চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর মৃত্যু

এক সপ্তাহে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ ১৭৫ রোগী ভর্তি

আফজালুল হক: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি ডায়ারিয়া আক্রান্ত ছিলেন। গতকাল শনিবার রাত ১১টার দিকে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ওই নারীর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে। পরে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে দুপুরের দিকে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হন রাবেয়া খাতুন নামের ওই নারী। তবে চিকিৎসক বলছেন, হার্ট ও ডায়াবেটিক গুরুতর অবস্থা ধারণ করায় ডায়রিয়া ওয়ার্ড থেকে রাবেয়া খাতুনকে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে রেফার করা হয়। এর ২ মিনিট পরই তার মৃত্যু হয়। রাবেয়া খাতুন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের আকন্দবাড়িয়া গ্রামের ফার্মপাড়ার ফারুক হোসেনের স্ত্রী।

এদিকে, আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত কারণে চুয়াডাঙ্গায় বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ৭ দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শিশুসহ ১৭৫ জন ভর্তি হয়েছেন। এমনকি প্রতিদিন বহির্বিভাগে ১০০-১৫০ ডায়রিয়া রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হন রাবেয়া খাতুন। রাত ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত রাবেয়া খাতুনের ছেলে কানন বলেন, গতকাল শনিবার সকালে আমার মা পাতলা পায়খানা ও বমি করেন। কয়েকবার পাতলা পায়খানা করলে আমরা তাকে স্থানীয় চিকিৎসকের নিকট নেয়া হলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। দুপুর ১টার দিকে সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করি। এরপর থেকে আমার মা কিছুটা সুস্থবোধ করছিলেন। রাত ১১টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে সময় জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আমার মারা গেছে বলে জানান। রাবেয়া খাতুনকে অন্য ওয়ার্ডে রেফার্ড করা হয়েছিলো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মাকে চিকিৎসক রেফার করেনি। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে অসুস্থ হয়ে পড়লে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এসে মৃত ঘোষণা করেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. লিওন বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গতকাল দুপুরে রাবেয়া খাতুন ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। হার্ট ও ডায়বেটিক গুরুতর অবস্থায় ধারণ করায় রাত ১০ টা ৫৮ মিনিটের দিকে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে রেফার করি। এর ২ মিনিট পরই রাবেয়া খাতুনের মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে জানতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আতাউর রহমান, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এএসএম ফাতেহ আকরাম ও সিভিল সার্জন ডা. মো. সাজ্জাৎ হাসানের মুঠোফোনে একাধিক কল করা হলেও ফোন ধরেননি।

এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, দুটি কক্ষ নিয়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে কোনো শয্যা খালি নেই। ফলে মেঝেতেই শিশুসহ রোগীদের থাকতে হচ্ছে। জায়গা না থাকায় বাইরের বারান্দার মেঝেতে রোগীদের চিকিৎসা চলছে।

আফরোজা খাতুন নামে এক নারী বলেন, হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কোনো জায়গা নেই। আজ তিন দিন ধরে মেঝেতে আমার চিকিৎসা চলছে। ইসহাক নামে এক যুবক বলেন, দুদিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আমি। গত শুক্রবার দুপুরে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। ওয়ার্ডে কোনো জায়গা নেই। মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে সব ধরনের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। সাদিয়া আফরীন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, গতকাল শনিবার বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে ফুচকা খেয়েছিলাম। সন্ধ্যা থেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।

চিকিৎসকরা বলছেন, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় গ্রহণ এবং অনিরাপদ পানির কারণে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্সরা জানান, এই কয়েক দিনে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই বয়স্ক। শিশু রোগী কম আছে। খুব বেশি একটা চাপ নেই। এমন হতে থাকলে সামলাতে হিমশিম খেতে হবে আমাদের।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More