দুদিনেও ফেরত দেয়নি দামুড়হুদা ছোটবলদিয়ার মোনতাজের লাশ

সীমান্তরক্ষীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাটা ভারতের জন্য লজ্জার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

চুয়াডাঙ্গা সাতক্ষীরা সীমান্তে একই রাতে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত

স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরা ও চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে কয়েকঘণ্টার ব্যবধানে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সীমান্তে উদ্ধার করা হয়েছে। অপরজনের মরদেহ বিএসএফ নিয়ে গেছে বলে জানায় এলাকাবাসী। নিহতরা হলেন- সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কুশখালী গ্রামের মক্তব মোড়ের হায়দার আলীর ছেলে হাসানুজ্জামান এবং চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা ছোটবলদিয়া গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে মোনতাজ আলী। নিহত মোনতাজ আলী উপজেলার ছোটবলদিয়া গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে।

এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভারত যদি তাদের সীমান্তরক্ষীদের নিয়ন্ত্রণে না রাখে, একটি শক্তিশালী, উন্নত ও পরিপক্ব গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে তা লজ্জাজনক। সোমবার বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে দুই বাংলাদেশির নিহতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ মন্তব্য করেন। মন্ত্রী আজ তার দপ্তরে এ কথা বলেন। গত শনিবার দিবাগত রাতে চুয়াডাঙ্গার বলদিয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে মুনতাজ হোসেন ও সাতক্ষীরার খৈতলা সীমান্তে মো. আবু হাসান নিহত হন। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিষয়ে দুই দেশের অঙ্গীকারের পরও সম্প্রতি দুই বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। কদিন পরপর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মানুষ মারা যায়। যদিও এটা সর্বোচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা একটা লাশ সীমান্তে দেখতে চাই না। কিন্তু তারপরও দুর্ঘটনা ঘটে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি প্রায়ই বলে থাকি, আগেও বলেছি; এটি (সীমান্তে হত্যা) আমাদের জন্য দুঃখজনক আর ভারতের জন্য লজ্জাজনক। কারণ, তারা তাদের বাহিনীকে যদি নিয়ন্ত্রণে না রাখে-ভারতের মতো একটি শক্তিশালী, উন্নত ও পরিপক্ব গণতন্ত্রের দেশ, তারা যদি তাদের লোকগুলোকে (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী) নিয়ন্ত্রণে না রাখে, এটি তাদের জন্য লজ্জাজনক।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দর্শনা ছোট বলদিয়া সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে মোনতাজ আলী নামের এক বাংলাদেশি গরু ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। দু’দিন পেরিয়ে গেলেও মোনতাজের লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ। লাশের আসায় প্রহরগুণছে তার স্বজনেরা। বিএসএফ কখন নাগাদ লাশ ফেরত দেবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

জানা গেছে, গত শনিবার রাতে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ছোট বলদিয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মোনতাজ আলী (৩৫) কয়েকজন সঙ্গীদের সাথে অবৈধভাবে ভারতের অভ্যন্তরে ঢুকে মহিষ নিয়ে আসছিলেন। এ সময় রাতের আধারে  ৪টি মহিষ নিয়ে ৮২/৮৩ মেইন পিলালের মধ্যবর্তী ৩নং সাব পিলারের নিকট পৌঁছুলে ভারতীয় বিএসএফ চোরাচালানীদের উপস্থিতি টের পেয়ে ৭-৮ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ সময় অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও   বিএসএফের গুলিতে মোনতাজ আলী ঘটনাস্থলে নিহত হয়। রোববার সকালে তার মৃত্যুর সংবাদ গ্রামে পৌঁছুলে স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে এলাকার বাতাস।

পারকৃষ্টপুর-মদনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম জাকারিয়া জানান, শনিবার দিবাগত রাতে মোনতাজসহ ৫-৬ জন বাংলাদেশি মহিষ আনতে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। রাত দেড়টার দিকে তারা মহিষ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিলেন। সে সময় সীমান্তের ৮৩নং মেইন পিলারের কাছে ভারতের মোকামতলা বিএসএফের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে মোনতাজ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অন্যরা পালিয়ে আসেন। সকাল ১০টায় নিহতের মরদেহ বিএসএফ সদস্যরা উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে।

ভারতের কৃষ্ণগঞ্জ থানার ওসি বাবিন মুখার্জী জানান, রোববার সকাল ১০টায় ৩এস পিলারের নিকট থেকে বিএসএফ’র গুলিতে নিহত  বাংলাদেশি এক মহিষ ব্যবসায়ীর মরদেহ থানায় হস্থান্তর করেছে বিএসএফ সদস্যরা। অবৈধভাবে ভারতের অভ্যন্তরে ঢুকে মহিষ নিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানায় বিএসএফ সদস্যরা। এ বিষয়ে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ এএইচএম লুৎফুল কবীর জানান, একটি গুলিবিদ্ধ মহিষসহ মোনতাজের লাশ বিএসএফ সদস্যরা উদ্ধার করেছে বলে জানতে পেরেছি, তবে মোনতাজের মরদেহ বাংলাদেশে আনার আইনগত প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। ওই ঘটনায় আইনগত বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি পরিচালক লে. কর্নেল শাহ মোহাম্মদ ইশতিয়াক জানান, ঘটনাটি শুনেছি। আমরা বিএসএফ’র সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কালিয়ানি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত রোববার ভোর রাতে দিকে একইভাবে কয়েকজন সঙ্গীর সাথে ভারতের কৈজুরী সীমান্ত পার হয়ে দেশে ফিরছিলো। পতিমধ্যে ভোর রাত ৪টার দিকে ভারতের কৈজুরী ক্যাম্পের টহল বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে হাসানুর বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। এ সময় তার সঙ্গীরা তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়। তার অবস্থার অবনতি হতে থাকলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে খুলনায় রেফার করে। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা সার্জিকাল হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎস্যকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তবে নিহত হাসানের শ্বশুর সদর উপজেলার ঘোনা মোল্লাপাড়ার সাইফুল ইসলাম জানান, তার জামাতা হাসানুর ভারতীয় চোরাই পণ্য আনা নেয়ার জন্য পাসিংম্যান হিসেব কাজ করতো। তার বিরুদ্ধে ৫টি মাদকের মামলাও রয়েছে। মাসের এক সন্তানের জনক সে। শনিবার রাতে সে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে আনার জন্য পাসিং ম্যানের দায়িত্ব পালন করতে সীমান্তে অবস্থান করছিল। দুবলী ক্যাম্পের বিএসএফ তাকে গুলি করেছে মর্মে তিনি জেনেছেন।

সাইফুল ইসলাম আরো জানান, তার মেয়ে সুরাইয়া ইয়াসমিনের কোলে আট মাসের রিফাত আমিন নামে এক শিশুপুত্র রয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আশরাফুল ইসলাম জানান, হাসানের পেটের ডান দিকে গুলিবিদ্ধ হয়। তবে খুলনায় নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়েছে।

সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি’র অধিনায়ক লে.কর্ণেল আল মাহমুদ জানান, কালিয়ানি সীমান্তের খৈতলায় বিএসএফ’র গুলিতে হাসানুর নামের এক বাংলাদেশির মৃত্যুর ঘটনায় রোববার দুপুর দু’টোয় কালিয়ানি ও ভারতের কৈজুড়ি সীমান্তের শূন্য রেখা বরাবর বিজিবি ও বিএসএফ’র ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে এক পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বিএসএফ হাসানুরকে গুলি করার কথা অস্বীকার করেছে। তবে নিহত হাসানুর অবৈধপথে আনা ভারতীয় পণ্য পাসিংয়ের কাজ করতো বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More