চুয়াডাঙ্গায় করোনা উপসর্গ নিয়ে এক স্কুল শিক্ষকসহ দুজনের মৃত্যু : নতুন শনাক্ত ২৭

সর্দি কাশি জ্বর আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য বাড়ছে ভিড়

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলার আরও দুজন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার মারা যাওয়া দুজনের একজনের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের দৌলাতদিয়াড় সরদারপাড়ায় ও অপরজনের বাড়ি জীবননগর উপজেলার তারিনীবাস গ্রামে। এছাড়া বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গার আরও ২৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ দিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০৬ জনে।

চুয়াডাঙ্গায় ব্যাপকহারে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হচ্ছে। ঘরে ঘরে সর্দি কাশি জ্বরের রোগী বাড়ছে। ফলে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়ার জন্য প্রতিদিনই হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে। বাড়ি থেকে নমুনা নেয়ার আবেদনও জমছে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট দফতরে। বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ আরও ৬০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করেছে। এদিন চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে রিপোর্ট আসে ৬১ জনের। এর মধ্যে পজিটিভ হয়েছে ৩২ জনের। ৫ জনের রিপোর্ট পুনঃপরীক্ষার রিপোর্ট হলেও বাকি ২৭ জন নতুন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হলো। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ১৬ জন। এরা হলেন চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারপাড়ার আরও ৪ জন, চক্ষুহাসপাতালপাড়ার ৩জন, পুলিশ অফিসের একজন, আনসার ব্যাটালিয়নের একজন, বোয়ালমারীর একজন, দৌলাতদিয়াড় বাসস্ট্যান্ডপাড়ার একজন, কলেজপাড়ার একজন, নূরনগরের একজন, মাঝেরপাড়ার একজন, বেলগাছির একজন, ফার্মপাড়ার একজন। একজন সদর উপজেলার ঠিকানা দিলেও জীবননগর এইচ ৬৩, রোড ০৩ সিটি করপোরেশন ঠিকানা দিয়েছেন। তারও রিপোর্ট করোনা পজিটিভ হয়েছে। আলমডাঙ্গা উপজেলার আসমানখালীর একজন, আলমডাঙ্গা কলেজপাড়ার একজন, উপজেলা ল্যান্ড অফিসের একজন। জীবননগর উপজেলা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন, আশতলাপড়ার একজন, হাসপাতালপাড়ার দুজন। আর দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুরের একজন, পুরাতন বাজারপাড়ার একজন, খাপাড়ার একজন করোনা পজিটিভ হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগসূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ জন। উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ জন। এর মধ্যে গত বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তিনজন। বৃহস্পতিবার আরও ১৮জন সুস্থ হয়েছেন। এ দিয়ে মোট সুস্থ হলেন ২শ’ ৯৭ জন। প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলশেন রয়েছেন ৫৯ জন, বাড়িতে চিকিৎসাধীন ২৩৮ জন। বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে নিজ বাড়িতেই মারা গেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের দৌলাতদিয়াড় সরদারপাড়ার কাছেদ আলী মোল্লা। তার ছেলে করোনা আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুত্রবধূও করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থতা পেয়েছেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে নিজ বাড়িতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তার নমুনা সংগ্রহ করে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দাফনের অনুমতি দেয়া হয়।

অপরদিকে আমাদের হাসাদাহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জীবননগর উপজেলার তারিনীবাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন বলে জানা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টার সময় যশোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মারা যান বলে তার পারিবারিক মাধ্যমে জানা যায়। জানা যায়, তারিনীবাস গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের বড় ছেলে নুরুল ইসলাম (৬০)। তিনি বেশ কয়েকদিন যাবৎ ঠান্ডা জ্বরে ভুগছিলেন। গতকাল রাত্রে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুতই ভর্তি করে নেন এবং সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু করেন। পরে মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। নুরুল ইসলাম বর্তমানে তারিনীবাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে তার মৃত্যুর বিষয়টি জীবননগর উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করলে উপজেলা প্রশাসন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই লাশের দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেন।

উল্লেখ্য, তিনি ২০২১ সালের মার্চ মাসের দিকে অবসরে যেতেন বলে পারিবারিকভাবে জানিয়েছেন। এর আগে বুধবার রাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের উকতো গ্রামের নবিছদ্দিন নামের একজন বৃদ্ধ করোনা উপসর্গ নিয়ে সদর হাসপাতালের হলুদ জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তারও নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গায় সর্দি কাশি জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে যেমন বাড়ছে ভিড়, তেমনই পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে বিলম্ব হওয়ায় আক্রান্তদের রোগ জটিল থেকে জটিলতর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ ৬০ জনের নমুনা সংগ্রহ করতে পেরেছে। এ দিয়ে মোট নমুনা সংগ্রহের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৪৩। রিপোর্ট পেতে বাকি দু শতাধিক। নমুনা দিয়ে রিপোর্ট পেতে বিলম্ব হওয়ার কারণে অনেকেই জনসাধারণের মাঝে ঘুরে যেমন করোনা সংক্রমণ করছেন, তেমনই অনেকেই দ্রুত রিপোর্ট না পেয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রিপোর্ট পেতে বিলম্ব হওয়ার কারণে পরিবারেও দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনা। এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির বিশেষ উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে অনেকেরই অভিমত।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More