নিখোঁজের প্রায় দু’মাস পর আলমগীরের কঙ্কাল উদ্ধার : বন্ধু শিপন স্ত্রীসহ আটক

আলমডাঙ্গার খাদিমপুরে মাছ ধরতে গিয়ে কচুরিপানার নিচে মিললো গলিত লাশ : পোশাক দেখে শনাক্ত
স্টাফ রিপোর্টার: আলমডাঙ্গায় নিখোঁজের প্রায় দুই মাস পর এক যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাড়ির নিকটবর্তী একটি পুকুরের কচুরিপানার নিচ থেকে গতকাল শুক্রবার সকালে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত যুবক আলমগীর হোসেন বিশ্বাস আলমডাঙ্গার খাদিমপুর গ্রামের কাতব আলী বিশ্বাসের ছেলে। পুলিশ বলছে, এটি একটি

আলমগীর

হত্যাকা-। নিহত আলমগীরের পরিবারের অভিযোগ, তার বন্ধু একই গ্রামের শিপন আলী ও শিপনের ধর্ম ভগ্নিপতি মুফা বিশ্বাস টাকার লোভে আলমগীরকে হত্যা করে লাশ গুম করে রাখে। এদিকে, শুক্রবার সকালে আলমগীরের লাশ উদ্ধারের পর থেকে গাঢাকা দেয় প্রধান অভিযুক্ত শিপন আলী, তার স্ত্রী ইভা ও ধর্ম ভগ্নিপতি মুফা বিশ্বাস। তবে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতরাতে অভিযান চালিয়ে গাঢাকা দেয়া শিপন ও তার স্ত্রী ইভা খাতুনকে আটক করেছে থানা পুলিশ। আটক দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। দ্রুতই হত্যার রহস্য উদঘাটন হবে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ।
পুলিশ ও এলাকাসূত্রে জানা গেছে, গত ১০ অক্টোবর বিকেল থেকে নিখোঁজ হন যুবক আলমগীর হোসেন বিশ্বাস (২৭)। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পিতা কাতব আলী ২১ অক্টোবর আলমডাঙ্গা থানায় একটি জিডি করেন। এদিকে, আইনদ্দিন মোল্লার ছেলে পুকুর মালিক উজ্জ্বল মোল্লা, সন্টু মোল্লার ছেলে সাকিব, মৃত শহর আলীর ছেলে সহিদুল ইসলাম বুড়ো, ইমদাদুল মোল্লার ছেলে হাবিব মোল্লা ও ধুলু মাস্টারের ছেলে শিমুল মাছ ধরার জন্য গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে আলমগীরের বাড়ির নিকটবর্তী উজ্জ্বল মোল্লার পুকুরের কচুরিপানা পরিষ্কার করছিলেন। এ সময় কচুরিপানার নিচে চাপা দিয়ে রাখা আলমগীরের লাশ দেখতে পান তারা। খবর দেয়া হয় পুলিশে। আলমডাঙ্গা থানার ওসি আলমগীর কবির সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে যুবক আলমগীর বিশ্বাসের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেন।

মিশন

নিহত আলমগীর বিশ্বাসের প্রতিবেশীরা জানায়, ‘আলমগীর বিশ্বাস গরু পালতেন এবং মোটাতাজা করার পর বিক্রি করতেন। এ কারণে সবসময় তার কাছে নগদ এক আধ লাখ টাকা থাকতো। আলমগীর নিখোঁজ হওয়ার সময়ও তার কাছে নগদ বেশকিছু টাকা ও একটি দামি মোবাইলফোন ছিলো। আলমগীর হোসেনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, ‘একই গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে শিপন আলী ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো আলমগীরের। আলমগীর নিখোঁজ হওয়ার পরদিন রাতে অভিযুক্ত শিপন আলী, প্রতিবেশী ইবাদত হোসেনের মেয়ে স্কুলছাত্রী ইভা খাতুনকে ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় আলুকদিয়া বাজারের নৈশপ্রহরীর হাতে ধরা পড়ে। এরপর তাদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।’ স্কুলছাত্রী ইভার কাছ থেকে শুনেছি বলে জাহাঙ্গীর হোসেন আরও জানান, ‘সে সময় শিপনের কাছ থেকে নগদ ৫৩ হাজার টাকা পুলিশ উদ্ধার করে। ওই টাকার মধ্যে ২০ হাজার টাকা পুলিশকে দিয়ে শিপন ও স্কুলছাত্রীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় অভিভাবকরা।’ এদিকে, এ ঘটনার পর শিপনের সাথে স্কুলছাত্রী ইভা খাতুনের বিয়ে হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) লুৎফুল কবীর মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ‘ওই রাতে টহলরত অবস্থায় ছিলাম। আলুকদিয়ার নৈশপ্রহীরর মাধ্যমে দুজনকে থানায় নিয়ে আসি। শিপনের কাছে ৫২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। পরদিন আলুকদিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আক্তাউর রহমান মুকুল ও তাদের অভিভাবকরা এসে টাকাসহ তাদের নিয়ে যায়।’
নিহত আলমগীরের বোন চাঁনমনি ও ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার (গতকাল) সকালে আলমগীরের লাশ উদ্ধারের পর থেকে গ্রামের শিপন হোসেন ও তার ধর্ম ভগ্নিপতি মুফা বিশ্বাস সটকে পড়েছে। চাঁনমনি ও জাহাঙ্গীর অভিযোগ করে বলেন ‘আলমগীর নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আলমগীরের বন্ধু শিপন হোসেন এবং একই গ্রামের (খাদিমপুর) আলতাফ হোসেনের ছেলে শিপনের ধর্ম দুলাভাই প্রভাবশালী মুফা বিশ্বাস বিভিন্নভাবে আমাদের বিভ্রান্ত করতে থাকে। মুফা আমাদেরকে সেসময় বলেছিলো বেশি খোঁজাখুঁজি বা মামলার দরকার নেই। মাসখানেকের মধ্যে ঠিকই আলমগীর ফিরে আসবে। আমরা ২১ অক্টোবর আলমডাঙ্গা থানায় শিপন হোসেন ও মুফা বিশ্বাসের নামে জিডি করতে যাই। কিন্তু পুলিশ জিডি নিলেও জিডিতে তাদের নাম উল্লেখ করতে দেয়নি। পুলিশ বলেছিলো এখন কারোর নামে জিডি করলে পরে যদি আলমগীর ফিরে আসে?’
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানার ওসি আলমগীর কবির দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ‘ওই সময় তারা আলমডাঙ্গা থানায় একটা সাধারণ ডায়েরি করেছিলো। তাতে কারোর নাম উল্লেখ নেই। তবে এখন যেহেতু তারা অভিযোগ করছেন অবশ্যই আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবো। ঘাতক যে বা যারাই হোক শিগগিরই তাদের খুঁজে গ্রেফতার করা হবে।
এদিকে নিহত আলমগীরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন, একমাত্র বোন চাঁনমনি, চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম ও মানিক হোসেন বলেন, নিখোঁজের পর আমরা অভিযুক্তদের কাছে আলমগীরের সন্ধান জানতে চাইলে বা আলমডাঙ্গা থানায় মামলা করতে চাইলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বা তাদের পরিবারের লোকজনসহ গ্রামের কতিপয় মাতবরেরা বিভিন্নভাবে আমাদেরকে হুমকি দিতো এবং হয়রানি করতো। নিহত আলমগীরের চাচা ইকতার হোসেন ডাক্তার, রতন ও বিপুল হোসেন বলেন, অভিযুক্ত ‘একই গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে শিপন আলীর কাছে যে দামি মোবাইল ফোনটি আছে তা আমার ভাস্তে আলমগীরের, তা গ্রামের অনেকেই জানে এবং একাধিক জায়গায় ফোনটি বিক্রি করতেও গেছে। আবার অনেকেই বলেন, সম্ভবত দু’জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় একই ধরনের মোবাইলও কিনতে পারে। তবে গ্রামের বেশির ভাগ লোকেরই বক্তব্য, আলমগীর হোসেন নিখোঁজ হওয়ার পরদিন স্কুলছাত্রীকে নিয়ে পালানোর সময় শিপন এতো টাকা কোথায় পেল? এসব কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের অনেকেই বলেন, টাকার বা দামি মোবাইলের লোভে অভিযুক্ত শিপনসহ কয়েকজন তাকে হত্যা করে পুকুরের কচুরিপানার নিচে লাশ লুকিয়ে রাখতে পারে।
অভিযুক্ত শিপন আলীর পিতা আব্দুর রশিদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার ছেলের বন্ধু ছিলো আলমগীর ঠিক কথা; কিন্তু সে হত্যাকা-ের মতো এতো বড় কাজ করতে পারে না। আলমগীর নিখোঁজের পরদিন এক স্কুলছাত্রীকে নিয়ে পালানোর সময় তার কাছে এতো টাকা আসলো কোথা থেকে জানতে চাইলে আব্দুর রশিদ বলেন, আমার মেজ ছেলে রিপন হোসেন মালয়েশিয়াতে থাকে, সে যে টাকা পাঠায় সব টাকাই আমার ছোট ছেলে শিপনের কাছেই থাকে। এদিকে, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিপনসহ তার নববধূ ইভাকে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। আরেক অভিযুক্ত একই গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে শিপনের ধর্ম দুলাভাই প্রভাবশালী মুফা বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর কবির বলেন, শুক্রবার সকালে গ্রামবাসী মাছ ধরার সময় পুকুরের কচুরিপানার নিচে গলিত লাশ অর্থাৎ প্রায় কঙ্কাল দেখতে পায়। এ খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে শিপন ও তার স্ত্রী ইভা খাতুন গাঢাকা দেয়। পুলিশ ঘটনার পর থেকে প্রধান অভিযুক্ত শিপনকে আটকের জন্য অভিযান শুরু করে। রাতে খাদিমপুর এলাকা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুইজনকে আটক করে থানায় নেয়। তিনি আরও বলেন, আটক দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। দ্রুতই হত্যার রহস্য উদঘাটন হবে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More