চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাস ও উপসর্গে আরও ৫ জনের মৃত্যু : নতুন শনাক্ত ১১১জন

সপ্তাহজুড়ে নমুনা সংগ্রহ অনুপাতে কোভিড-১৯ শনাক্ত রোগীর হার কিছুটা কমেছে : টিকা নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে আরও ৫ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একজনের বাড়ি হরিণাকু-ু উপজেলায়। আক্রান্তদের অনেকে পরীক্ষা করিয়ে এবং না করিয়ে বাড়িতে মৃত্যুবরণ করায় জেলার প্রকৃত চিত্র যেমন পাওয়া যাচ্ছে না, তেমনই স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্যের সাথে বাস্তবের তথ্যেও মিল থাকছে না। গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় আরও ১১১ জন নতুন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলারই ৫৮ জন। বর্তমানে জেলায় শনাক্তকৃত সক্রিয় রোগী রয়েছেন ১৯৯৩ জন। ১ হাজার ৮শ ৬৮ জন রয়েছেন বাড়ি।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ মঙ্গলবার ৩৭৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে প্রেরণ করেছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ১৮ হাজার ৬৫ জনের নমুনা নেয়া হলো। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার ৩৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মোট ১৭ হাজার ৬শ ৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। নতুন ১১১ জন শনাক্তকৃত রোগী নিয়ে জেলায় মোট শানাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯শ ২৪ জন। গতকাল মঙ্গলবার আরও ৫৩ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন ২ হাজার ৭শ ৮৮ জন। স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া হিসেব অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় মোট মৃতের সংখ্যা ছিলো ১৪৩ জন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় মারা গেছেন ১২৭ জন। চুয়াডাঙ্গার বাইরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৬ জন। অবশ্য বাস্তবের সাথে এ হিসেবের মিল নেই। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। একজন মারা গেছেন হাসপাতালে একজন মারা গেছেন নিজবাড়িতে। হাসপাতালে মৃতের হিসেব উঠেছে স্বাস্থ্য বিভাগের নথিতে। এছাড়াও করোনা উপসর্গ নিয়ে যে দুজন মারা গেছেন তাদের করোনায় মৃত্যুর হিসেবে নেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া শুধু বেশি বয়সীরই মারা যাচ্ছে না, করোনা ৩০/৩২ বছর বয়সীদেরও নিশ^াস নেয়ার শক্তি কেড়ে নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢেলে দিচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ৩ জনের মধ্যে দুজনের মধ্যে একজনের বয়স ৩০ বছর অপরজনের ৩২ বছর।
মঙ্গলবার যে দুজন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে জানা গেছে তার মধ্যে দামুড়হুদা দশমীপাড়ার সৈয়দ কাশেম আলীর ছেলে সৈয়দ মামুনুর রহমান। তিনি সর্দি কাশি জ¦র গলায় ব্যথায় আক্রান্ত হলে নেয়া হয় সদর হাসপাতালে। ৭ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নমুনা পরীক্ষা করে তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন। তাকে রেডজোনে নিয়ে চিকিৎসা চলছিলো। গতকাল মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে মারা যান ৬৫ বছরের মামুনুর রহমান। এদিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা কুলচারার জিতুয়ার রহমান বিশ^াসের ছেরে জামাল উদ্দীন বিশ^াস বেশ কিছুদিন ধরে সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছিলেন। তারও নমুনা পরীক্ষা করে কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়। তিনি নিজবাড়িতেই আইসোলেশনে ছিলেন। করোনা ছাড়াও তিনি বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। গতকাল দুপুরে শ^াস কষ্ট বাড়ে। হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান ৫২ বছর বয়সী জামাল উদ্দীন বিশ^াস। অপরদিকে ঝিনাইদহ হরিণাকু-ুর পারদখলপুরের সওত আলীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস সর্দি কাশি জ¦রে আক্রান্ত হন। তাকে সোমবার রাত ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হলুদ জোনে ভর্তি করে চিকিৎসা চলছিলো। র‌্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় রিপোর্ট কোভিড-১৯ নেগেটিভ আসে। যেহেতু র‌্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় নেগেটিভ এলেও তা শতভাগ নিশ্চিত নয়, সেহেতু নমুনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করা হয়। রিপোর্ট আসার আগেই গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মারা যান ৩২ বছর বয়সী আব্দুল কুদ্দুস। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের কুতুবপুর ইউনিয়নের দত্তাইলের সোবহান মল্লিকের স্ত্রী সোহাগী খাতুনকে গত জুলাই সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নমুনা নেয়া হয়। গতপরশু রাতে মারা যান ৬৬ বছর বয়সী সোহাগী খাতুন। হলুদ জোনে আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। দামুড়হুদা মদনার মুন্তাজ আলীর ছেলে ইমরান হোসেনকে গত ৮ জুলাই দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। উপসর্গ থাকায় তাকে হলুদ জোনে ভর্তি করে নমুনা নেয়া হয়। পরশু মধ্যরাতে মারা যান ৩০ বছর বয়সী ইমরান হোসেন।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে গতকাল মঙ্গলবার ৩৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এর মধ্যে পজিটিভ হয়েছে ১১১ জন। সদর উপজেলার ৫৮ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৭ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ১৯ জন ও জীবননগর উপজেলার ১৭ জন। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে রোগী শনাক্তের হার কিছুটা কমে গত এক সপ্তাহে ৩০ দশমিক ২৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের মোট ৮৩ জন আক্রান্তের মধ্য সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭১ জন। বাকিরা রয়েছেন আইসোলেশনে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড তথা রেডজোনে উপচেপড়া রোগীর ভিড়। রোগী অনুপাতে চিকিৎসক যেমন সংকট, তেমনই স্বাস্থ্য কর্মীরও অভাব। স্বেচ্ছাসেবী দিয়ে দায়িত্বপালন করানো হলেও তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠছে। তবে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জরুরি চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ, পথ্য এবং অক্সিজেন এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। তিনি বলেছেন, পবিত্র ঈদুল আজহা’র জন্য কয়েকদিনের জন্য লকডাউনের বিধি নিষেধ শিথিল করা হলেও সচেতন সকলকে নিজ নিজ দায়িত্বেই নিজেকে সুরক্ষার্থে নিরাপদে থাকতে হবে। তাছাড়া টিকাকরণের কাজ অব্যাহত রয়েছে। সকলকে টিকা নেয়ার বিষয়ে আগ্রহী হতে হবে। টিকা নিতে হলে প্রথমে সুরক্ষা নামক সাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এরপর ম্যাসেজের মাধ্যমেই জানিয়ে দেয়া হবে কবে তাকে টিকা দেয়া হবে। টিকা নেয়া এখন খুবই জরুরি। টিকা না নিয়ে নিজেকে আড়াল করে পরে বড় ধরনের খেসারত দিতে হতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত দুদিন ধরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে টিকা গ্রহণকারীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আজ বুধবার থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও টিকা দেয়া হবে। ফলে সদর হাসপাতালে ভিড় কিছুটা কমতে পারে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More