মনোনয়ন পাচ্ছেন না চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ ১১ জেলা পরিষদের প্রশাসক

জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া ও অনিয়মের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: জেলা পরিষদের অন্তত চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ ১১ প্রশাসক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন না। তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালে নির্বাচিত জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে নির্বাচন না করে গত এপ্রিলে চেয়ারম্যান পদগুলোতে সরকার প্রশাসক বসায়। সব জেলায় বিদায়ী চেয়ারম্যানদেরই আবার প্রশাসক পদে বসানো হয়। তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন, যারা আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে দলের আনুষ্ঠানিক প্রার্থীদের হারিয়ে দিয়েছিলেন। তিন পার্বত্য জেলা-রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান ছাড়া ৬১ জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৭ অক্টোবর। মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এর আগেই আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। এ বৈঠকের দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। তবে সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে এই বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতি রয়েছে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা জানিয়েছেন, ৬১টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের জন্য দলের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকাটি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে। মূলত এই তালিকা থেকেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করা হবে। ওই তালিকায় জেলা পরিষদের গত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন, তাদের নাম রাখা হয়নি বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে যে কোনো নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন না দেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দলের কোনো সাংগঠনিক কাঠামোতে না রাখারও সিদ্ধান্ত আছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হয়নি। বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলের পদ-পদবিও পাচ্ছেন না। এ কারণে জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নাম প্রস্তাবিত তালিকায় রাখা হয়নি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও দলের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের অন্যতম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ জানিয়েছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত সবার জন্যই এক রকম। সুতরাং পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনেও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল। এই দলে বিদ্রোহের কোনো সুযোগ নেই।
এ জন্যই দলের আটটি বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সদস্যরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের জন্য সম্ভাব্য তালিকায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের নাম রাখেননি বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের দায়িত্বে থাকা দলের সংশ্লিষ্ট সভাপতিম-লীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা জেলা পর্যায় থেকে নামের তালিকা সংগ্রহ করে প্রতিটি জেলার জন্য কমপক্ষে দুজন নেতার নাম জমা দিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গার প্রশাসক ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা শেখ শামসুল আবেদিন খোকনের নামও নেই সম্ভাব্য তালিকায়। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে তিনি দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান মঞ্জুর বিরুদ্ধে জয় পান।
মেহেরপুরের প্রশাসক ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রসূলের নাম প্রস্তাবিত তালিকায় নেই। তিনি গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলীকে পরাজিত করেন।
সাতক্ষীরার প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামও বাদ পড়ছেন। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তালিকায় আসেনি তার নাম। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি মনসুর আহমেদকে পরাজিত করেন তিনি।
নড়াইল জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানদের মধ্যে সর্বশেষ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাসের নাম প্রস্তাবিত তালিকায় নেই। তিনি গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ আইয়ুব আলীকে পরাজিত করেন।
পিরোজপুরের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজের নাম প্রস্তাবিত ওই তালিকায় নেই। তিনি গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থী ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ শাহ আলমকে পরাজিত করেন।
জামালপুরের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ চৌধুরীর নামও নেই সম্ভাব্য তালিকায়। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট এইচ আর জাহিদ আনোয়ারের বিরুদ্ধে জয় পান।
শেরপুরের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ন কবির রুমানও বাদ পড়ছেন। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তালিকায় আসেনি তার নাম। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন পালকে পরাজিত করেন তিনি।
নীলফামারীর প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীনের নাম প্রস্তাবিত তালিকায় নেই। তিনি গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজুল হককে পরাজিত করেন।
রাজশাহীর প্রশাসক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকারের নামও নেই সম্ভাব্য তালিকায়। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মাহবুব জামান ভুলুর বিরুদ্ধে জয় পান।
পটুয়াখালীর প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খলিলুর রহমান মোহনও বাদ পড়ছেন। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগ নেই। কিন্তু স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টির পাশাপাশি অনিয়মের অভিযোগ থাকায় তার নাম রাখা হয়নি প্রস্তাবিত তালিকায়।
রংপুরের প্রশাসক ও রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগ নেই। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব রয়েছে। এ জন্য তার নাম সম্ভাব্য তালিকায় রাখা হয়নি বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয় পাননি, এমন নেতাদের নামও প্রস্তাবিত তালিকায় রাখা হয়নি। তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রকিবুল হাসান পিয়াল, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এমএ রহিম শহীদ (মৌলভীবাজারে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন), বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ড. এম হারুন অর রশীদ (ঝিনাইদহে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন), খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতা অজয় সরকার, পঞ্চগড় জেলা কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আপেল মাহমুদ, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক কামিল হোসেন এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বপন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More