নুডুলস চুরির অভিযোগে যুবককে খুঁটির সাথে বেধে নির্মম নির্যাতন

মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ভিডিও দেখে অভিযুক্ত আলমডাঙ্গার ব্যবসায়ী আমানুল্লাহ আটক

ভিডিও ভাইরাল : মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানো আলমডাঙ্গার ব্যবসায়ী আমানুল্লাহ আটক
স্টাফ রিপোর্টার: পণ্য পরিবহনের গাড়ি থেকে একটি নুডুলসের প্যাকেট আর নারকেল তেল নিয়ে পালাচ্ছিলেন সাদ্দাম হোসেন। ঘটনাটি দেখে তার পিছু নেয় কয়েকজন। সাদ্দামকে ধরে তুলে দেয় ওই পণ্যের মালিক ব্যবসায়ী আমানুল্লাহ’র হাতে। পরে দোকানের সামনে খুঁটির সাথে বাধা হয় কিশোর গড়নের সাদ্দামকে। স্টিলের পাইপ দিয়ে দিয়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করেন ব্যবসায়ী আমানুল্লাহ। দীর্ঘসময় ধরে সাদ্দামের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। ঘটনাটি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা পৌর শহরের হাফিজ মোড়ে ঘটে। পরে ঘটনাস্থল থেকে সাদ্দামকে উদ্ধার করে থানায় নেয় পুলিশ। সাদ্দাম হোসেন (২২) আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার থানাপাড়ার আকমল হোসেনের ছেলে।
এদিকে, সাদ্দামকে বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালানো একটি ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের হাতে হাতে। এরপর নজরে পড়ে পুলিশের। নির্যাতনের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্যাতনকারী শেখ আমানুল্লাহকে গতরাতেই থানায় নিয়েছে পুলিশ। নির্যাতিত সাদ্দাম বা তার পরিবারের কেউ অভিযোগ জানালে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন থানার ওসি সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, নির্যাতনের শিকার যুবক সাদ্দাম হোসেনও একজন অপরাধী। তার বিরুদ্ধে দুইটি মামলা চলমান রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আলমডাঙ্গা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম।
স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার হাফিজ মোড়ে শেখ ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পণ্যের পরিবেশক ব্যবসা করেন শেখ আমানুল্লাহ। বিভিন্ন দোকানের অর্ডারের পণ্য ডেলিভারির জন্য মঙ্গলবার দুপুরে গাড়িতে মালামাল তুলছিলো শেখ ট্রেডার্সের কর্মচারীরা। এসময় ওই গাড়ি থেকে নুডুলস ও নারকেল তেল নিয়ে দৌড় দেয় সাদ্দাম হোসেন। বিষয়টি দেখে স্থানীয় কয়েকজনও তার পিছু নেয়। ধাওয়া করে সাদ্দামকে ধরে শেখ ট্রেডার্সের মালিক আমানুল্লাহ’র নিকট হস্তান্তর করে স্থানীয়রা।
পরে আমানুল্লাহ নিজেই দোকানের সামনের খুঁটির সাথে সাদ্দামের দুই হাত বেধে রাখেন। এরপর স্টিলের পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। এ ঘটনা দেখে সেখানে জড়ো হতে থাকে লোকজন। সাদ্দামকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন আমানুল্লাহ। ব্যাপক জেরার সাথে সাথে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। মধ্যযুগীয় কায়দায় চালানো নির্যাতনের ঘটনাটি অনেকেই দেখেছে, তবে কাউকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি।
তবে, প্রকাশ্যে এ নির্যাতনের চিত্র দেখা দর্শকদের মধ্যে কয়েকজন অবশ্য বলেছেন, খুঁটির সাথে বেধে পাইপ দিয়ে মারপিট দেখে ভেবেছিলাম বড় ধরনের কোনো অপরাধী। কারণ আরও অনেকজনই দাঁড়িয়ে ঘটনাটি দেখছিলো। এজন্যই নির্যাতনকারী ওই ব্যক্তিকে থামানোর জন্য কোনো কিছু বলিনি। পরে জানতে পারি সে সামান্য নুডুলস নিয়ে যাচ্ছিলো। এই অপরাধের কারণে ওইধরণের নির্মম নির্যাতন কখনোই মেনে নেয়া যায় না। নির্যাতনকারী ওই ব্যবসায়ীর শাস্তি হওয়া উচিত বলেও মনে করেন কয়েকজন।
এদিকে, সাদ্দামকে বেধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মম নির্যাতনের একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বর্বরোচিত এ ঘটনার ভিডিও দেখে হতবাক সুশিল সমাজের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্থানীয়রা বলেছেন, অপরাধী যত বড়ই হোক না কেন, তার জন্য আইন আছে। আর মারধর করারও একটা সীমা আছে, প্রকাশ্যে দোকানের খুঁটিতে বেধে নির্মম নির্যাতন করে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমানুল্লাহ’র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছেন তারা।
নির্যাতনকারী শেখ আমানুল্লাহ দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমার প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা ঘটে। এতে আমি অতিষ্ট। কিছুতেই চোর ধরতে পারছিলাম না। আজ কিছু নারিকেল তেল ও নুডুলসের প্যাকেট চুরির সময় সাদ্দামকে হাতেহাতে ধরে স্থানীয়রা আমার নিকট নিয়ে আসে। তবে দোকানের খুঁটিতে বেধে মারধর করা আমার অন্যায় হয়েছে।
আলমডাঙ্গা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খন্দকার মুজিবুল ইসলাম বলেন, সাদ্দামের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আছে। এর আগেও শেখ ট্রেডার্স থেকে বিভিন্ন মালামাল চুরি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আজ (গতকাল) চুরির সময় স্থানীয়রা হাতেনাতে ধরে। পরে আমানুল্লাহ দোকানের খুঁটিতে বেধে সামান্য মারধর করেছে বলে শুনেছি। তবে, এভাবে মারধর করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি অন্যায় হয়েছে তার। মারধর না করে পুলিশে দেয়া উচিত ছিলো।
চুয়াডাঙ্গা মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার বলেন, দোকানের খুঁটিতে বেধে নির্যাতনের ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে এটাইতো বড় অপরাধ। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। অপরাধীকে অবশ্যই আইনের কাছে সোর্পদ করতে হবে। নির্যাতনের শিকার যুবক বা তার পরিবার আমার সাথে যোগাযোগ করলে মানবতা ফাউন্ডেশন থেকে তাকে বিন্যামূল্যে তার সব রকমের সহযোগিতা করা হবে।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে সাদ্দামকে উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়। তবে নির্যানতের বিষয়টি তখন জানা ছিলো না। পরে সংবাদকর্মীদের মাধ্যেমে নির্যাতনের ভিডিও দেখেছি। এভাবে কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না। রাতেই নির্যাতনকারী শেখ আমানুল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনায় সাদ্দাম বা তার পরিবারের লোকজন অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এছাড়া, চুরির ঘটনায়ও এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। তিনি আরও বলেন, সাদ্দামের বিরুদ্ধে আলমডাঙ্গা থানায় একটি চুরি ও একটি ছিনতাই মামলা চলমান। একবার পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলো।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More