মেহেরপুরের মুজিবনগরে ঐতিহাসিক স্বাধীনতা সড়ক পরিদর্শনকালে এলজিআরডি মন্ত্রী

স্বাধীনতা সড়ক হলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে

শেখ সফি: স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, উন্নয়নের পূর্বশর্ত যোগাযোগ। এজন্যই মুজিববর্ষে স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে মুজিবনগর-নদীয়া হয়ে কোলকাতা পর্যন্ত সড়কটি ‘স্বাধীনতা সড়ক’ নামে চালু হতে যাচ্ছে। মুজিবনগর সরকার, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ করতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। ইমিগ্রেশন, কাস্টমস চেকপোস্ট, সড়ক নির্মাণসহ সব কাজ সম্পূর্ণ করা হলে ‘স্বাধীনতা সড়কটি’ বাস্তবে রূপ নেবে। তিনি বলেন, ইতিহাসের সাক্ষী মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আমবাগান ঘেরা গ্রাম এখন মুজিবনগর। এখানেই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন। জাতীয় চার নেতাসহ সড়ক পথে বিদেশি সংবাদকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাসহ ভারতের কোলকাতা থেকে নদীয়া হয়ে এ সড়কে মেহেরপুরের মুজিবনগর আসেন। এখানেই গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন মুজিবনগর কমপ্লেক্স। বাংলাদেশের মানচিত্র আর বিভিন্ন ভাস্কর্যের মাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মুজিবনগরে স্বাধীনতা সড়ক পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে স্বাধীনতা সড়কটি আগামী মার্চে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এর মধ্যদিয়ে মুজিবনগরের সাথে কোলকাতা সড়কে যাতায়ত শুরু হবে। রাস্তাটি মানসম্মতভাবেই উন্নয়ন করতে অচীরেই কাজ শুরু হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরেই তারা স্বাধীনতার অনেক স্মৃতি বিজড়িত স্থানকেই তারা সমর্থন করেনি। তেমনিভাবে এটাও অবহেলিত ছিলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যেমনিভাবে সম্মান করা হচ্ছে; তেমনিভাবে যুদ্ধকালীন স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোকেও সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের পূর্বশর্ত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, রাস্তাটি হলে এখান দিয়ে দু’দেশের মানুষ যাতায়ত করতে পারবেন। রাস্তাটি হলে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক বিষয়ের উন্নয়ন হবে অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণহবে। তিনি আরও বলেন, এ সড়কের ফলে দুই দেশের সম্পর্ক যেমন মজবুত হবে তেমনি এলাকার উন্নয়ন হবে। মুজিবনগর পর্যটন কেন্দ্রও সমৃদ্ধ হবে। মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে ভারতের নদীয়ার কৃষ্ণনগর পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের মাত্র ৩০০ মিটার ইটের সোলিং করা। এটুকু পাকা করে সড়কটি প্রশস্ত করলেই স্বাধীনতা সড়কটি উন্মুক্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। প্রস্তাবিত স্বাধীনতা সড়ক নির্মাণে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
পরিদর্শনকালে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রধামন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে মুজিবনগরে এক হাজার কোটি টাকার কাজ হবে তার নকশা প্রায় চূড়ান্ত। খুব দ্রুত এটি একনেকে তোলা হবে। আশা করা যায় আগামী বছরের প্রথম দিকে কাজ শুরু হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে মুজিবনগর থেকে মুক্তিযুদ্ধের পুরো ইতিহাস দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরা যাবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন হেলিকপ্টারযোগে মুজিবনগর হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন। মন্ত্রীরা মুজিবনগর পর্যটন মোটেল চত্বরে গার্ড অব অনার গ্রহণ শেষে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। এরপর মুজিবনগরে স্বাধীনতা সড়ক পরিদর্শন করেন। পরে মুজিবনগর পর্যটন মোটেলে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খানের সভাপতিত্বে ‘স্বাধীনতা সড়ক’ (মুজিবনগর-কোলকাতা) বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি পর্যালোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান, মেহেরপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ গোলাম রসুল, জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান, পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, যুগ্মসম্পাদক অ্যাড, ইব্রাহিম শাহিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আয়ূব হোসেন, পৌর মেয়র মাহাফুজুর রহমান রিটন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভপিতি জিয়াউদ্দীন বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আমাম হোসেন মিলু, মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন সরকার, মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার (ওসি) মো. আব্দুল হাশেমসহ সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এর আগে ঢাকা থেকে মুজিবনগর পৌঁছে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন এলজিআরডি মন্ত্রী ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। পরিদর্শন শেষে মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে জেলা প্রশাসন আয়োজিত স্বাধীনতা সড়ক (মুজিবনগর-কোলকাতা) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More