প্রাইভেটকার ধাওয়া করে আলমডাঙ্গায় আড়াই কেজি সোনা উদ্ধার : আটক ৩

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় প্রাইভেট কার তল্লাশি করে ২ কেজি ৫৮৫ গ্রাম ওজনের সোনার অলংকার উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় ওই প্রাইভেট কারে থাকা তিনজনকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রাইভেট কারটিও জব্দ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া মহাসড়কে বন্ডবিল রেলগেট এলাকায় সদর ও আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে এসব মালামাল জব্দ ও তাদের আটক করেছে। আটক ব্যক্তিরা হলেন জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার শ্যামপুরের মো. বাপ্পি হোসেন (৩০), চুয়াডাঙ্গা শহরের বনানীপাড়ার স¤্রাট হোসেন (২১) এবং মাদারীপুর সদর উপজেলার জালালপুর গ্রামের সুমন হাওলাদার (৩৫)। তাদের মধ্যে বাপ্পি প্রাইভেট কারটির মালিক এবং ঘটনার সময় তিনিই সেটি চালাচ্ছিলেন। আটককৃতরা সবাই আন্তঃজেলা সোনা চোরাচালান চক্রের সক্রিয় সদস্য বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভারত সীমান্তবর্তী দর্শনা থেকে সোনার একটি বড় ধরণের চালান প্রাইভেট কারে ঢাকার উদ্যেশে রওনা হচ্ছে। গোপনসূত্রে এমন সংবাদ জানতে পেরে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ ফখরুল আলম খানের নেতৃত্বে পুলিশ চুয়াডাঙ্গা শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থান নেয়। পুলিশের একটি দল (ঢাকা মেট্রো- গ ১৭-৮৩৩২) এলিয়ন প্রাইভেটকারের পিছু নেয়। কিন্তু পুলিশ প্রাইভেটকারটিকে চুয়াডাঙ্গায় থামাতে পারেনি। প্রাইভেটকারটি চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া সড়কে দ্রুত গতিতে ছুটে যায়। খবর দেয়া হয় আলমডাঙ্গার ওসি আলমগীর কবীরকে। তিনি খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নূরকে সাথে করে পুলিশের একটি টিম নিয়ে চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া সড়কের বন্ডবিল এলাকায় পৌর সীমানা গেটের সামনে অবস্থান নেন। বেলা ৩টার দিকে প্রাইভেট কারটি সেখানে পৌঁছুলে সেটি থামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় চালকের সিটের পেছনে বাঁশপাতা রঙের মোটা কাগজে ক্রসটেপ দিয়ে মোড়ানো ৬টি বান্ডিলের ভেতর থেকে সোনার বালা, নেকলেস, আংটি, কানের দুলসহ বিভিন্ন ধরণের সোনার গয়না উদ্ধার করা হয়। একই সাথে আটক করা হয় প্রাইভেটকারের চালকসহ ৩ যুবকে। জব্দ করা হয় সোনা চোরাচালানে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি। পরে, আলমডাঙ্গা থানায় নিয়ে উদ্ধারকৃত গয়নাগুলো ওজন করা হয়। ২২ ক্যারেট ২ কেজি ৫৮৫ গ্রাম সোনা দিয়ে প্রস্তুত ওই গয়নাগুলোর আনুমানিক মূল্য এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন উপস্থিত স্বর্ণব্যবসায়ী। আটক ৩ যুবক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু তথ্য দিয়েছে। প্রাইভেটকারের ড্রাইভার বাপ্পি জানিয়েছেন, ভারতের কোলকাতার বিজন হালদারের স্বর্ণালঙ্কার দামুড়হুদার পুড়োপাড়া থেকে তিনি ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। ঢাকার কল্যাণপুর থেকে ভবেশ নামক এক ব্যক্তি তা গ্রহণ করবেন এমন কথাবার্তা ছিলো। ইতোপূর্বে তিনি ৪টি স্বর্ণালঙ্কার পাচার করেছেন বলেও স্বীকার করেন। এ কাজের জন্য বিজন হালদার তাকে এলিয়ন প্রাইভেট কার কিনে দিয়েছেন। প্রতি মাসে ৬০ হাজার তাকা বেতন দেন। এছাড়া প্রতিট্রিপে অতিরিক্ত ৮ হাজার টাকা করে দেন বলেও ড্রাইভার বাপ্পি জানিয়েছেন।
তবে আটক স¤্রাট ও সুমন হাওলাদার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেননি। সন্ধ্যায় আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ সোনা চোরাচালানের নেপথ্যের গডফাদার কারা তাদের পরিচয় উন্মোচন করে ব্যবস্থা নিতে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ এখন উদগ্রীব বলে জানা গেছে। ভবেশ ও বিজন হালদারের সঠিক তথ্য তালাশ করছে পুলিশ।
সদর থানার ওসি আবু জিহাদ খান বলেন, দর্শনা থেকে প্রাইভেটকারে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে মূল্যবান কিছু পাচার করা হচ্ছে এমন খবরে আলমডাঙ্গা ও সদর থানা-পুলিশ যৌথ অভিযানে নামে। তারা আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার বন্ডবিল রেলগেট এলাকায় একটি প্রাইভেট কারকে থামায়। সেটিতে তল্লাশি চালিয়ে ভেতরে বিশেষ কায়দায় কাগজে স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় সোনার অলংকারের ছয়টি পোঁটলা উদ্ধার করে। অলংকারের মধ্যে ছিলো সোনার বালা, নেকলেস, আংটি ও কানের দুল। ঘটনাস্থলেই সোনার অলংকারগুলো ওজন করা হয়।
আলমডাঙ্গা থানার ওসি আলমগীর কবির বলেন, অভিযানের খবরে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনি আলম নূর ঘটনাস্থলে আসেন। স্বর্ণালংকার উদ্ধারের পর গাড়ির চালকসহ তিনজনের কেউই বৈধ কাগজ দেখাতে পারেননি। ওসি বলেন, আটক ব্যক্তিরা আন্তঃজেলা সোনার অলংকার পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য। আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক বলেন, আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাপ্পি হোসেন সোনার অলংকারের এই চালানের বাহক বলে স্বীকার করেছেন। বাপ্পির ভাষ্য অনুযায়ী, সুমন হাওলাদার তার বন্ধু এবং স¤্রাট ভাগনে। বাপ্পি জানিয়েছেন, আন্তঃদেশীয় সোনা পাচারকারী দলের হয়ে তিনি কাজ করে থাকেন। এ জন্য প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকা বেতন পান। এছাড়া প্রতিটি চালান বহনের জন্য মজুরি হিসেবে ৮ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। চলতি মাসে এর আগে চারটি চালান চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে ঢাকায় নিয়ে গেছেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More