা গ্রামগুলো হচ্ছে শিবনগর, হরিরামপুর, পীরপুরকুল্লা, মুন্সীপুর, কুতুবপুর, জাহাজপোতা ও হুদাপাড়া। লকডাউন করা হয়েছে নাটুদহ ইউনিয়নের দুটি এলাকাও। লকডাউনকৃত এলাকাগুলো হলো- কার্পাসডাঙ্গা-ঠাকুরপুর সড়ক, কার্পাসডাঙ্গা-কুতুবপুর সড়ক, কার্পাসডাঙ্গা মিশনপাড়া সড়ক, তালসারি মোড়, নাটুদহের গোচিয়ারপাড়া মোড় ও ফকিরপাড়া মোড়। মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি গ্রামের প্রবেশমুখে বাঁশ ও কাঠের গুঁড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। পুলিশ, আনসার, গ্রামপুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে পাহারা বসানো হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে। এই এলাকায় রয়েছে চুল প্রক্রিয়াজাতকরণের অনেকগুলো কারখানা। সেগুলো আগামী এক মাস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল জানান, দামুড়হুদা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী হরিরামপুর ও শিবনগর গ্রামে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনার উপসর্গ থাকলেও তা পরীক্ষা করাতে অনীহা প্রকাশ করেছে এখানকার মানুষ। তাই গতকাল সকাল থেকে তাদের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। দুপুর পর্যন্ত ১১৮ জনের করোনা পরীক্ষায় ১২ নারীসহ ২৪ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের শরীরে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য তাদের নমুনা আইইডিসিয়ারে পাঠানো হবে। সংক্রমণ বাড়লে পর্যায়ক্রমে বাকি গ্রামের মানুষেরও করোনা পরীক্ষা করা হবে। তিনি আরও জানান, গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠানো হবে। অন্যদের নিজবাড়িতে আইসোলেশনে রাখা হবে।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান জানান, গেল সোমবার করোনার সংক্রমণরোধে জরুরি সভার আয়োজন করে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত দামুড়হুদা উপজেলা কমিটি। সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে কার্পাসডাঙ্গা ও নাটুদহ ইউনিয়নের কিছু এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। ওই এলাকাগুলো নিয়মিত তদারকি করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে করা হবে জরিমানাও। এছাড়া ওই এলাকার চুল ব্যবসায়ীদের সকল কার্যক্রম এক মাসের জন্য স্থগিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More