দামুড়হুদায় খোঁড়াখুঁড়ি করে ফেলে রাখায় সড়কে ধানের চারা রোপন করে প্রতিবাদ

জহির রায়হান সোহাগ:  সড়ক পাঁকাকরণের কাজ শুরুর কথা ছিল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে।  এর বেশ কিছুদিন পর শুরু হয় খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। পরে দীর্ঘ কয়েক মাস থেকে ফেলে রাখা হয়েছে সড়কের কাজ।  আর সেই থেকেই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দারা।  সড়ক খুঁড়ে রাখায় গত ৫ মাস ধরে দুর্ভোগের অন্ত নেই তাদের।  এই বর্ষা মৌসুমে ১ কিলোমিটার সড়কের অর্ধেকেরও বেশি স্থানে কোথাও জমে রয়েছে হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমড় পানি।  কোমড় পানি পার হতে ব্যবহার করতে হচ্ছে টিনের তৈরি ছোট নৌকা।  পানি জমে থাকায় হাঁটু পরিমাণ কাদায় পরিণত হয়েছে সড়কটির আধা কিলোমিটারেরও বেশি জায়গায়।  ওই সড়কের পাশ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন গ্রামের বেশ কয়েকজন।  মাঠ থেকে মৌসুমী ফসল বাড়ি তুলতে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের। গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। সড়কের ওই দুরাবস্থার কারণে পণ্য আনা–নেয়া করতে পারছেন না ওই এলাকার ব্যবসায়ীরাও।  ঠিকাদার ঢিমেতালে কাজ করায় সড়কের এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সড়কের এমন বেহাল দশার কারণ হিসেবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকেই দুষছেন তারা। দীর্ঘ দিন থেকে সড়কের কাজ শুরু করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে বারবার তাগাদা দেয়া হলেও কোন লাভ হয়নি।  তাই ক্ষুদ্ধ হয়ে ওই সড়কে ধানের চারা রোপন করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন গ্রামবাসী।  গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সড়কের উপর ধানের চারা রোপন করেন তারা।  পরে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।  সেখানেও শুরু হয় নানা আলোচনা সমালোচনা।

চুয়াডাঙ্গা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে,  হোগলডাঙ্গা নতুন পাড়া থেকে পুরাতন পাড়া কবরস্থান পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সড়কটি পাঁকাকরণের জন্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দরপত্র আহবান করা হয়। কাজটি পান জীবননগরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ওয়ান টু ওয়ান এন্টারপ্রাইজ। ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক পাঁকাকরণের কাজ শুরু কথা বলা হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে।  কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে আগামী বছরের ৭ মার্চে।   হোগলডাঙ্গা গ্রামের লোকজন জানান, কাজ শুরুর সেই থেকে সড়কটি গর্ত করে কেটে ফেলে রাখেন ঠিকাদারের লোকজন।  ঠিকাদারের অবহেলা ও গাফিলাতির কারণে সড়কটি এখনও ওভাবেই পড়ে আছে।  ফলে গত কয়েক মাস ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ওই সড়কটি। ১ কিলোমিটার সড়কের অর্ধেকেরও বেশি জায়গায় এখন জমে রয়েছে হাঁটু পানি।  এই বর্ষায় হাঁটু পানির জলাবদ্ধতা পরিণত হয়েছে কোমড় পানিতে। ওখানে পারাপার হিসেবে ব্যবহার করতে হচ্ছে ছোট নৌকা।  অপরদিকে, সড়কে হাটু সমান কাঁদা হওয়ায় দুর্ভোগে রয়েছেন কৃষকরা।  মাঠ থেকে মৌসুমি ফসল ঘরে তুলতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।  শ্রমিক বাবদ গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।  অসুস্থ রোগীদের নিয়ে হাসপাতালে যেতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামবাসীকে। সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।  গ্রামের এক পাড়ায় সাইকেল রেখে তারপর যেতে হচ্ছে অন্য পাড়ায়।  আবার সাইকেল কাঁধে করে সড়ক পার হচ্ছেন কেউ কেউ।  অন্যান্য যানবাহন চলাচলের কোন সুযোগ নেই এই সড়কে। সড়ক উন্নয়নের নামে এমন দুর্ভোগে যেন নাভিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে ভুক্তভোগীদের মাঝে। যেন এখানেই ম্লান হয়ে গেছে সরকারের উন্নয়ন।  ঠিক সময়ের মধ্যে সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হবে না বলে আশঙ্কাও করছে এলাকাবাসী। হোগলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা বায়জিদ হাসান তনু জানান, গ্রামের ভিতরের ১ কিলোমিটার সড়ক গত ৫ মাস আগে কেটে রাখা হয়েছে পাঁকাকরণের জন্য।  এখনও সড়কটির কাজ শুধু খোঁড়াখুঁড়ির মধ্যে সীমাবন্ধ রয়েছে। সড়কটি পাঁকা হবে জেনে ভীষণ খুশি হয়েছিল এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।  কিন্তু কাজের আর কোন অগ্রগতি নেই।  এলজিইডির প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের গাফিলতিতে চরম দুর্ভোগে রয়েছি আমরা।  এরই প্রতিবাদে ওই সড়কে ধানের চারা রোপন করেছে গ্রামের লোকজন।  গ্রামের ষাটোর্ধ আজিজুর রহমান জানান, বর্ষা মৌসুমে সড়কটিতে হাঁটু সমান পানি জমে কাঁদার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি যেন এলাকাবাসীর জন্য অভিশপ্ত হয়ে উঠেছে।  মালামাল আনা নেয়া তো দূরের কথা, মানুষ হেটেও চলাচল করতে পারছেনা ওই সড়ক দিয়ে।   সঠিক সময়ে যদি দ্রুত কাজ শুরু করতো তাহলে এমন অবস্থা তৈরি হতো না। গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, খুঁড়ে রাখার কারণে ওই রাস্তা দিয়ে মাঠে পাওয়ার ট্রিলার নিয়ে মাঠে যাওয়া যায় না।  ধান ও অনান্য ফসল কেটে গাড়িতে করে নিয়ে আসার কোন ব্যবস্থা নেই।  ফসল বহু কষ্ট করে মাথায় করে আনতে হয়েছে।  বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়াও খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।  এতে বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে। এই গ্রামের ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম জানান, বাড়ি থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে এই রাস্তার জন্য।  বর্ষার সময়ে যে দুর্ভোগ তা কেউ সরেজমিনে না এসে দেখলে বুঝতে পারবে না।   এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ওয়ান টু ওয়ানের স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন জানান,  আমার ছোট ভাই ওয়াশিম রাজা জীবননগর পৌরসভার কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচন করেছে। সেখানে সময় ব্যয় করতে হয়েছে।  এছাড়া আলমডাঙ্গায় আমার একটি কাজ চলছে। সেটাও দেখভাল করতে হয়েছে।  সব মিলিয়ে হোগলডাঙ্গার কাজটা করতে বিলম্ব হয়েছে।  ওই সড়কে ইতিমধ্যে বালি ফেলা হয়েছে। পানি নিষ্কাশন করে কাজ শুরু করতে শ্রমিকদের বলা হয়েছে।  কিন্তু এই বৃষ্টির মধ্যে পুরোপুরিভাবে কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে সড়ক থেকে পানি নিষ্কাশন করে দ্রুত কাজ শুরুর জন্য বলা হয়েছে বলে জানান চুয়াডাঙ্গা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ সানা।  তিনি জানান, বিষয়টি জানার পর ঠিকাদারকে সড়কের কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।  ওই সড়ক থেকে পানি নিষ্কাশন করে বালি ফেলতে বলা হয়েছে।  আশাকরি খুব দ্রুতই মানুষের দুর্ভোগ দূর হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More