পরিবারের সদস্য ছাড়া মনে রাখেনি কেউ : হয়নি সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন

চুয়াডাঙ্গার জয়রামপুর বটতলায় স্মরণকালের ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার ৫ বছর

দর্শনা অফিস:

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুরে স্মরণকালের ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার ৫ বছর পেরোলো। গতকাল অর্থাৎ ২৬ মার্চ বড়বলদিয়া গ্রামের ১৩ জনের মৃত্যুর পাঁচ বছর বা মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো। তবে এবার তাদের স্মরণে হয়নি কোনো দোয়া মাহফিল বা স্মরণসভা। সময়ের সাথে সাথে সকলের মন থেকে মুছে গেছে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার কথা। শুধু মনে রেখেছে আপনজন হারানো পরিবারের সদস্যরা। ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ সকালে স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুরে। বালিভর্তি ট্রাকের ধাক্কায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় আলমসাধু। ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে থাকে কয়েকজন শ্রমিকের মরদেহ। একে একে ১৩ শ্রমিকের মৃত্যু। আহত হয় আরও ১২ জন শ্রমিক। ঘটনাটি শুধু জেলাতেই নয় গোটা দেশেই ছিলো আলোচনায়।

২০১৮ সালে অর্থাৎ ১৩ জনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হলেও তারপর থেকে যেনো সকলের মন থেকে মুছেই গেছে সেই ঘটনা। যে কারণে আর কোন রাজনৈতিক দল, সামাজিক গোষ্টি বা কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিলের আয়োজন টুকুও করা হয়না।

দুর্ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃক্সখলা বাহিনী। অবৈধযান বন্ধে নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কাজ করা সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) পক্ষে সে সময় বলা হয়, কৃষিকাজের জন্য ট্রাক্টর ও পাউয়ারট্রিলার ব্যবহারের শর্ত থাকলেও এগুলো অবৈধভাবে মহাসড়কে ইট, বালু ও মাটি বহন করছে। মাটি বহনের সময় তা রাস্তায় পড়ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই কাদামাটিতে রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি চালক

অদক্ষ হওয়ায় এসব যানের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। প্রয়োজনে তারা অবৈধ এসব যানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবেন। ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষে বলা হয়েছিলো অবৈধ যানবাহনের কারণে জেলায় দুর্ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। এর বিরুদ্ধে শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটদের এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া, চুয়াডাঙ্গা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, ট্রাক মালিক সমিতি ও ইটভাটা মালিক সমিতির সঙ্গে পুলিশের এক যৌথসভায় জেলার সব সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ যান নসিমন, করিমন, আলমসাধুর মতো ভটভটির পাশাপাশি ইটভাটার ট্রাক্টর ও পাওয়ার ট্রলির চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এখন থেকে জেলার কোনো সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলতে পারবে না। ফলে যাত্রীদের সুবিধার্থে বাস মালিক সমিতি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সংখ্যক বাস চলাচলের ব্যবস্থা করবে। ইট সরবরাহের জন্য ইটবাহী ট্রাক্টর ও ট্রলিগুলো রাত আটটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে।

সময়ের সাথে সাথে যেমন দুর্ঘটনার কথা মন থেকে হারিয়ে গেছে তেমনি আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে দুর্ঘটনা রোধের লক্ষ্যে সে সময় নেয়া সিদ্ধান্তগুলো। তার প্রমাণ মেলে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানে। যেমন চলতি বছরেই অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর অধিকাংশই ঘটেছে অবৈধযানের বেপরোয়া চলাচলের কারণে।

২০১৭ সালের ২৬ মার্চ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর বটতলায় বালুভর্তি ট্রাক ও যাত্রীবাহী ভটভটির মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হন। আহত হন নয়জন। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই আটজন নিহত হন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মারা যান তিনজন। দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যান একজন। চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও একজন মারা যান। সে সময় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একদল শ্রমিক নিয়ে একটি ভটভটিতে দর্শনার দিক থেকে চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে যাচ্ছিলো। বিপরীত দিক থেকে আসছিলো বালুভর্তি ট্রাক। জয়রামপুর স্কুলের কাছে ভটভটিকে সজোরে ধাক্কা মারে ট্রাকটি। এতে ভটভটিটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। শ্রমিকদের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।

দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের আব্দার হোসেন (৪৮), বিল্লাল  হোসেন (৪০), আবু বকর সিদ্দিক (৪৩), ইজ্জত আলী (৬০), নজির আহমেদ (৩০), শান্ত আহমেদ (২২), হাফিজুর রহমান (৪০), শফিকুল ইসলাম (৩৫), বিল্লাল মোল্লা (৩৫), রফিকুল ইসলাম (৩৫), জজ হোসেন (২৮), লাল  মোহাম্মদ (৩৫) ও শাহীন হোসেন (৩৫)। আহত ব্যক্তিরা হলেন একই গ্রামের কালু মিয়া (৩০), আলতাফ হোসেন (৫০), জিয়াউর রহমান (৪০), সোহরাব হোসেন (৪৫), মজিবর রহমান (২২), শরীফ হোসেন (৪২), আতিকুল ইসলাম (২৫), শফিকুল ইসলাম (২৮) ও নুর ইসলাম (৪৫)। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হতাহত হওয়া ব্যক্তিরা নির্মাণশ্রমিক ছিলেন। তারা ভটভটির আরোহী ছিলেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More