মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের বটির কোপে বাবা নিহত

মেহেরপুর গাংনীর হাড়ভাঙ্গা গ্রামে শোক : অভিযুক্ত ছেলে সুজন আটক

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজীপুর ইউনিয়নের হাড়াভাঙ্গা গ্রামে প্রকাশ্যে দিবালোকে ছেলের হাতে আফেল উদ্দীন (৬৫) নামের এক কৃষক খুন হয়েছে। এ খুনের সাথে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে গাংনী থানা পুলিশের একটিদল নিহত আফেল উদ্দীনের ছেলে সুজন আলীকে (৩৩) আটক করেছে। নিহত আফেল হাড়াভাঙ্গা গ্রামের পুরাতন পাড়ার মৃত ইয়াদ আলী মন্ডলের ছেলে। গ্রেফতারকৃত সুজন নিহত আফেল আলীর ছোট ছেলে। গতকাল শনিবার বিকেলে হাড়াভাঙ্গা গ্রামের মাঠের একটি ভূট্টাক্ষেত থেকে গাংনী থানা পুলিশের একটিদল সুজনকে গ্রেফতার করে। এর আগে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজ বাড়িতে হত্যার শিকার হন আফেল উদ্দীন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

জানা গেছে, সকালে নিজ বাড়ির টিউবওয়েলের পাশে বাড়ির কাজ করছিলেন বৃদ্ধ আফেল উদ্দীন। এ সময় আকস্মিকভাবে তরকারি কাটার বটি দিয়ে পেছন থেকে বাবার ঘাড়ে কোপ দেয় সুজন। এতে ঘটনাস্থলেই আফেল উদ্দীন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পিতার রক্তাত্ব মরদেহ ফেলে সুজন বাড়ির বাইরে চলে যায়। পরে পুলিশ তাকে আটক করে। স্থানীয়রা জানায়, সুজনদের বাড়ির চারপাশ প্রাচীরঘেরা। বাড়ির গেট দিয়ে বাইরে বের হওয়ার পর প্রতিবেশী এক নারী তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন। তবে সুজন কোন কথাবার্তা না বলে দৌঁড়ে মাঠের দিকে চলে যায়। তখন ওই নারীর সন্দেহ হলে তিনি বাড়ির ভেতরে ঢুকে সুজনের মাকে ডাকতে থাকেন। এক পর্যায়ে তার নজরে পড়ে টিউবওয়েল পাড়ে রক্তাত্ব অবস্থায় বৃদ্ধ আফেল উদ্দীন পড়ে আছে। জানা গেছে, আফেল উদ্দীনের দুই ছেলের মধ্যে সুজন ছোট। বড় ছেলে কুষ্টিয়ায় একটি কোম্পানীতে কর্মরত। বাড়িতে বৃদ্ধ মা বাবা ও সুজন বসবাস করে। সুজন ছিলো মেধাবী ছাত্র। এসএসসিতে লেখাপড়া করার সময় সে মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ফেলে। এতে সুজনের জীবন পাল্টে যাওয়ার সাথে সাথে পরিবারে নেমে আসে অন্ধকারের ছায়া। সারাক্ষণ মায়ের কাছাকাছি থাকতো সুজন। মাকে কেউ বকাবকি করলে তাকে তেড়ে মারতে যেত। মা বাবার মধ্যে কোন ঝগড়া কিংবা বিবাদের অংশ ধরে প্রতিশোধ হিসেবে সুজন তার পিতাকে কোপ দিতে পারে বলে ধারণা করছেন আশেপাশের মানুষ। স্থানীয়রা আরও জানায়, সুজনের বিয়ে হলেও মানসিক রোগীর সাথে সংসার করেনি তার স্ত্রী। তখন থেকে সে মানসিকভাবে আরও ভারসম্যহীন হয়ে পড়ে। এলাকার সকলেই তাকে পাগল হিসেবেই চেনে। তার কাজকর্ম ও চলাফেরায় পাগলামি ছিলো নানাভাবে। সারাক্ষণ বিড়ি-সিগারেট পান করতো। তবে তার মায়ের দিকে কেউ আঙ্গুল তুললেই তেড়ে মারতে যেত। স্থানীয়রা আরও জানান, ঘটনার সময় সুজন আর তার বাবা ছাড়া বাড়িতে আর কেউ ছিলেন না। তাছাড়া বাড়ির চারপাশ প্রাচীর দেয়ায় বাইরে থেকে ঘটনা কেউ আচ করতে পারেনি। তবে সুজন তার পিতাকে কোপ দিতে পারে এটা বিশ^াস করেন প্রতিবেশীরা। সুজনের মাও একই সন্দেহ করছেন। তবে কি কারণে পিতার প্রতি তার রাগ হয়েছিল তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি সুজনের মা। গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নিহত আফেল উদ্দীনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলেই মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ বিষয়ে হত্যা মামলা দায়ের এবং অভিযুক্ত সুজনকে আটকের চেষ্টা করছে পুলিশ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More